প্রতিবেদন : চারে চার-এর জয়ের চব্বিশ ঘণ্টা হয়নি তার আগেই নিজেদের কেন্দ্রে মানুষের জন্য পরিষেবা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন নবনির্বাচিত চার বিধায়ক। একইসঙ্গে চলছে বুথভিত্তিক, ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণের কাজ। কোথায় ভোট বাড়ল, কোথায় কমল? কেন কমল? কীভাবে সেই জায়গার খামতি পূরণ করা যায় তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এসবের মাঝেই রবিবার সকাল থেকে প্রার্থীদের বাড়িতে দিনভর লেগেই আছে শুভানুধ্যায়ীদের সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছার পালা। অনবরত লোকজন এসেই চলেছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই। সেই সঙ্গে জয়ের আনন্দের আবেগকে সঙ্গে করে নিয়ে চলছে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতিও। প্রতিটি জায়গায় একাধিক প্রস্তুতিসভা, মিটিং-মিছিল হচ্ছে। চার কেন্দ্রে নির্বাচনের জন্য একুশের প্রস্তুতি থমকে ছিল কিন্তু রবিবার থেকে জোরকদমে সেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সামনে আর মাত্র সাতদিন, তার পরই একুশের শহিদ স্মরণ। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারে চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন-ফের রেলের ভুলে দুর্ঘটনা
জয়ের আনন্দকে সঙ্গী করে রবিবাসরীয় দিনে তৃণমূলের চার নবনির্বাচিত বিধায়ক সুপ্তি পাণ্ডে, মধুপর্ণা ঠাকুর, মুকুটমণি অধিকারী এবং কৃষ্ণ কল্যাণী ভেসে গেলেন শুভেচ্ছার বন্যায়।
আগামী ২০ বছরে বিজেপির কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তাই যে মতুয়ারা লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, সেই মতুয়ারা বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসে ভোট দিয়েছেন। রবিবার কৃষ্ণগঞ্জের নিজের বাড়িতে বসে একথা বললেন রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। লোকসভা ভোটের ব্যবধান মিটিয়ে ৩৯ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছেন। মুকুটমণি প্রথম থেকেই এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এগিয়ে ছিলেন। তাঁর জয়ের পর জয়োল্লাসে মেতে ওঠেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে মুকুটমণি বলেন, বিজেপি সাংসদ কোনও কাজ করেননি। বিজেপির হিন্দু বিদ্বেষী মানসিকতাও মতুয়ারা ধরে ফেলেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-এই উপনির্বাচন কী বার্তা দিয়ে গেল?
এই জয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই জয় উন্নয়নের, জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের। এমনই দাবি বাগদার নবনির্বাচিত বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুরের। দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়কের দাবি, মানুষ মধুপর্ণাকে দেখে ভোট দেননি। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর উন্নয়ন দেখেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক ঘাসফুলে ভোট দিয়েছেন। মানুষ বুঝেছেন এলাকার উন্নয়ন যদি করতে হয় তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকেই শক্ত করতে হবে। তাই আমাকে তাঁদের প্রতিনিধি করে বিধানসভায় পাঠিয়েছেন। বিজেপি মিথ্যা ও প্ররোচনামূলক প্রচারে লোকসভা নির্বাচনে বাগদাবাসী তৃণমূলকে বিমুখ করলেও তারা ভুল বুঝতে পেরে উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীর উপরই আস্থা রেখেছেন বলে বিপুল ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস জয় পেয়েছে। জয়ের পর আমার প্রধান তিনটি কাজই হবে বাগদার রাস্তাঘাট, আলো ও ব্রিজ নির্মাণের দিকে জোর দেওয়া। বাগদাবাসীর এই আস্থাকে উন্নয়নের ছোঁয়ায় সোনার বাগদায় পরিণত করতে চান বলে দাবি মধুপর্ণা ঠাকুরের। সন্দেশখালির ঘটনায় সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। যখনই সন্দেশখালি ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে আসে তারপর থেকে লোকসভা ভোটে রাজ্যজুড়ে ভাল ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র এভাবেই বিজেপির ষড়যন্ত্রে হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। বিধানসভায় সাধারণ মানুষ তাই তার যোগ্য জবাব দিয়েছেন। শুধুমাত্র রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রেই পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে লিড দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপরই আস্থা রেখেছেন। ৫০,০৭৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী জানান, তিনি সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন। আগামী দিনে কয়েকটি কাজকে গুরুত্ব দিয়ে সেগুলি তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করবেন তিনি। এর মধ্যে রায়গঞ্জ-বারসই সড়ক যোগাযোগের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আগামী দিনে দ্রুত সেই কাজ শেষ করা হবে।
আরও পড়ুন-সঞ্জু , মুকেশের দাপটে সিরিজ ৪-১
পাশাপাশি রায়গঞ্জের নিকাশি ব্যবস্থার মাস্টার প্ল্যান করা হবে। রায়গঞ্জ শহরকে যানজট মুক্তকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার আগে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে হকাররা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারবেন।