বৈধব্য এখন অতীত

বিধবাদের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন স্বয়ং বিবেকানন্দ। হিন্দু পুরাণেও বিধবাদের নতুন জীবনের বিপক্ষে যুক্তি সাজানো হয়েছিল। সমাজে বিধবাদের লড়াই এখন অতীত। সমাজ কী ভাববে, পরিবার কী ভাববে, আত্মীয়স্বজন কী ভাববে— এইসব নিয়ে আর ভাবার সময় নেই স্বামীহারা নারীদের। বেহুলা-ভাসানের গল্পও তাঁদের কাছে পুরনো। এখন তাঁদের শুধু এগিয়ে চলা, সমাজের মূল স্রোতে ভেসে চলা। বৈধব্য উত্তরণের পথে হাত বাড়িয়েছে সরকারও। তাঁরা এখন স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সেই স্বপ্নের মায়াজাল বুনলেন বিশ্বজিৎ দাস

Must read

শুভ মহরত : প্রথম বিধবাবিবাহ
সেদিন ছিল রবিবার। ১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর। উত্তর কলকাতার ১২ নং সুকিয়া স্ট্রিট, আজকের ৪৮এ এবং ৪৮বি কৈলাস বসু স্ট্রিট। তখনও সন্ধ্যা নামেনি, বেজে উঠেছে বিয়ের সানাই, ঝাড় লণ্ঠনে আলোর রোশনাই। অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। অন্তঃপুরে মেয়েদের সে কী ব্যস্ততা! রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কোনও ঘাটতি নেই। পাত্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার খাটুরা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের, গোত্র ভঙ্গ কুলীন শাণ্ডিল্য-শিরিশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় মুর্শিদাবাদ জেলার জজ পণ্ডিত। বাবা রামধন তর্কবাগীশ। পাত্রী বর্ধমান জেলার পলাশডাঙা গ্রামের-লক্ষ্মীমণির কন্যা। ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বাল্যবিধবা কন্যা। বয়স তেরো বছর। বিয়েটা নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। চলছে কানাঘুষো। আনাচে-কানাচে উঁকিঝুঁকি। কৌতূহলের শেষ নেই। মোড়ে মোড়ে গুজুরগুজুর, ফুসুরফুসুর। কী হয় না হয়। পরিবারের লোকেরা সবাই ব্যস্ত। পাত্রীও বিয়ের সাজে তৈরি। সব মিলিয়ে বিয়েবাড়ি গমগম করছে। ১২ নং সুকিয়া স্ট্রিট ও তার আশপাশে মানুষের ঢল। বাহারি বেশভূষা মনোহারী পোশাক দেখার মতো। বাড়ির মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে পাত্রীর কাছে বর আসবে এখুনি। কারওর হাতে শাঁখ কারওর হাতে ফুল। হইহই রব উঠল। বেজে উঠল শঙ্খ, উলুধ্বনি। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাম ঘোষের বড় জুড়িগাড়ি করে বিয়েবাড়িতে এলেন বর ও বরযাত্রীরা। দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। রাস্তায় তখন জনতার ঢল। জনতার এই ঢল সামাল দিতে সুকিয়া স্ট্রিটে দু’হাত অন্তর পুলিশ পাহারা ছিল।
প্রথম বিধবাবিবাহের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ২০০০ অতিথি। উপস্থিত ছিলেন রামগোপাল ঘোষ, হরোচন্দ্র ঘোষ, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, রাজা রামমোহন-পুত্র রামপ্রসাদ রায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, দিগম্বর মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ ও দ্বারকানাথ মিত্রের মতো গুণিজনেরা। উৎসাহে উদ্যোগে ছিলেন স্বয়ং বিদ্যাসাগর। সঙ্গে ছিলেন রাজনারায়ণ বসু। সেদিনের কলকাতা শহরে বিধবাকন্যার বিয়ে দেওয়া মামুলি কাজ ছিল না। বরং ছিল সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই। স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই। তখন সবে বিধবাবিবাহ আইন পাশ হয়েছে। বিদ্যাসাগরের একশো বছর আগে বিধবাবিবাহের উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজা রাজবল্লভ। বিদেশি শাসকের সাহায্যে নয়, সম্পূর্ণ নিজের ক্ষমতায় তিনি বিধবাবিবাহের প্রচলনের চেষ্টা করেন, নিজেরই বিধবা কন্যার বিবাহ দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, এই সাহসী উদ্যোগে তিনি সফল হননি, সফল হলে বিধবাবিবাহ বাঙালি জাতির মধ্যে একশো বছর আগেই ১৭৫৬ সালে প্রচলিত হতে পারত।\

আরও পড়ুন-রথের নিরাপত্তা দেখতে দিঘায় ডিজি

না পসন্দ-বিবেকানন্দ
সমাজ তবু কিছুতেই মানতে চাইছে না। সুশীল সমাজ চোখরাঙানি দিচ্ছে নৈতিক অধঃপতনের। শুধু কুসংস্কারপ্রেমী, রক্ষণশীলেরাই সমালোচনা করেননি, তালিকায় ছিলেন সমাজের চিন্তাবিদ গুণিজনেরা। সেদিন বিধবাবিবাহ নিয়ে সমাজ দু’ভাগে ভাগ হয়েছিল। স্বয়ং বিবেকানন্দ একাধিকবার বিধবাবিবাহের তুখোড় সমালোচনা করেছেন। ১৮৯৮ সালের ২২ জানুয়ারি, সমাজ সংস্করণের তুখোড় সমালোচনা করে বিবেকানন্দ বলেছেন— সমাজে অধিকাংশই তো নির্বোধ-সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন। মাথাওয়ালা লোক অল্প। এই মাথাওয়ালা লোকেরাই সব কাজের সব বিভাগের নেতা। এদের ইঙ্গিতেই সব চলে। এদের আদর্শ করে চললে কাজও সব ঠিক হয়। আহাম্মকেরাই শুধু হাম্ভরা হয়ে চলে আর মরে। সমাজসংস্কার আর কি করবে। সমাজসংস্কার মানে তো বিধবার বিয়ে আর স্ত্রী স্বাধীনতা বা ওইরকম কিছু। দু-এক বর্ণের সংস্কারের কথা বলছে তো? দু-চার জনের সংস্কার হল তাতে সমস্ত জাতটার কী এসে যায়। এটা সংস্কার না স্বার্থপরতা? নিজেদের ঘরটা পরিষ্কার হল, আর যারা মরে মরুক।
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন শিকাগো থেকে হরিদাস বিহারীদাস দেশাইকে ও দেওয়ানজিকে লেখা এক চিঠিতে বিবেকানন্দ পুনরায় বলেন, ‘জনসাধারণকে শিক্ষিত করা এবং তাহাদিগকে উন্নত করাই জাতীয় জীবন-গঠনের পন্থা। আমাদের সমাজসংস্কারকগণ খুঁজিয়া পান না-ক্ষতটি কোথায়। বিধবা-বিবাহের প্রচলন দ্বারা তাঁহারা জাতিকে উদ্ধার করিতে চাহেন।’
বিবেকানন্দ বিধবাদের পুনর্বিবাহ ভাল চোখে দেখতেন না। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনায় শেক্সপিয়র ক্লাব হাউসে ‘ভারতীয় নারী’দের কথা বলতে গিয়ে বিবেকানন্দ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন— বিরুদ্ধ মত। স্বামীর মৃত্যুর পর বৈধব্যদশা পালনকে জাস্টিফাই করতে গিয়ে বিবেকানন্দ বলেন— ‘আমি এইমাত্র আপনাদিগকে বলিয়াছি যে, প্রথম দুই তিন বর্ণের ভিতর বিধবারা আর বিবাহ করিতে পারে না; ইচ্ছা থাকিলেও পারে না।’
‘পুরাণ’ও সেই বিয়ের কথা
মহাভারতে বিধবার পুনর্বিবাহের কোনও উদাহরণ নেই কারণ এটি একটি পাপ। বিধবা এবং তাঁর নতুন স্বামী উভয়েরই নরক হবে। অগ্নি পুরাণ (২২২.১৯-২৩) এখানে বলা হয় “…যে বিধবা তার স্বামীর মৃত্যুর পর আত্মসংযম এবং তপস্যা করে, সে স্বর্গে যায়…যে বিধবা তার স্বামীর (সতী) সাথে একই অগ্নিকুণ্ডে নিজেকে পোড়ায়, সেও স্বর্গে যায়।”
অগ্নি পুরাণ অন্য শ্লোকে (১৫৪.৩) ঘোষণা করে একজন মেয়ের বিবাহ কেবল একবারই দেওয়া উচিত। গরুড় পুরাণ (২.১৫.৯৪)-এ নরকে যাওয়া নারী বলেন— আমি আমার স্বামীর সঙ্গ উপভোগ করিনি, আমার স্বামীর (সতী) চিতায়ও প্রবেশ করিনি। তার মৃত্যুর পর আমি সতীত্বের ব্রতও পালন করিনি। এখন আমি আমার কর্মকাণ্ডের জন্য কষ্ট পাচ্ছি।
বামন পুরাণ (১২.৮৫ ) বিশ্বাস করে, ‘‘যারা বিধবাদের পুনর্বিবাহ করে এবং অবিবাহিত মেয়েদের অপবিত্র করে, এবং এই ধরণের মিলনের বংশধরদের পূর্বপুরুষদের পোকামাকড় এবং পিঁপড়া খেতে বাধ্য করা হয়।” মহাভারত আদি পূর্ব (১.১০৪.৩১-৩২) ঋষি দীর্ঘঘটমাস বলেন, ‘আমি আজ থেকে এই নিয়ম মেনে চলেছি যে প্রতিটি নারীকে তার জীবনের জন্য একজন স্বামীর সাথেই থাকতে হবে। স্বামী জীবিত থাকুক বা মৃত, কোন নারীর জন্য অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রাখা বৈধ হবে না। এবং যার এই ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে তাকে অবশ্যই পতিত বলে গণ্য করা হবে। স্বামী ছাড়া একজন নারী সর্বদা পাপী হবে।’
অনেকে উলুপির কথা বললেও উলুপি আসলে বিধবা ছিলেন না।
হয়তো তাঁর একজন বাগদত্তা ছিলেন যাঁকে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি কখনও বিবাহিতা ছিলেন না।
বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে
বিধবাদের সমাজে লড়াই এখন অতীত। বদলেছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। মেয়েদের ভরসার জায়গা তার আপন পুরুষ স্বামী। সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে, তাকে পড়তে হয় অথৈ জলে। টিকে থাকতে হয় সমাজে, পরিবারে, হাল ধরতে হয় সংসারের। সন্তানের একমাত্র অভিভাবক হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী মারা গেলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তোড়জোড় শুরু হয় তাঁর আবার বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু স্বামী মারা গেলে সমাজ তাঁকে নিয়ে ভাবে না একবিন্দু। চিরন্তন লড়াই যেন তাঁর ভাগ্যলিখন। নানা সামাজিক কুসংস্কার এখন বহুযোজন দূরে। সমাজ কী ভাববে, পরিবার কী ভাববে, আত্মীয়স্বজন কী ভাববে, কী হবে প্রথম সন্তানের— এগুলো তো পিছুটান। সামাজিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ নারীকে পিছনে টানার চেষ্টা করেছে বহু দিন। বেহুলা ভাসান থেকে শুরু হয়েছিল সে-যাত্রা। স্বর্গের দেবতাদের নাচ দেখিয়ে ফিরে পেয়েছিলেন স্বামীর জীবন। আজকের বেহুলার উত্তরাধিকারীরা সে-পথে পা বাড়ায় না বরং শক্তি খুঁজে পায় নিজের মধ্যে। বয়ে চলে আধুনিক সমাজের স্রোতে। পথ দেখায় সমাজকে। একটা সময় বিধবাদের বিবাহ ছিল নৈতিক অধঃপতন। আর এখন বিধবাবিবাহ শুধু নয়, সমাজের সব ক্ষেত্রে তাঁদের এগিয়ে চলা, সমাজের মূল স্রোতে তাঁদের ভেসে চলা, আসলে উন্নয়নের ছায়াপথ।

আরও পড়ুন-রণথম্ভোরে রানির রাজত্বের অবসান, মৃত্যু হল কুমির শিকারি বাঘের

মনগাও-এর মনের কথা
গ্রামীণ ভারতের আর শহুরে ভারতের ফারাকটা একদিনে না মুছে গেলেও বিধবাদের সম্মান বা স্বীকৃতি জানাতে দুই ভারতই লড়াই করছে। এ-ভারত পিছিয়ে যাওয়া ভারত নয়, এগিয়ে আসা ভারত। কোলাপুরের হেরোয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত গর্জে উঠেছে বৈধব্য পালনের বিরুদ্ধে। স্বামীর মৃত্যুর পরে মহিলাদের সিঁদুর মুছে ফেলা, মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে— সরকারি প্রস্তাবকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। কোলাপুরেরই অন্য গ্রাম মনগাও পঞ্চায়েতের মনের কথাও একই। তারাও বিশ্বাস করে মহিলাদের বৈধব্যপ্রথা মানতে বাধ্য করা আসলে অসম্মান করা। হেরোয়ার ও মনগাওকে অনুসরণ করছে ভারতের বহু গ্রাম। সদর্পে ঘোষণা করছে অতীতের কুসংস্কারের স্থান নেই বিজ্ঞানের যুগে। তারা বিশ্বাস করে লড়াইটা সাম্যের, লড়াইটা ব্যক্তিস্বাধীনতার।
কুলীন কুলসর্বস্ব, বিধবাবিবাহ, বিধবা মনোরঞ্জন, বিধবা বিষম বিপদ, চপোলা চিত্ত চাপল্লো, বাল্লদাহ, বিধবা বিলাস, মেঘনাদবধ, সন্তাপিনি, শরৎ সরোজিনী, সন্তাপিনী, তরুবালা যে ভারতের ছবি এঁকেছে, নাটকের সেই অধ্যায় এখন বাতিল। কাদম্বিনী, শ্যামোমোহিনী, স্বর্ণকুমারী, যে লড়াই শুরু করেছিলেন তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের সকল মহীয়সী। মহাভারত, পুরাণকথা এখন গুরুত্ব পায় না বৈধব্য পালনের ক্ষেত্রে। সামাজিক হুঙ্কারে ছিল বৈধব্য পালনের কথা।
আলোর পথযাত্রী
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বিধবাদের ক্ষমতায়নের পক্ষেও নানা সমাজকল্যাণ প্রকল্প শুরু করেছে। তামিলনাড়ুর সরকারও বিধবাদের জন্য মণিয়ামম্মিয়ার নিনাইভু বিবাহ সহায়তা প্রকল্প চালু করেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণে। বিধবা মেয়েদের বিবাহের জন্য এককালীন পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং বাইশ ক্যারেটের সোনার মুদ্রা দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। সুন্দরবনের বিধবা গ্রাম এখন শিরোনামে। এ-গ্রামের বিধবাদের স্বামীরা মধু সংগ্রহে বাঘের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এ-গ্রামের বিধবারা এখন আর বৈধব্যে আটকে নেই। কেউ পুনরায় বিয়ে করছেন কেউ আবার নেমেছেন প্রতিদিনের জীবনযাপনের লড়াইয়ে। রাজ্য সরকার বিধবাদের ক্ষমতায়নে পাশে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের বিধবাদের ১০ হাজার টাকা অনুদান, মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ, বাংলার আবাস যোজনায় তাঁদের বাড়ি, নারেগা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজ— ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। এবং ঘোষণা অনুযায়ী ১১টি গ্রামের মধ্যে ২-৩টি গ্রাম দত্তক নিয়ে বিধবা মহিলা ও সন্তানদের কাজের সংস্থান করে দেওয়াও হয়েছে।

আরও পড়ুন-স্ত্রীকে উপহার দিতে স্বর্ণবিপণিতে ৯৩ বছরের বৃদ্ধ, মঙ্গলসূত্রের দাম নিলেন না মুগ্ধ দোকানি

স্বপ্ন দেখব বলে
বিধবা ক্ষমতায়নের এই ছবি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুর্লভ নয়। তাই জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে বিশ্বের ২৫ কোটি ৮০ লক্ষ বিধবার জন্য আন্তর্জাতিক বিধবাদিবস শুরু করেছে জুন মাসের ২৩ তারিখ। বিধবাদের পূর্ণ অধিকার ও স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে এই উদযাপন। ভারতবর্ষের পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা বিধবাদের অধিকার রক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে চলেছে। মৈত্রী ভারত, অ্যাকশন এইট, মানব বিকাশ সেবা সংঘ, র্যাপিড-এর মতো সংস্থা ভারতের পাঁচ কোটি বিধবার জন্য কাজ করছে। সরকারি আইন প্রকল্প থাকলেও প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, তাদের সচেতন করতেই এগিয়ে এসেছে এই অলাভজনক সংস্থাগুলো। শহরে বৈধব্য এখন জীবনশৈলীর প্রতিবন্ধকতা নয়। তারা ছুটে বেড়াচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জীবন ও জীবিকায়। পৌঁছে যাচ্ছে উৎকর্ষতার চরম সীমায়। এগিয়ে চলা গ্রামীণ ভারতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে রোল মডেলের একসময়ের স্বামীহারা নারীরা। তাঁদের উড়তে শেখাচ্ছে ডানা মেলে এই অর্ধেক আকাশে। দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে হ্যারিকেনের আলোয় মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে তারা গাইছে— ‘আমরা যদি এই আকালে স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী!’ সে-গানের সুর ভেসে আসছে সেক্টর ফাইভের কর্মরত এক বিধবাকর্মীর ইয়ারফোনে। তিনিও গুনগুন করে গাইছেন— ‘তাই স্বপ্ন দেখব বলে আমি দু-চোখ পেতেছি, তাই তোমাদের কাছে আমি দু-হাত পেতেছি।’

Latest article