প্রকৃতি সংরক্ষণে নারী

আগামিকাল বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। সভ্যতার আদিতে বিশৃঙ্খল অরণ্য প্রকৃতিকে নারীই দিয়েছিল সুশৃঙ্খল রূপ। কারণ নারী আর প্রকৃতির বন্ধন আজন্মের। তাই তাঁরাই বেশি সোচ্চার হয়েছেন পরিবেশ রক্ষায়। যুগে যুগে প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন নারীই। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

আগামিকাল বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। গোট বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে রক্ষা করার গুরুত্ব বোঝাতে এইদিনটি পালিত হয়। কারণ সুস্থ প্রকৃতিই হল বলিষ্ঠ সমাজগঠনের ভিত। এই ধরিত্রী প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। আলো, বাতাস, মাটি, জল, গাছপালা, উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী— এই সবকিছুই প্রকৃতির দান। ঈশ্বরের আশীর্বাদ। কিন্তু পরিতাপ এটাই যে, বিশ্বপ্রকৃতি আজ কালিমাময়। দূষণের কালো পরতে ঢাকা আকাশে বাতাসের প্রভাবে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির অভিশাপে প্রকৃতি আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বহু বন্য প্রজাতি, পাখ-পাখালি, কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা, গড়ে উঠছে বড় বড় ইমারত, খরা-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষ আবাদ, বিভিন্ন খননকার্যে ক্ষতিগ্রস্ত মাটি। রয়েছে আরও অনেক সমস্যা। তাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস পালনের গুরুত্ব অনেকটাই।

আরও পড়ুন-পাশে আছি, ওবামার বার্তা পেয়ে স্বস্তিতে কমলা হ্যারিস

প্রকৃতি ও নারী
ইতিহাস বলছে নারীরাই সবসময় সোচ্চার হয়েছে প্রকৃতির সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষায়। কারণ নারী ও পরিবেশ অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
প্রকৃতি রক্ষার অন্যতম কান্ডারি নারী। নারীর সঙ্গে প্রকৃতির গভীর, নিবিড় সম্পর্ক, যা সৃষ্টির আদি থেকে স্বীকৃত। যদিও মানবসভ্যতার সূচনাপর্বে নারী-পুরুষের কোনও বিভাজন ছিল না। তারপরও পুরুষ নয়, সৃষ্টিশীল ক্ষমতার জন্য নারীকেই প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করা হয়।
নারীর জীবন ও জীবিকার সঙ্গেও পরিবেশ ও প্রকৃতি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। পৃথিবীর সব দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ ও অনুন্নত দেশের নারীকে তার প্রতিদিনের কাজের জন্য প্রকৃতি-নির্ভর হতে হয়, প্রতিদিন তাঁদের যেতে হয় প্রকৃতির কাছে। তাঁরা তাদের বেশিরভাগ সময় বন, জলাভূমি এবং খামার রক্ষণাবেক্ষণ এবং খাদ্য, জ্বালানি কাঠ, জল এবং গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ব্যয় করে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ খাদ্য এককভাবে মহিলাদের দ্বারা উৎপাদিত হয়। এই কারণে প্রকৃতির বিপর্যয়ে নারীই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই বিপন্নতাকে প্রতিহত করার জন্য নারীই সবার আগে প্রতিবাদ করে এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁরা। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে গেছেন। সেইসব আন্দোলন পরিবেশ রক্ষায় নারীর ভূমিকা তাঁদের কর্মযজ্ঞের প্রাসঙ্গিকতাকে তুলে ধরে।

আরও পড়ুন-বাংলাভাগের ষড়যন্ত্র, সুকান্তর ইস্তফার দাবিতে উত্তাল হল লোকসভা

পরিবেশ সংরক্ষণে নারী-আন্দোলন, বিষ্ণোই আন্দোলন
গাছ কেটে রাজপ্রাসাদ গড়া আটকাতে ১৮ শতকের গোড়ার দিকে অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে বন সংরক্ষণ আন্দোলনে ৩৬৩ জন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সদস্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্রকৃতির সমস্ত উপাদান যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী এবং পরিবেশ ইত্যাদি রক্ষার জন্য কঠোর আইন পালন করতেন এই সম্প্রদায়ের মহিলারা। দৃঢ়তার সঙ্গে গাছকাটার বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা। এই বিষ্ণোই আন্দোলন ছিল প্রকৃতির সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য লড়া সবচেয়ে পুরনো সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলন পরবর্তীতে ১৯৭০-এর দশকের চিপকো আন্দোলনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।
থেঙ্গাপল্লি
ওড়িশার আদিবাসী মহিলারা থেঙ্গাপল্লি অনুশীলন করতেন বন প্রতিরক্ষায়। থেঙ্গা মানে লাঠি এবং পল্লি মানে হল ঘোরানো। বহু বছর ধরেই চার থেকে ছয়জনের মহিলা দল স্বেচ্ছায় বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও রক্ষার্থে লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে জঙ্গল জুড়ে টহল দিতেন। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে ওডিশার নয়াগড় জেলায় ছিলেন এই থেঙ্গাপল্লি মহিলারা। পরবর্তীতে নয়াগড়ের অন্তত ৩০০টি সম্প্রদায়ের মহিলারা বন দেখার দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। বন সংরক্ষণে নানাবিধ কর্মযজ্ঞ শুরু করেন।
চিপকো আন্দোলন
উওরাখণ্ডের চামোলি জেলার দুই নারী বাচনি দেবী এবং গৌরী দেবী ১৯৭৪ সালে বন সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষায় আন্দোলন শুরু করেন যার নাম ছিল চিপকো আন্দোলন। জঙ্গল কেটে ফেলার বিরুদ্ধে, ঠিকাদারদের অনৈতিক কার্যকলাপ রুখতে গৌরী দেবীর ডাকা এই আন্দোলনে গ্রামীণ মহিলারা স্বেচ্ছায় ব্যাপকভাবে যোগদান করেছিলেন। এতটাই সাড়া ফেলেছিল এই প্রয়াস যে হিমালয় অঞ্চলের বাইরেও প্রবলভাবে পড়েছিল এই আন্দোলনের প্রভাব।
সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সাইলেন্ট ভ্যালি ফরেস্টে একটি বাঁধ নির্মাণে কেরল সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে শুরু হয়েছিল এই সাইলেন্ট ভ্যালি মুভমেন্ট আন্দোলন। এই আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন পরিবেশবাদী এবং মালয়ালম কবি সুগাথা কুমারী। ওই সমগ্র অঞ্চলটিতে কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল তাই সেই সম্ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করতেই সেখানকার মহিলারা সুগাথা কুমারীর অনুপ্রেরণায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধাচার করেছিলেন। অবশেষে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরাসরি হস্তক্ষেপে ১৯৮০ সালে প্রকল্পটি বাতিল হয় এবং ১৯৮৪ সালে সাইলেন্ট ভ্যালিতে একটি জাতীয় উদ্যান গড়ে ওঠে।
নবদান্যা আন্দোলন
১৯৮৪ সালে পরিবেশবিদ বন্দনা শিবের নেতৃত্বে শুরু এই নবদান্যা আন্দোলন। নবদান্যা ছিল ভারতের বৃহত্তম অরগানিক ফার্মিং মুভমেন্ট। নবদান্যার অর্থ ন’টি শস্য। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শস্যবীজের গুণমান বৃদ্ধি এবং সুরক্ষা। কৃষকদের জৈবচাষে উদ্বুদ্ধ করা। তাঁদের অর্গানিক খাদ্যের বাজার স্থাপনে সহায়তা করাও ছিল আন্দোলনের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে সফল হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ১৭টি রাজ্যে গড়ে তুলেছিলেন বীজ ব্যাঙ্ক পরিষেবা।

আরও পড়ুন-শীর্ষ আদালতে জোর ধাক্কা খেলেন রাজ্যপাল বোস

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নারীরা
প্রকৃতির সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় বহু ভারতীয় নারীর অসীম অবদান। তাঁরা এগিয়ে এসেছেন, আন্দোলন করেছেন, সফলও হয়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অমৃতা দেবী। অমৃতা দেবী হলেন ভারতের প্রথম নথিভুক্ত মহিলা পরিবেশবাদী কর্মী। প্রায় ৩০০ বছর আগে, অমৃতা দেবী ভারতের রাজস্থানে যোধপুরের মহারাজার জন্য একটি প্রাসাদের পথ তৈরি করার জন্য গাছ কাটার বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁর তৈরি আন্দোলনই বিষ্ণোই আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। এই আন্দোলনেই স্বেচ্ছায় প্রাণ দিয়েছিলেন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
আলিঙ্গন তো গাঢ় ভালবাসারই বহিঃপ্রকাশ। সেই আলিঙ্গনই ছিল চিপকো আন্দোলনের শক্তি। যার সূচনা বিষ্ণোই আন্দোলন থেকেই। গৌরীদেবী হলেন সেই চিপকো আন্দোলনের পুরোধা। গৌরীদেবীর সঙ্গে ছিলেন আর এক নারী বাচনিদেবী। গাছকাটা রুখতে, গাছেদের প্রাণ বাঁচাতে গৌরীদেবী একটি অদ্ভুত কাজ করেন। আন্দোলনকারী মহিলাদের গাছগুলোকে আলিঙ্গন করার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বঞ্চনা অব্যাহত, হুঁশিয়ারি মন্ত্রী শশী পাঁজার, বরাদ্দ কমল আইসিডিএস প্রকল্পে

২৭ জন মহিলার একটি দলের নেতৃত্বে কাঠমিস্ত্রিদের বিরুদ্ধে এইভাবেই বিরোধিতা করেন তিনি। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিরোধের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। চামোলি গ্রামের মহিলারা গাছগুলিকে আলিঙ্গন করতে শুরু করেন যতক্ষণ না কাঠমিস্ত্রিরা হাল ছেড়ে চলে যায়।
ঝাড়খণ্ডের কোঠারি গ্রামের এক আদিবাসী মহিলা বনকর্মী সূর্যমণি ভাগা বনসম্পদ রক্ষায় আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিলেন। একজোট হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ঝাড়খণ্ড বন বাঁচাও আন্দোলনের পুরোধা সূর্যমণি ১৫ জন উপজাতীয় মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্যোগে ব্যয়বহুল সেগুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনার বিরোধিতা করা। কারণ এই উদ্যোগ বননির্ভর সাধারণ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হত না।
প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ হল বন্যপ্রাণীরা। তাদের সংরক্ষণ আর সুরক্ষাই সব নয়। মানুষের সঙ্গে তাদের সখ্যতা, তাদের প্রতি সহানুভূতি, মমত্ব মানবিকতা, করুণা, ভালবাসা, বন্ধুত্ব— সবই থাকা দরকার। এমন মনোভাবনা নিয়ে এগিয়েছিলেন এক নারী। যিনি মানুষ এবং হাতির মধ্যে সম্পর্কে উন্নতির জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি হলেন পার্বতী বড়ুয়া। হাতির রক্ষণাবেক্ষণ করেন যাঁরা বা ফরেস্ট অফিসিয়ালসদের প্রশিক্ষক এবং পরামর্শদাতা ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন পার্বতী। মানুষ এবং হাতির মধ্যে সম্পর্কে উন্নতির জন্য বহুদিন ধরে তিনি কাজ করে চলেছেন। হাতির ভাষা তিনি বোঝেন। হাতির মতো প্রাণিসম্পদকে বাঁচানোর প্রচেষ্টার জন্য সম্প্রতি সম্মাননা পেয়েছেন। কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করেছে।
আসমুদ্রহিমাচলে নারীরই জয়জয়কার— তার প্রমাণ কিঙ্করীদেবী। হিমাচল প্রদেশে পাহাড়ে অবৈধ খনিতে খননকার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই কিঙ্করীদেবী। খননের কাজ পাহাড়কে নষ্ট করে, ধানখেত ধ্বংস করে এবং জল সরবরাহ ব্যাহত করে। খননকার্যে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা দেখে তিনি লড়াই করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন। কিঙ্করীদেবী এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমর্থনে ৪৮ জন খনি মালিকের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। আদালত তাঁর মামলা শুনতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ১৯ দিনের জন্য অনশন পর্যন্ত করেছিলেন। সেই অনশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৮৭ সালে খনির উপর স্থগিতাদেশ আরোপ করা হয়।
পাশাপাশি পাহাড়ে ব্লাস্টিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আদেশও দেয় হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন-পরিবেশের কথা মাথায় রেখে পুলিশ কর্মীদের জন্য ইলেকট্রিক সাইকেল!

প্রকৃতি আমাদের জীবনে জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, বুদ্ধি, ভোগবিলাস, সৌন্দর্য, শিল্প, খাদ্য এবং অনুপ্রেরণা-সহ সবকিছুর উৎস। তাই গাছপালা শুধুমাত্র খাদ্যবস্তু নয় এরা পরিবেশের উৎস। এরাও যত্ন, ভালবাসার অধিকারী। এমন ভাবনা একজন প্রকৃতিপ্রেমী নারীরই হতে পারে। তিনি সুপ্রভা শেশান। একজন পরিবেশবাদী কর্মী যিনি গাছপালা সংরক্ষণ, বাসস্থান পুনরুদ্ধার এবং প্রকৃতি শিক্ষার পুরোধা ব্যক্তিত্ব। এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য ইউনাইটেড কিংডমের শীর্ষ সম্মান হুইটলি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন সুপ্রভা শেশান। তিনি এবং তাঁর দল দিনরাত পরিশ্রম করে প্লান্টেশনের মাধ্যমে রেনফরেস্টের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিলেন যা ইকোসিস্টেম গার্ডেনিং নামে পরিচিত।
ঝাড়খণ্ডের আয়রন লেডি দয়ামণি বারলা— যাঁর লড়াই উল্লেখণীয়। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী এই রমণীর লড়াই ছিল জল, জঙ্গল আর জমি নিয়ে। দয়ামণি চেয়েছিলেন প্রাকৃতিক এই সম্পদের মূল্যে যেন কোনও উন্নয়নের কাজ না হয়। ১৯৯৫ সালে নিজের জন্মস্থান খুন্তিতে কোয়েল করো বাঁধ নিমার্ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর নিজের অঞ্চলের জমি, জঙ্গল এবং নদীর সুরক্ষায় জীবন অতিবাহিত করেছেন।
ভারতীয় নারীর পাশাপাশি বিশ্বের প্রকৃতি সংরক্ষণের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন বিশ্বের নারীরা। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন সমুদ্র বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদ, লেখক রাচেল লুইস কারসন। তাঁর লেখা বই সাইলেন্ট স্প্রিং এবং আরও অন্যান্য লেখায় পরিবেশ বিজ্ঞানের উপর আলোকপাত করে। তিনি দেশ জুড়ে এক পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা করেন যা রাসায়নিক শিল্পের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কীটনাশকের ব্যবহার প্রাকৃতিক পরিবেশে যে ক্ষতি করেছে সেই বিষয় সচেতনতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন রাচেল।

আরও পড়ুন-বাংলাভাগের ষড়যন্ত্র, সুকান্তর ইস্তফার দাবিতে উত্তাল হল লোকসভা

কেনিয়ার রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ প্রফেসর ওয়াঙ্গারি মাথাই তাঁকে অনেকেই পৃথিবীর বৃক্ষজননী বলেন। তিনি তাঁর মহাদেশের প্রথম নারী হিসেবে ২০০৪ পেয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার। ১৯৭৭ সালে গ্রিন বেল্ট মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠা করেন মাথাই। যা কেনিয়ার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ উইমেনস দ্বারা পরিচালিত। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল কেনিয়ার গ্রামীণ মহিলাদের জীবনধারণজনিত বিভিন্ন কঠিন সমস্যার সমস্যাগুলি সমাধান করা। তাঁর গ্রিন বেল্ট মুভমেন্টের অ্যাজেন্ডা বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ রক্ষা এবং মহিলাদের সমান সুযোগ ও অধিকার প্রদান। এই মুভমেন্টের মাধ্যমে মাথাই মহিলাদের গাছ লাগাতে এবং চারা তৈরি করতে, মাটির গুণমান উন্নত করতে, বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও সঞ্চয় করতে, খাদ্য ও কাঠের সরবরাহ বাড়াতে এবং তাঁদের শ্রমের বিনিময়ে কিছু অর্থ উপার্জন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
মেরিনা সিলভা ব্রাজিলের একজন আমাজনীয় অঞ্চলের রেইন ফরেস্ট যোদ্ধা। ১৯৮০-র দশকে রেইন ফরেস্টে সরকারের শোষণের অবসান ঘটাতে প্রচারাভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশের প্রতি সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার হন। মিসেস সিলভা তাঁর পুরো জীবন লড়াই করে কাটিয়েছেন। পেয়েছেন বহু সম্মান।

Latest article