কেন বারবার জোড়া ফুলের জয়

এখানে এর অনুপাত ছিল ৪১.৯ শতাংশ যা ২০১৯-২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৯ শতাংশ। গত অর্থ বছরে এই ঋণের পরিমাণ আরও কমে হয়েছে ৩৬.৫ শতাংশ।

Must read

তৃতীয়বার রাজ্যে মা মাটি মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করছে অনেক কারণ। অর্থনৈতিক দিকটিও উপেক্ষণীয় নয়। সে কথাটাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবনারায়ণ সরকার
‘A victory is twice itself when the achiever brings home full numbers’ (একটা বিজয় নিজেই দ্বিগুণ হয় যখন বিজেতা পূর্ণ সংখ্যায় গৃহে ফিরে আসে)।
—উইলিয়াম শেক্সপিয়র,
“Much Ado About Nothing”

আরও পড়ুন-বিদ্যুৎ ভবনে খোলা হল কন্ট্রোল রুম, কী কী সমস্যা জানানো যাবে জেনে নিন

এই কথাটা মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ একটাই। একটা রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় যখন কোনও দল জনগণের আশাতীত সাফল্য পেয়ে পুনঃ পুনঃ নির্বাচিত হয় তখন ওই দলের বিজয়ও দ্বিগুণ সাফল্য লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটাই সত্যি। রাজ্যের দ্বিগুণ বিজয়ের পেছনে যে সাফল্যের চাবিকাঠি তার মূলে রয়েছে রাজ্যের সামাজিক ক্ষেত্র ও উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে ব্যয়ের অভূতপূর্ব সাফল্য। ২০১০-১১ সালে বামফ্রন্টের শেষ বছরে রাজ্যের মোট রাজস্ব আয় ছিল ৪৭,২০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে অর্থাৎ বর্তমান সরকারের দশ বছরের শেষে সংশোধিত বাজেটে দেখা যাচ্ছে মোট রাজস্ব আয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ পৌনে চারগুণ বেড়েছে এই দশ বছরে। এক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যের যে সাফল্য সংঘটিত হয়েছে, বিশেষ করে সামাজিক এবং উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে তা একটি তালিকার আকারে দেখানো হল, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এই তালিকাটি মূলত রাজ্যের জিএসজিপি-র অনুপাতে দেখানো হল। এই সরকার গত ১১ বছরে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছে সামাজিক ক্ষেত্রে। বামফ্রন্টের শেষ বছরে এই খাতে মোট ব্যয় ছিল ৩০,৫৬০ কোটি টাকা। রাজ্যের জিএসজিপি-র অনুপাতে ছিল ৬.৪ শতাংশ। ওই বছর বাজেটের মোট ব্যয়ের অনুপাতে এটা ছিল ৪১.৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন-গলায় ফাঁস লেগেই মৃত্যু কাশীপুরের বিজেপি যুবনেতার: ‘অমিত শাহ মিথ্যাবাদী’, তোপ তৃণমূলের

২০১৯-২০ অর্থবর্ষে অর্থাৎ বর্তমান সরকারের নবম তম বছরে এই খাতে ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ৯৬,৪২৮ কোটি টাকা। রাজ্যের জিএসজিপি-র অনুপাতে ৮ শতাংশ। এবং ওই বছরের মোট ব্যয়ের ৪৭.২ শতাংশ। ৯ বছরে রাজ্যে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় ৩১৫ শতাংশ বেশি বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে মোট ব্যয় এবং জিএসজিপি-তে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের অনুপাত।
গত অর্থবছরে এক্ষেত্রে ব্যয় প্রায় ১.৪২ লক্ষ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। বাম আমলের চেয়ে যা ৪৬৪ শতাংশ বেশি। এটি ছিল গত অর্থবর্ষে বাজেটে মোট ব্যয়ের ৫০.৯ শতাংশ। রাজের জিএসজিপি-র ৯.৮ শতাংশ।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে ১৮টি সাধারণ রাজ্যর মধ্যে মাত্র ২টি রাজ্য মোট ব্যয়ের সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের অনুপাত পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। গুজরাট এবং উত্তরপ্রদেশে ২০২১-২২ অর্থ বছরে মোট ব্যয়ের সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের অনুপাত যথাক্রমে ৩৬.৫ শতাংশ এবং ৩৯.২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান অর্থবছরে এই অনুপাত আরও বেড়েছে। রাজ্যের তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে এবারে সামাজিক ক্ষেত্রের ব্যয় প্রায় ১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকার মতো হতে পারে। যা রাজ্যের বাজেটের মোট ব্যয়ের ৫৩ শতাংশের বেশি।

আরও পড়ুন-প্রয়াত কিংবদন্তি সন্তুরবাদক শিবকুমার শর্মা, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

বর্তমান সরকারের সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের সঙ্গে উন্নয়নমূলক ব্যয়ের অনুপাতও বেড়েছে। বামফ্রন্টের শেষ বছরে উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় রাজ্যের জিএসজিপি-র ৮ শতাংশ ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই ব্যয় ছিল ৯.৭ শতাংশ। গুজরাটের মতো রাজ্যে এর অনুপাত পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক কম। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে গুজরাটে এর অনুপাত ছিল ৭.২ শতাংশ। গত অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে এই অনুপাত ধরা হয়েছিল ১২.২ শতাংশ। সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয়ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গুজরাটে ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক কম ছিল। এই অনুপাত ছিল ওই রাজ্যের জিএসজিপি-র মাত্র ৭.১ শতাংশ।
জিএসজিপি-র সাপেক্ষে রাজ্যে ঋণের অনুপাত বামফ্রন্টের চেয়ে ক্রমশ কমছে। এখানে এর অনুপাত ছিল ৪১.৯ শতাংশ যা ২০১৯-২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৯ শতাংশ। গত অর্থ বছরে এই ঋণের পরিমাণ আরও কমে হয়েছে ৩৬.৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন-ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তকে শ্রদ্ধা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

গত ৭ এপ্রিলের প্রবন্ধে আমি এই পত্রিকায় লিখেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে ঋণের অনুপাতের থেকে পাঞ্জাব, কেরল, রাজস্থানের মতো রাজ্যের অনুপাত অনেক বেশি। এমনকী মোট ঋণ পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক বেশি উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রে।
বর্তমান অর্থ বছরেও দেখা যাচ্ছে, রাজ্য ঋণ নিচ্ছে মাত্র ৫৭,০০০ কোটি টাকার মতো। আর সুদাসল পরিশোধ করছে ৬৯,০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের থেকেও ২০ শতাংশ বেশি সুদাসল দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ঋণ নিচ্ছে উন্নয়নমুখী প্রকল্পের জন্য নয়। ঋণ নিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে ঋণ পরিশোধের জন্য।
এবার দেখা যাক জিএসজিপি-র অনুপাতে মূলধনী ব্যয়। ২০১০-১১-তে পশ্চিমবঙ্গে এটি ছিল ০.৫ শতাংশ। ২০১৯-২০তে ১.৩ শতাংশ। গুজরাটের মতো শিল্পোন্নত রাজ্যে এর অনুপাত ২০১৯-২০তে মাত্র ১.৬ শতাংশ। গত অর্থ বছরে পশ্চিমবঙ্গে এর অনুপাত বেড়েছে।

আরও পড়ুন-ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তকে শ্রদ্ধা মুখ্যমন্ত্রীর

জিএসজিপি-র অনুপাতে রাজ্যে রাজস্ব আয়ও রাজ্যে অনেকাংশে বেড়েছে। বামফ্রন্টের শেষ বছরে ছিল ১০ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালে এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। গত অর্থ বছরে হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। কার্যত রাজস্বর অনুপাত জিএসজিপি-তে বেড়েছে বলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার রাজস্ব শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই মা মাটি মানুষের সরকার বিজয়ের দ্বিগুণ সাফল্য লাভ করতে পেরেছেন এবং যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Latest article