ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই। দেশের মানুষকে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে মোদি সরকার। গত প্রায় দশ বছরে এই সরকারের আমলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে, বেকারের সংখ্যা রেকর্ড করেছে, মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল দশা গরিব, মধ্যবিত্তের। অপুষ্টি দেশের মানুষের মাথাব্যথার কারণ। মোদি জমানায় (Modi Government) নতুন করে সেরকম কলকারখানা গড়ে উঠছে না, কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তাহীনতা, এমনকী প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কায় দিনযাপন করছেন সংখ্যালঘুদের একাংশ। এসব কোনও অভিযোগ নয়, গত দশ বছরে মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ ফল। তারপরেও এই যন্ত্রণার জীবনে বিষফোঁড়ার মতো দেশের মানুষের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। তথ্য বলছে, সরকারের ঘাড়ে ২০৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মানে একজন ভারতীয় নাগরিকের উপর ১.২০ লক্ষ টাকার বেশি বোঝা চেপে রয়েছে। ২০৫ লক্ষ কোটি টাকা দেনা মানে প্রতি সেকেন্ডে ৪ লক্ষের বেশি বা প্রতিদিনে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকা। সংসদে গত বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সরকারের ১০০ টাকা খরচ হলে তারমধ্যে পুরনো ধার মেটাতেই ৪০ টাকা চলে যাচ্ছে। এমন হাঁড়ির হাল যেখানে, সেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল ভিস্তা, মন্দির নির্মাণ সহ চটকদার নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার ব্যস্ত! কোন মুখে যে তাঁরা বড় বড় ভাষণ দেন, সেটাই বিস্ময়ের।
ঢাক পিটিয়ে বলা হচ্ছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী মিলে যা করতে পারেননি, মোদি সেখানে একাই করেছেন তিনগুণ! এজন্য দলের তরফে অবশ্য তাঁর একটা ‘জয় শ্রীরাম’ সম্ভাষণ প্রাপ্য। কারণ তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়ে বাজারে ভারতের ঘাড়ে দেনার বোঝা ছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। সেটাই বেড়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ২০৫ লক্ষ কোটি টাকায়! অর্থাৎ মোদি জমানার প্রায় দশ বছরে সরকার একাই ১৫০ লক্ষ কোটি টাকা দেনা করে ফেলেছে। এসব দেখেশুনে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, করোনার আগে ২০১৯-এ ঋণের পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপি’র ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবর্ষে সেটাই হতে চলেছে ৮২ শতাংশ। এবং ২০২৭-’২৮ অর্থবর্ষে ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই একটি পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে দেশের প্রকৃত আর্থিক চেহারাটা কত করুণ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই জমানায় বিদেশি ও বেসরকারি লগ্নির হাল খুবই খারাপ। গত এক বছরের বেশি সময়ে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ১৬ শতাংশেরও বেশি কমেছে। অন্যদিকে, উৎপাদন ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৩ শতাংশ। এর থেকেই পরিষ্কার, মোদি জমানায় উৎপাদন শিল্প প্রায় হয়নি বললেই চলে। লগ্নি ও উৎপাদন কম হওয়ায় কর্মসংস্থান মার খেয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি, আয়ের সংস্থান কমে যাওয়ার সমস্যা। ২০২২-২৩-এ সরকারের ফিসক্যাল ডেফিসিট পৌঁছেছে জিডিপি’র ৬.৪ শতাংশে, যা ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত। এই আর্থিক দুরবস্থা সত্ত্বেও ভোটের রাজনীতির নিয়ম মেনে বছরের পর বছর ধরে মোদি-শাহরা দেদার খয়রাতি করেছেন। ভোট পেতে দেওয়া হয়েছে গালভরা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সেইসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করার মতো অর্থ কই? অতএব দেদার ঋণই একমাত্র বাঁচার পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছনোর আগে মোদি সরকারের (Modi Government) ‘সৌজন্যে’ আকণ্ঠ ঋণে ডুবে যেতে পারে ভারত। সেই সম্ভাবনার সতর্কবার্তাই দিয়ে রেখেছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা আইএমএফ।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে! দাবি না মানলে RBI-সহ ৩ ব্যাঙ্কের দফতরে বোমা হামলার হুমকি
মোদির (Modi Government) নিজের রাজ্য, যাকে বিজেপি মডেল হিসাবে তুলে ধরতে আগ্রহী, সেই গুজরাতেও ঋণের বোঝা চেপেছে ৩.৪০ লক্ষ কোটি টাকা। খয়রাতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সদ্য জেতা মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করেছে দু’দিন আগে। সংবাদে প্রকাশ, চলতি বছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ করেছিল সেখানকার আগের বিজেপি সরকার। এরমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা দেনা করা হয়েছিল নির্বাচনী বিধি বলবৎ থাকাকালীন। সেসবই হজম করে ফেলেছে পদ্মশিবির। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। এই ঋণ নিয়ে অবশ্য সান্ত্বনা বাক্য শুনিয়েছে সরকার পক্ষ। তাদের সাফাই, ঋণের বেশিটাই করা হয়েছে দেশের অভ্যন্তর থেকে, ভারতীয় মুদ্রায়। বিদেশি ঋণের পরিমাণ কম। কিন্তু ঋণ তো ঋণই। ধার করলে তা শোধও করতে হয়। সুতরাং সরকারের এই যুক্তির সারবত্তা কতটা আছে বোঝা দায়।
এজন্যই মিথ্যেবাদী ধাপ্পাবাজ বিজেপি সরকারকে গলা ধাক্কা দেওয়া দরকার। পরিসংখ্যান ও কর্মসূ…