বিদেশ বোস: দল ১-২ গোলে পিছিয়ে। এই পরিস্থিতিতে পেনাল্টি পেলে যে কোনও দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যেতে বাধ্য। তার উপরে পেনাল্টি নেবে হ্যারি কেন। যে এই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে ইতি মধ্যেই একটি গোল করেছে। পেনাল্টি নেওয়ার ব্যাপারে রীতিমতো সুনাম আছে কেনের। কিন্তু ইংল্যান্ডের সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে কেনের নেওয়া শট বারের অনেকটা উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল! আর এই পেনাল্টি মিসটাই ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিল বিশ্বকাপ থেকে। সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
অথচ গোটা ম্যাচে দাপিয়ে খেলল ইংরেজ ফুটবলাররা। প্রচুর সুযোগ তৈরিও করল। কিন্তু গোল এলো না। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে শেষ আটে তুলেছিল এমবাপে। ওর মতো উইথ দ্য বল গতি এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের আর কারো নেই। একবার ছিটকে বেরোলে নাগাল পাওয়া কার্যত অসম্ভব। তবে এর জন্য এমবাপের কিছুটা ফাঁকা জমির প্রয়োজন হয়। সেই জায়গাটাই এদিন ইংল্যান্ডের ডিফেন্স ওকে দিচ্ছিল না।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
দুটো দলই এদিন শুরু করেছিল ঢিমে তালে। একে অপরকে যাচাই করে নিতে চাইছিল। তবে ১৮ মিনিটে আরেলিয়ান চৌমেনির গোলটা এক কথায় দুর্দান্ত। গ্রিজম্যানের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের বেশ কিছুটা দূর থেকে ডান পায়ের ইনসুইংয়ে বল জালে জড়িয়ে দেয় ফরাসি মিডফিল্ডার। বল এতটাই সুইং করেছিল যে, ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পায়নি ইংল্যান্ডের গোলকিপার জর্ডন পিকফোর্ড।
পিছিয়ে পড়ে টনক নড়ে ইংল্যান্ডের। দুই প্রান্ত দিয়ে ডানা মেলতে শুরু করে ফোডেন ও সাকা। বিশেষ করে, সাকা বল ধরলেই ফরাসি ডিফেন্সে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছিল। ২২ মিনিটেই গোল শোধ করে দিতে পারত ইংল্যান্ড। কিন্তু ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিসকে পরাস্ত করতে পারেনি হ্যারি কেন। ২৯ মিনিটে ফের কেনের জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেয় লরিস।
আরও পড়ুন-ডায়মন্ড হারবার এমপি কাপের উদ্বোধন, রাজনীতি নয়, এখন শুধু ফুটবল, মঞ্চ মাতালেন হানি সিং
অন্যদিকে, শুরুতেই গোল পেয়ে কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলছিল ফ্রান্স। এমবাপেদের দেখে মনে হচ্ছিল প্রতি আক্রমণে বাজিমাত করতে চাইছে। কিন্তু ওকে বা ডেম্বেলেকে ফাঁকা জায়গা দিচ্ছিলো না ইংরেজরা। তার উপর গ্রিজম্যান নিজের সহজাত খেলাটা খেলতে পারছিল না। তাই ফ্রান্সের আক্রমণ সেভাবে দানা বাঁধছিল না।
আরও পড়ুন-ডায়মন্ড হারবার এমপি কাপের উদ্বোধন, রাজনীতি নয়, এখন শুধু ফুটবল, মঞ্চ মাতালেন হানি সিং
বিরতির পর মরিয়া হয়ে গোলের জন্য ঝাঁপিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। ৫৪ মিনিটেই পেনাল্টি আদায় করে নেয় সাকা। পেনাল্টি থেকে ১-১ করে দেয় কেন। লরিস ও কেন দু’জনেই ক্লাব ফুটবলে টটেনহ্যামের হয়ে খেলে। কিন্তু কেনের নেওয়া পেনাল্টির হদিসই পায়নি লরিস। ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর ফ্রান্সকে আরও চেপে ধরেছিল ইংল্যান্ড। ৬০ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে নেওয়া মাগুইয়ের হেড পোস্টের এক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে ৭৭ মিনিটে জিরুর গোলে ফের এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। গ্রিজম্যানের ক্রস থেকে জোরালো হেডে বল জলে জড়িয়ে দেয় জিরু। এর ঠিক দু’মিনিট আগেই জিরুর হেড অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিকফোর্ড। কিন্তু এবার আর পারেনি।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই কেনের পেনাল্টি মিস। বল তো নয়, কাপ জয়ের স্বপ্নটাই যেন বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক! সেই কবে, ১৯৬৬ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেই শেষ। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে হ্যারি কেন বলেছিল, আমরা শুধু কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে আসিনি। আমাদের আসল লক্ষ্য কাপ জয়। কিন্তু আসল সময়েই কাজের কাজটা করতে ব্যর্থ হল কেন।