”পহেলগাঁওয়ে মহিলাদের সাহসের অভাব ছিল”, আপত্তিকর মন্তব্য বিজেপির সাংসদের

হরিয়ানার ভিওয়ানিতে আহিল্যাবাঈ হোলকারের ৩০০তম জন্মবার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানে পহেলগাঁওয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই আপত্তিকর উত্তর এল বিজেপির সংসদের তরফে।

Must read

ফের একবার বিজেপির (BJP) নারী বিদ্বেষী মনভাব প্রকাশ্যে। হরিয়ানার ভিওয়ানিতে আহিল্যাবাঈ হোলকারের ৩০০তম জন্মবার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানে পহেলগাঁওয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই আপত্তিকর উত্তর এল বিজেপির সংসদের তরফে। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের কাছে বৈসরন উপত্যকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছে। নিহত হয়েছেন ২৬ জন সাধারণ মানুষ। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় যুবক ছিলেন। পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান সেই স্থানীয় ঘোড়া চালক। পর্যটকদের ক্ষেত্রে জঙ্গিরা ধর্মীয় পরিচয় জেনে হিন্দু পুরুষদের টার্গেট করেছিল বলেই জানা গিয়েছিল। মহিলাদের সামনেই পুরুষদের খুন হতে হয়েছে জঙ্গিদের হাতে। মহিলাদেরকে ছেড়ে দিয়েছিল জঙ্গিরা।

আরও পড়ুন-কালীঘাট থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী

কিন্তু সেই মহিলাদের সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিজেপির সাংসদ। অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করে বিজেপির সাংসদ রামচন্দ্র জাংরা বলেন, পহেলগাঁওতে ওই মহিলারা ভিক্টিম হয়েছিলেন কারণ, তাঁদের মধ্যে ‘বীরাঙ্গনার উদ্দীপনা, উদ্যম কম ছিল”। সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার সময়েই সেদিনের পহেলগাঁওয়ে ঘটনার সময় উপস্থিত মহিলাদের সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। রামচন্দ্র জাংরা বলেন, ”পহেলগাঁওতে আমাদের যে বোনেরা ছিলেন, যাঁদের সিঁথির সিঁদুর ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে যোদ্ধা মনোভাব, উৎসাহ, উদ্যম একেবারেই ছিল না। তাই তাঁরা হাত জোর করে গুলি খেতে দেখেছেন। কিন্তু হাত জোর করলে কেউ ছেড়ে দেয় না। আমাদের লোকেরা ওখানে হাত জোর করে মারা গিয়েছেন।” এদিন অগ্নিপথ স্কিমের প্রশিক্ষণ নিয়েও বিজেপির এই সাংসদ বলেছেন, ”পর্যটকরা প্রশিক্ষণে পাশ করেছিলেন? তিনজন জঙ্গি ২৬ জন মানুষকে মারতে পারে না। ওঁদের উচিত ছিল লড়াই করা। যদি করতেন, তাহলে হতাহতের সংখ্যা অনেকটাই কম হত। আহিল্যাবাঈ হোলকার একজন মহিলা ছিলেন। ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈও তাই। তাঁরা কি লড়াই করেননি?”

আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে পুরকর্মীর ভুলে ‘জ্যান্ত’ অবস্থায় কবরে চাপা পড়ল যুবক

বিজেপি নেতার এহেন মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠেছে। তীব্র নিন্দা করে একবাক্যে সকলেই স্বীকার করছেন জঙ্গিহানার ঘটনার পর থেকে বিজেপি নেতারা ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং শহীদদের ক্রমাগত অপমান করছেন। রাজ্যসভার সাংসদ রামচন্দ্র জাংরার এই লজ্জাজনক বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে ক্ষমতার নেশায় মত্ত বিজেপি এতটাই অসংবেদনশীল হয়ে উঠেছে যে, সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ জওয়ানদের আত্মত্যাগের জন্য নিরাপত্তার গাফিলতির দায় নিয়ে কথা না বলে শহীদ এবং তাঁদের স্ত্রীদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যেখানে তটস্থ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দলমত নির্বিশেষে দেশ থেকে প্রতিনিধিদল বিশ্বের একাধিক দেশে পাঠিয়েছেন সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। সেখানে তাঁরই দলের সাংসদের ফের একবার নারীবিদ্বেষী বিতর্কিত মন্তব্য। তৃণমূলের তরফে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, জঙ্গিহানার প্রতিবাদ এক কণ্ঠস্বরে করা হয়েছিল। যে প্রত্যাঘাত করা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন দুই মহিলা। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন সিঁদুর। এর ঐতিহ্য ও সম্মানের দিকে তাকিয়েই হয়তো কেন্দ্রের সরকারের পক্ষ থেকে এই নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুনছি অবাক হয়ে বিজেপির নেতৃত্ব কীভাবে সিঁদুরকে অপমান করছে।
এর আগে মহিলা অফিসার সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে পরে ক্ষমা চাইতে হয়েছে এক বিজেপি নেতাকে। তাতেও হুঁশ ফেরেনি এদের।

Latest article