অনার-কিলিং কেন অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগে বদলে গেল?

হত্যার মামলায় সুবিচার না পেয়ে আইয়ুব আলি নামে এক ব্যক্তি এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন।

Must read

প্রতিবেদন: ফের দেশের শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্ট এবং ট্রায়াল কোর্টের এক সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে। জানা গিয়েছে, অনার-কিলিং বা সম্মানরক্ষার নামে হত্যার মামলাকে পরিকল্পিতভাবে বিপথগামী করা হয়েছে। যে ঘটনায় স্পষ্টতই পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ রয়েছে, সেই মামলাকে লঘু করে দেখিয়ে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়। সম্মানরক্ষার নামে পরিকল্পিত হত্যার মতো গুরুতর ঘটনাকে অনিচ্ছাকৃত হত্যার ধারায় পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিয়ে চরম অসন্তোষ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন-মার্কিন ভিসা বাতিল ৫০ শতাংশ পড়ুয়ারই

হত্যার মামলায় সুবিচার না পেয়ে আইয়ুব আলি নামে এক ব্যক্তি এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। তাঁর ২৬ বছর বয়সি ছেলে জিয়াউর রেহমানকে তাঁর প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। মামলাকারীর অভিযোগ, এই ঘটনার পিছনে কারণ ছিল ধর্মীয় পার্থক্য। জিয়া এবং তাঁর প্রেমিকা দুটি পৃথক ধর্মের অনুসারী ছিলেন। অথচ খুনের মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট পুলিশকে আইপিসি-র ৩০৪ ধারার অধীনে কম গুরুতর ধারা প্রয়োগ করার অনুমতি দিয়েছিল। মামলাটি শীর্ষ আদালতে এলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুনানি করেন। তাঁরা সরাসরি এলাহাবাদ হাইকোর্ট এবং ট্রায়াল কোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আইপিসি-র ৩০২ ধারার অধীনে হত্যার অভিযোগে বিচার চালানোর নির্দেশ দেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, জিয়ার শরীরে ১৪টি আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং মৃত্যুর কারণ ছিল গভীর শক ও রক্তক্ষরণ। আইয়ুব আলি দাবি করেন, পুত্রের প্রেমিকার পরিবার তাঁর ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পিটিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনাকে স্পষ্ট সম্মানরক্ষার নামে হত্যা বা অনার-কিলিং হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, কাউকে ভালবাসা কি অপরাধ? ভিন্ন ধর্মের হওয়ার কারণে কি তাদের লুকিয়ে থাকতে হবে? ট্রায়াল কোর্টের যুক্তি ছিল, ধারালো অস্ত্র ব্যবহার না হওয়ায় এটি পরিকল্পিত হত্যা নয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলে, কেন ৩০৪ ধারার অধীনে চার্জশিট দাখিল করা হল, তা বিস্ময়কর। বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, আইপিসি-র ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে নতুন অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হবে। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তাদের এই পর্যবেক্ষণ বিচারের উপর প্রভাব ফেলবে না। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আইয়ুব আলির সঙ্গে আলোচনা করে একজন বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এই বিষয়ে একটি সম্মতি রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের কড়া অবস্থানে স্পষ্ট যে যোগীরাজ্যে সাম্প্রদায়িক রং দেখে যেভাবে হত্যার মামলায় লঘু ধারা জুড়েছিল পুলিশ-প্রশাসন, তাতে চরম ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালতও।

Latest article