প্রতিবেদন: পহেলগাঁওয়ের গণহত্যার জেরে আচমকাই ভারত ছাড়ার নোটিশ পেয়ে মাথায় হাত ৫৫ বছরের সারদা বাইয়ের। ওড়িশার বোলাঙ্গিরের এই প্রৌঢ়ার কান্নাজড়ানো কণ্ঠে প্রশ্ন, এখন আমি যাব কোথায়? আমার পরিবার এখানে, ভারত আমার ঘর। ৩৫ বছর ধরে রয়েছি এখানেই। ২ সন্তানকে মানুষ করেছি, এখন মানুষ করছি ২ নাতি-নাতনিকে। এখন আমার ঠাঁই হবে না ভারতে? পাকিস্তানে তো আমার কেউ নেই। শুধু সারদা বাই নন, বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশায় তাঁর মতোই ভারত ছাড়ার নিদান পেয়েছেন আরও ১২ জন। একইরকম অসহায় অবস্থা তাঁদের। প্রশ্ন একটাই, এখন যাব কোথায়? একই কথা সকলের, পাকিস্তানে গিয়ে মার খাওয়ার থেকে কিংবা মরে যাওয়া থেকে ভারতের জেলে থাকা অনেক ভাল।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে জন্ম হয় সারদার। ভারতে আসা ১৯৮৭তে। বাবার সঙ্গে ৬ ভাইবোন ৬০ দিনের ভিসাতে চলে এসেছিলেন এপারে। ওড়িশায় এসে তাঁরা বসবাস শুরু করেন কোরাপুটে। বিয়ে হয় স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারপর থেকে সপরিবারে বোলাঙ্গিরে। বললেন, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনি ৩৫ বছর ভারতে কাটানোর পরে ঠাঁই হবে না এদেশে। ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সাড়া মেলেনি।
আরও পড়ুন-বড়বাজারের ৬ তলা হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, মৃত ১
একই কথা দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বাস করা পাকিস্তানি হিন্দুদের। বহুদিন আগে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে এসেছিল পাকিস্তানের বেশ কিছু সংখ্যালঘু পরিবার। তারপর থেকে এখানেই রুজিরোজগার, শিশুদের বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা। অনেক গভীরে পৌঁছে গিয়েছে শিকড়। পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় ওলটপালট হয়ে গেল সবকিছু। সেই একই প্রশ্ন, কোথায় যাব?
এই প্রশ্নেই দিশাহারা প্রেমের টানে পাকিস্তান ছেড়ে চলে আসা সীমা হায়দরের। এখানে এসে এক কন্যাসন্তানেরও জন্ম দিয়েছেন তিনি। সন্তানকে ফেলে পাকিস্তানে ফিরবেন কীভাবে? ভারতে থাকার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কোনও উত্তর আসেনি। স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারত ছাড়তে বাধ্য হওয়া অনেকেরই ভারত সরকারের কাছে আর্জি, যারা অপরাধ করল সেই জঙ্গিদের শাস্তি দিন, আমাদের নয়। ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়ে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছেন ৬৮২ জন। অনেকেই পরিবারচ্যুত। করাচির এক মহিলা বললেন, বিয়ে হয়েছে ১০ বছর। ভারতীয় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন দিল্লিতে। ৮ বছরের সন্তানও আছে। এখন সব ছেড়েছুড়ে চলে যেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন-প্রিমিয়ার লিগের অভিনব উদ্যোগ
পহেলগাঁও মাথাব্যথা, দিনভর বৈঠক
পহেলগাঁও হত্যালীলার পরে ৭ দিন অতিক্রান্ত। এখনও অধরা আততায়ী সন্ত্রাসবাদীরা। স্বরাষ্ট্র দফতরের ব্যর্থতা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। এটাই এখন মাথাব্যথার মূল কারণ মোদি সরকারের। কাশ্মীরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাক-ভারত গুলি বিনিময় অব্যাহত টানা ৫ দিন। এই পরিস্থিতে সেনাকে প্রত্যাঘাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এই নিয়েই মঙ্গলবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, ৩ বাহিনীর প্রধান এবং সিডিএস অনিল চৌহান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠক করেন আলাদাভাবে । বুধবার ফের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।