সর্বোচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন, তার মধ্যেই অসমের শিক্ষককে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিল পুলিশ

সেই মামলা চলাকালীন অসমের মরিগাঁও জেলার এক প্রাক্তন সরকারি স্কুলশিক্ষক খায়রুল ইসলামকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে

Must read

প্রতিবেদন: দেশের শীর্ষ আদালতে চলছে মামলা। তার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সেই মামলা চলাকালীন অসমের মরিগাঁও জেলার এক প্রাক্তন সরকারি স্কুলশিক্ষক খায়রুল ইসলামকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক রং দেখে পুলিশ এই কাজ করেছে বলে অভিযোগ। ৫১ বছরের ওই শিক্ষক নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলায় জড়িত এবং তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত ‘বিদেশি’ রায়ের পুনর্বিবেচনা পিটিশন বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই তাঁকে ঘাড়ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। আপাতত নো-ম্যানস ল্যান্ডে দুর্বিষহ অবস্থায় থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

আরও পড়ুন-বীর সেনাদের অপমান, তীব্র প্রতিবাদ তৃণমূলের

খায়রুলের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁরা ২৭ মে সকাল ১১টা নাগাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রথম এই ঘটনা জানতে পারেন। ভিডিওতে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক দাবি করেন যে খায়রুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার বড়াইবাড়ি সীমান্তের কাছে রয়েছেন। খায়রুলকে চিনতে পেরেছেন তাঁর স্ত্রী রীতা খানম ও কন্যা আফরিন। ভিডিওতে দেখা যায়, খায়রুল ইসলাম নিজেকে মরিগাঁও জেলার খান্দা পুখুরি গ্রামের একজন প্রাক্তন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। অসমে ওই শিক্ষকের আইনজীবী অভিজিৎ রায় জানান, ২০১৬ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ইসলামকে বিদেশি ঘোষণা করলেও এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আপিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে, অর্থাৎ আইনত এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি সুপ্রিম কোর্ট। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। মত পরিবার ও আইনজীবীর। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে বিএসএফ। তারা বলেছে, ২৭ মে ভোরে অসমের দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর সীমান্তে বাংলাদেশের দিক থেকে আসা ‘বাংলাদেশি নাগরিকদের একটি বড় দল’ ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছিল— এমন পরিস্থিতি প্রতিহত করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সতর্ক বিএসএফ কর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সেই দলকে চ্যালেঞ্জ জানায়, যার ফলে তারা ফিরে যায়। যদিও এই বিবৃতিতে সরাসরি খায়রুল ইসলামের নাম বা অবস্থানের প্রসঙ্গ নেই, তবে তাঁর পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষককে ২৩ মে পুলিশ তাঁর নিজের বাড়ি থেকে আটক করে এবং তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মাটিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে, যা তথাকথিত ‍‘অবৈধ বিদেশিদের’ আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে ২৭ মে সকালবেলায় হাতবাঁধা অবস্থায় একটি বাসে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়, যা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে যে তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-এতদিন পরে শাহ কেন ক্ষতিগ্রস্ত পুঞ্চে? বিজেপির নাটকের তীব্র সমালোচনা ডেরেকের

ঘটনার নিন্দায় এইউডিএফ-এর এক প্রতিনিধিদল অসমের রাজ্যপাল লক্ষ্মণপ্রসাদ আচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‍‘পুশব্যাকের মাধ্যমে অমানবিক আচরণ’ বন্ধের দাবি জানায়। মানকাচরের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকা থেকে প্রায় ১৪ জনকে সাম্প্রদায়িক রং দেখে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে রাখা হয়েছে কারণ বাংলাদেশ বাহিনী তাদের গ্রহণ করছে না এবং বিএসএফও তাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না। এটা পুরোপুরি অমানবিক। খায়রুল ইসলাম তাঁদের মধ্যে একজন, যাঁর মামলা এখনও বিচারাধীন। সাব-জুডিস মামলার মধ্যে কাউকে বলপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। একই কায়দায় বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে আরও অনেক ব্যক্তিকে পুলিশ তুলে নিচ্ছে এবং এই ঘটনাগুলি একটি ‍‘ভয়ের রাজনীতি’ প্রতিষ্ঠার অংশ। এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে অসমে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলাগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে। এধরনের ‘পুশব্যাক’-এর ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও ভারতের নিজস্ব সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞেরা। সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি অসমে নাগরিকত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত রাজনীতির এক জটিল ও গভীর সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে।

Latest article