সুপ্রিম কোর্ট বলছে, “স্বাধীনতার পর প্রায় ৮০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি আমরা। অথচ এখনও যোগ্য প্রার্থীদের জন্য উপযুক্ত সংখ্যক সরকারি চাকরির ব্যবস্থা আমরা করতে পারিনি। খুব কম সরকারি চাকরির সুযোগ থাকার ফলে বহু যোগ্য প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।” সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ বলছে, “যোগ্য প্রার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায়। কিন্তু, পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগের অভাবে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাঁদের।”
কিন্তু সেসবে কান দেওয়ার সময় নেই মোদি পার্টির। তারা ব্যস্ত অন্য অপকর্মে। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি গ্রাসের ছক কষতে ব্যস্ত তারা।
আরও পড়ুন-রাম-বামের অশান্তি তৈরির চক্রান্ত ব্যর্থ করে আজ আসুন ইনডোরে, শুনুন মুখ্যমন্ত্রীর কথা
আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজারে’ প্রকাশিত একটি নিবন্ধ ঘিরে এবার শোরগোল তুঙ্গে। ৩ এপ্রিল প্রকাশিত ওই নিবন্ধে দাবি করা হয়, ভারতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি জমি রয়েছে ক্যাথলিক চার্চের হাতে। তাদের হাতে থাকা জমির মোট পরিমাণ ওয়াকফ বোর্ডের থেকেও বেশি। ‘ওয়াকফ বিলের মাধ্যমে মুসলিমদের আক্রমণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যে অন্য সম্প্রদায়গুলিকেও নিশানা বানানো হবে, তার নজির তৈরি হচ্ছে। ওয়াকফ বিল আইনে পরিণত করেই এখন নজর খ্রিস্টানদের দিকে ঘোরাতে খুব বেশি সময় নিল না আরএসএস। মনে করিয়ে দিই, সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ করাতে ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া (সিবিসিআই), কেরল ক্যাথলিক বিশপ কাউন্সিল (কেসিবিসি) ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাংসদদের কাছে সমর্থনের আর্জি জানিয়েছিল বিজেপি। কেরলের মুনাম্বামে খ্রিস্টান পরিবারগুলিকে ওয়াকফ বোর্ড ভিটেছাড়া করছে, এই অভিযোগে সমর্থনের ওই আর্জি জানিয়েছিল মোদি-অমিত শাহের দল। ক’দিন আগে যাদের পরিত্রাতা সাজার চেষ্টা করছিল ওরা, এখন তাদেরই ঘাড় মটকে খাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এটাই বিজেপির চরিত্র।
ওদের বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাদের একমাত্র ঢাল হল সংবিধান। সংবিধানকে রক্ষা করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। সেটা মনে রাখা আমাদের কর্তব্য।
ওয়াকফ বিল নিয়ে যারা বিজেপির গালে চুমু দিতে গিয়েছিল, তাদের কথাও বলি।
ওয়াকফ বিলে তাদের সমর্থন করা হল? দলের অন্দরেই এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে নীতীশ কুমার, চিরাগ পাসোয়ানদের। জেডিইউতে রীতিমতো ভাঙন শুরু হয়েছে। সংখ্যালঘু শাখার একের পর এক নেতা পদত্যাগ করছেন। দলত্যাগ করছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ৬ জন সংখ্যালঘু নেতা দলের বিভিন্ন পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। চরম অস্বস্তির মুখে পড়ে শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের সংখ্যালঘু সেল। সেখানে আশ্বাস দেওয়া হয়, নীতীশ সংখ্যালঘুদের পাশে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। ওয়াকফ বিলে মুসলিমদের কোনও ক্ষতিই হবে না। বরং লাভ হবে। কিন্তু একের পর এক সংখ্যালঘু নেতাদের পদত্যাগ ও তাঁদের অভিযোগ নিয়ে দলের বক্তব্য জানতে চেয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন নেতারা। ফলে মাঝপথেই সাংবাদিক সম্মেলন বন্ধ করে দিতে হয় নেতৃত্বকে। অন্যদিকে, রাজ্যে আসন্ন ভোটে জেডিইউ বড়সড় ধাক্কা খাবে বলে দাবি করেছেন দলের পদত্যাগী নেতারা। তাঁরা বলছেন, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক হারাতে হবে জেডিইউকে। বিজেপির আর এক শরিক লোকজনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) একইরকম সঙ্কটে। ওয়াকফ বিলে সমর্থন যে দলের সংখ্যালঘু সমর্থদের ক্ষুব্ধ করেছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বয়ং চিরাগ ।দলের অন্দরেও অসন্তোষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। বিহারে ভোটের মাত্র কয়েক মাস আগে ওয়াকফ বিল নিয়ে মুসলিম জনতাকে ভালো করে বোঝানোর আগেই একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হল না। এরইমধ্যে দলের সংখ্যালঘু শাখার জেলা সভাপতি আলি আলম ইস্তফা দিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের প্রতি নীতীশ ও চিরাগদের বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি ওয়াকফ বিল স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে ওই দুই দলকে সবক শেখাবেন ভোটাররা।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আদালত যোগ্য বলেছিল, আদালতই চাকরি দিয়েছিল। আবার আদালতই চাকরি কেড়ে নিল। সুপ্রিম কোর্টের রায় মানুষকে খুবই হতাশ করেছে। এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাইকোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর তদানীন্তন বিচারপতি অধুনা বিজেপি সাংসদ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিলেন। আর এবার রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৭২) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিনমাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? আচমকাই ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। তার মোকাবিলা কীভাবে হবে সে উত্তর নেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
শীর্ষ আদালতের কাছে যে তথ্য এসএসসি জমা দিয়েছিল, তদনুসারে ওএমআর শিট বিকৃত করায় চরম অযোগ্য হলেন ৪০৯১ জন। র্যাঙ্ক জাম্প করে ওপরের র্যাঙ্কে উঠে এসে চাকরি পেয়েছেন ১২১২ জন। এই দুটো সংখ্যার যোগফল ৫৩০৩। শিক্ষক-অশিক্ষক মিলিয়ে এই ৫৩০৩ জনকে অযোগ্য বলে বাদ দিলে পড়ে থাকে ২০৪৬৯ জন। তাহলে ২৫৭৭২ জনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হল কিসের ভিত্তিতে? শুধু অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করা হল না কেন? এত তাড়া কিসের?