কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি অবশেষে মহামান্য আদালতের কাছে হলফনামা দিয়ে জানাল যে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central forces) বাংলায় আসছে। মুখ পুড়ল বিরোধীদের। বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধীরা বলে আসছিল যে, কেন অত কম সংখ্যক পুলিশ দিয়ে ভোট করানো হবে অথবা কেন অত কম সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হবে এবং তার পিছনে সব বিরোধীরা নাকি কিছু অঘটন ঘটার আশঙ্কা করছে। এখন আবার বলা শুরু হয়েছে যে এত দেরি করে কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হল এবং অনেক আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি টহল দিত তাহলে বাংলায় কোনও হানাহানি হত না। আসলে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও বিরোধীদের কাছে আতঙ্ক, আবার না এলেও আতঙ্ক।
মূল বিষয়টা হল, হারার ভয় থেকে আতঙ্ক অনুভব করছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর (Central forces) সঙ্গে থাকছে ৭৫০০০ বেঙ্গল পুলিশ এবং ১৫ হাজার কলকাতা পুলিশ। এখন বলা হচ্ছে, বেঙ্গল পুলিশ দিয়ে ভোট করা কি প্রহসন নয়? উত্তরে বলা যায় যে, এই যে রাতে বা গভীর রাতে আপনি বিভিন্ন কাজে বার হচ্ছেন বা আপনার কন্যাসন্তান অফিস-আদালতে কাজ করে রাতে বাড়িতে ফিরছেন সেটা কিন্তু এই বাংলার বিশ্বস্ত পুলিশদের জন্য। এখনও আপনার সব থেকে বড় প্রহরী যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। এবং এই পুলিশকে নিয়ে এত নিন্দা-মন্দ করাটার পিছনে কারণ হল এই পুলিশ সঠিক এবং স্বচ্ছভাবে বাংলার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে চলেছে এবং ভোটের সময়ও তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
একটি প্রশ্ন যদি আমি বিরোধীদের রাখি তাহলে তার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু তারা দিতে পারবে না আমি নিশ্চিত। সেটা হল, যদি এক সপ্তাহ আগে থেকে পুলিশরা বলে দেন যে একদিন মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য আমরা ধর্মঘট করব অর্থাৎ আমরা কোনও কাজ করব না। তাহলে আপনি এবং আপনার কন্যাসন্তানরা বিভিন্নভাবে বিপদের মুখে পড়বেন, সারা রাজ্যে ট্রাফিক জ্যাম হবে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ ওই ৩০ মিনিটের জন্য প্রায় ৩০০ বছর পিছিয়ে যাবে আবার। তাই বিরোধীদের বলছি, পুলিশকে দোষ দেওয়ার আগে, পুলিশকে বদনাম দেওয়ার আগে নিজের নিরাপত্তা যাঁরা দিচ্ছেন তাঁদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন করুন।
আরও পড়ুন- আদিবাসী যুবকের মুখে প্রস্রাব, গ্রেফতার অভিযুক্ত
এই যে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ একত্রে টহলদারি থেকে ভোটের শান্তি শৃঙ্খলা সামলাবে আর এটাই সত্যি সত্যি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদের। কারণ বিরোধীদের মধ্যে রামধনু জোট হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু জায়গায় এবং আমরা বিভিন্ন দেয়াল লিখন থেকে সেটার প্রমাণ পেয়েছি। এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখ থেকে তার কিছুটা আভাস পেয়েছি যে তারা ভিতরে ভিতরে জোট করবে মা মাটি মানুষকে হারানোর জন্য। আসলে এই রামধনু জোটের তখন মারাত্মক বিপদ হবে কারণ যেটা আমরা ভাঙড়ে দেখেছি, মুহূর্তের মধ্যে ৮ হাজার লোকের সমাবেশ হয়ে গেল এবং সেখানে গুটিকয়েক পুলিশ কর্মী ছিলেন যাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমরা নিশ্চিত জানি যে ভাঙড়ে যারা সবাই একজোট হয়ে তৃণমূলের সমর্থকদের নিষ্ঠুরভাবে মারধর করেছিল তারা কিন্তু সব দলের লোক, এককথায় এই রামধনু জোট। এখানে বিরোধীদের বলতে শুনেছি যে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ভাঙ্গড়ে প্রাণহানি হল! পুলিশ ঠিক সংখ্যা অনুযায়ী মোতায়েন ছিল নির্দিষ্ট জায়গায়, যেখানে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে ইট, বোমা, গুলি ইত্যাদি এত বেশি চালিয়েছে যে সেখানে আক্রমণাত্মক না হয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করেছিল এবং পুলিশ যদি লাঠি চালাত, শান্তিরক্ষার জন্য যদি গুলি চালাত তাহলে আবার ওই বিরোধীরা একইভাবে বলত, রাজ্যের পুলিশ স্বৈরাচারী ও নিষ্ঠুর। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি ১৫ দিন আগে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে টহল দিত তবুও বিরোধীরা গোপনে অতর্কিত আক্রমণ করত শাসকদলের হয়ে যারা ভোটে দাঁড়িয়েছে তাদের উপর।
বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় যে কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central forces) থেকেও নির্বাচনের সময় বাংলার শান্তি বজায় থাকেনি। ২০১৩-২০১৮ ও ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করা হয়েছিল এবং তার অভিজ্ঞতা বাংলার প্রত্যেকটা মানুষ জানে। ২০১৮ সালে সর্বাধিক ৪৯ জন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। ২০২১ সালে করোনা কালে বেশকিছু দফায় ভোট করেও কোচবিহারের শীতলকুচিতে যে ঘটনা ঘটেছিল সেটা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল যে কেন্দ্রীয় বাহিনী অযোগ্যতার আর এক নাম। রাজ্য পুলিশ হলে এমন নিন্দনীয় ঘৃণ্য ঘটনা ঘটত না।
তাহলে বিগত বছরের বিষাদাচ্ছন্ন অভিজ্ঞতা এটাই প্রমাণ করে যে রাজ্য পুলিশ অনেক বেশি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটের দিন শান্তি বজায় রাখার ক্ষমতা রাখে। বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীতেও সন্তুষ্ট নয় আর রাজ্য পুলিশে তো একেবারেই নয়। আসল কারণটা হল পরপর গোহারার ভয় তাদেরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে এবং দিনরাত শয়নে স্বপনে সবসময় তারা চিন্তা করছে কীভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারকে নানা ভাবে নাস্তানাবুদ করা যায়। পরিশেষে বলা যায় যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল এবং আসবে। আর ঠিক একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দু’হাত ভরে মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশীর্বাদ করবেন। কারণ কোন বাহিনী আছে বা নেই, ভোটকেন্দ্রে সেটা সাধারণ মানুষ মনে রাখেন না। তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন, জোড়া ফুলে ছাপ দেবেন আর বাড়ি ফিরে আসবেন উন্নয়নের স্বপ্ন চোখে নিয়ে।