দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচলিত ধ্যানধারণাগুলোকে ভেঙেচুরে নিজস্ব আঙ্গিকে অনন্য মাত্রা যোগ করেছিলেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ।
তাঁর গোটা ফিল্মোগ্রাফি বেশ চমকপ্রদ। ১৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১২টি পেয়েছিল বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার এবং বেশ কয়েকটি পেয়েছিল আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। তবে পুরস্কার দিয়ে তাঁকে মাপা একেবারেই যায় না। বাঙালির মনোজগৎকে সেলুলয়েডে বন্দি করে আন্তর্জাতিক দর্শকের দরবারে নতুন রূপে, রঙে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। যা কিছু মুক্তিমুখীন নয় তার বিরুদ্ধ বার্তা দেওয়াই ছিল ঋতুপর্ণের ছবি তৈরি অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশেষত নারীচরিত্র চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে এই শর্ত মেনে চলেছেন সবসময়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ভাঙার প্রয়াসে নারীজীবনের কথক হয়ে উঠেছিলেন ঋতুপর্ণ। রবীন্দ্রনাথের নারীচিত্রায়ণ তাঁর বেশ ভাল লাগত। তাই রবিঠাকুরের উপন্যাস নিয়ে ছবি করতেন। তাঁর সঙ্গে তিনি যোগ করেছিলেন নারীর প্রতি আস্থা। তাঁর ছবির নারী চরিত্রেরা মুক্তিকামী, স্বাধীন, সচেতন, খানিক উন্নাসিক, আবার খানিক কোমল— অবশ্যই তাঁরা মনের চেয়ে, শরীরে যেন একটু বেশি সরব। সাহিত্যের কাঠামো হুবহু নকল করেননি কখনও বরং সেই নারীদেরও নিজের মতো করে গড়েপিটে নিয়েছিলেন তাই ঋতুপর্ণের নারীচরিত্রগুলোই হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রত্যেকটি ছবির প্রাণ।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
চোখের বালি
ঋতুপর্ণের ‘চোখের বালি’ ছবিটা দেখে থাকলে এটা সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে তাঁর চলচ্চিত্রের বিনোদিনী আর রবিঠাকুরের বিনোদিনীর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। সচেতনভাবেই এই ভিন্নতা রেখেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের শেষ থেকে যদি শুরু করি তাহলেই ঋতুপর্ণের বিনোদিনীকে বোঝা যাবে। উপন্যাসে শেষে দেখা যায় সব বাসনা-কামনার অবলুপ্তি ঘটিয়ে বিধবা বিনোদিনী বেনারসে চলে যাচ্ছে। একটু ম্লান সেই বিদায়ক্ষণ। অন্যদিকে ঋতুপর্ণের চলচ্চিত্রে বিনোদিনী স্বাধীন। তিনি চলে যাচ্ছেন স্বেচ্ছায়। সেখানে বিনোদিনী বিদায় নেওয়ার আগে আশালতাকে একটি চিঠি লেখে যেখানে সে তার দেশের কথা বলে। এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ নিজেই বিনোদিনীকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখানে ‘দেশ’ বলতে কিন্তু রাষ্ট্রকে বোঝানো হয়নি, বরং তার সমাজ এবং পরিপার্শ্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। এছাড়া বিনোদিনীর জন্য আমি লালরঙের শাল ব্যবহার করেছি। ১৯০২ সালে ‘লাল’ ছিল কামনার রং, কিন্তু গোটা বিশ শতক আমাদেরকে দেখিয়ে গেল যে, লাল বিদ্রোহের রং-ও বটে। কাজেই ২০০৩ সালে আমি যখন লাল রং ব্যবহার করছি, তাতে কামনার সঙ্গে বিদ্রোহকেও বোঝাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেহেতু গত ১০০ বছর দেখে যেতে পারেননি, কাজেই এখানে আমি তাঁর থেকে এগিয়ে থাকছি।”
হ্যাঁ, এটা সত্য যে সবসময়ই তিনি এগিয়ে থেকেছেন। রবীন্দ্রনাথের বিনোদিনীর মধ্যে যতটা ব্যক্তিত্বের ছাপ, ঋতুপর্ণের বিনোদিনীতে ততটাই যৌনতার ছাপ। সেই যৌন আবেদনময়ীর কাছে রবিঠাকুরের বিনোদিনীর ব্যক্তিত্ব যেন মলিন হয়ে গেছে। তিনি নারীকে চিরাচরিত সামাজিকতার আড়ালে অবদমিত রেখে দিতে চাননি। এই প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন, ‘‘এই উপন্যাসের এমন সমাপ্তি হতে পারে না। অনেক পাঠক চেয়েছিলেন বিনোদিনীর সঙ্গে বিহারীর বিয়ে হোক। আমি মনে করি, আজ থেকে ৩০ বছর আগে হলে তা সম্ভব ছিল। কারণ তখন বিধবা বিয়েকে উৎসাহিত করা হচ্ছিল, এ নিয়ে প্রচার চলছিল। সবাই তখন মনে করত, আরেকটি বিয়ে হলে বিনোদিনী আবার জীবন শুরু করতে পারবে। কিন্তু আজকের অবস্থা ভিন্ন। এখন নারীর জীবন চালানোর জন্য কোন পুরুষের শেষ নাম, উপাধি বা কোনও ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। বিনোদিনী আগে বিয়ে করেছে এবং বিয়ে তাকে কিছুই দেয়নি, এতে তার কোনও সাহায্যও হয়নি। একা থাকাটাই তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।”
এমন স্বচ্ছ, স্বাধীন মনোভাবাপন্ন ছিলেন ঋতুর বিনোদিনী।
রবীন্দ্রনাথের বিনোদিনী শেষ পর্যন্ত জয়ী হননি। ঋতুপর্ণের বিনোদিনীও জয়ী হননি কিন্তু এই বিনোদিনী ছিলেন অনেক বেশি আলোকপ্রাপ্তা, যার একা জীবন কাটানোর সিদ্ধান্তে ছিল সদ-ইচ্ছে এবং সাহস দুই-ই।
আরও পড়ুন-প্রতিবাদ হোক সর্বত্র, বাংলার ভাবমূর্তি নষ্টে রিলিজ ছবি
বাড়িওয়ালি
নারীর মনস্তত্ত্ব ঋতুপর্ণর মতো করে বোধ হয় কোনও পরিচালক বুঝে উঠতে পারেননি। তাঁর ‘বাড়িওয়ালি’ বনলতার ক্ষেত্রে এটাই প্রমাণ হয়।
ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী এক মধ্যবয়সি অবিবাহিতা নারী। তাঁর একাকিত্ব, মানসিক দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েন, যৌন অবদমন, আচরণগত বৈষম্য, ঈর্ষা, অসহায়তা, অবদমিত, কামনা বাসনার আখ্যান ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘বাড়িওয়ালি’ ছবিটি। এই ছবির বনলতার মতো একটি চরিত্রর জন্য তিনি ভেবেছিলেন কিরণ খেরকে। অনেকেই হতে পারতেন কিন্তু কিরণ খের যতটা খাপ খাইয়েছেন নিজেকে চরিত্রটার সঙ্গে ততটা কেউ পারতেন কি না সন্দেহ। এখানেই ছিল পরিচালকের মুনশিয়ানা।
বাড়িওয়ালি প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা উক্তি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বলতে দ্বিধা নেই আমি পুরুষতন্ত্রের ঘোর বিরোধী। ‘বাড়িওয়ালি’তে কিরণ খের অভিনীত বনলতা চরিত্রের সঙ্গে ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’ চলচ্চিত্রের হ্যারির কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই… যদিও একজন নারী এবং অন্যজন পুরুষ। পুরুষতন্ত্রের শৃঙ্খলাবদ্ধ শক্তি এবং রাজনীতির বিপরীতে দু’জনেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।” অর্থাৎ নারী এবং পুরুষকে আলাদা ভাবে দেখেননি তিনি।
চলচ্চিত্র পরিচালক দীপঙ্কর সেনগুপ্তকে প্রথম দর্শনেই ভাল লেগেছিল বনলতার। তাই সে তাঁর বাড়িটির একাংশ ছবির শুটিংয়ের জন্য ফিল্ম ইউনিটকে ভাড়া দেন। দীপঙ্করকে দেখে মধ্যবয়সি বনলতার মরুময় জীবনে প্রাণসঞ্চার হয়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁদের। এই একপেশে দুর্বলতা আর পরিণতিহীন প্রেমের অনুভূতি বুঝতে অক্ষম বনলতা সেই টিমটিম করে জ্বলতে থাকা আশার আলোটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে। অথচ ছবি তৈরির শেষে দীপঙ্কর তাঁর চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেওয়ার তাগিদ অনুভব করে না। দিনের শেষে সে বাড়িওয়ালি পরিচয়েই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়ে যায় বনলতা। এক মধ্যবয়সি নারীর মনস্তত্ত্ব, তার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অবদমিত যৌনতা, প্রেম, ঈর্ষাকে একটু একটু উন্মোচিত করার যে কৌশল তিনি করেছেন ছবি জুড়ে তাতেই অনন্য একটা চরিত্র হয়ে উঠেছে সাধারণ, সাদামাটা ‘বাড়িওয়ালি’ বনলতা। বিয়ে না হয়েও বৈধব্যের জ্বালা বহন করেছে ঋতুপর্ণের বনলতা। দীপঙ্করের আগমনে বনলতার দীর্ঘ কুমারী জীবনের চেতন এবং অবচেতন স্তরে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তাঁর পরিবেশনেই রয়েছে ঋতুপর্ণ এবং বনলতার সাফল্য।
দহন
কয়েকজন বখাটে কাপুরুষের অপরাধে ঘটে যাওয়া একটি সাময়িক দুর্ঘটনা নারীর জীবনকে কীভাবে বিবর্ণ এবং বিষণ্ণ করে দিতে পারে, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীর লড়াই পুরুষশাসিত সমাজে কীভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, তার নিখুঁত চিত্রায়ণেই ‘দহন’ চলচ্চিত্রের প্রধান সার্থকতা। ধর্ষণ আর শ্লীলতাহানির ঘটনা এই সমাজে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এগুলো আমঘটনায় পরিণত হয়েছে। নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করায় আগ্রহ না থাকলেও এসব ঘটনার শিকার নারীদের নিয়ে পত্র-পত্রিকা এবং চারপাশের মানুষের একটি কুৎসিত আগ্রহ লক্ষ করা যায়। সেই অশোভন ও অনাকাঙ্ক্ষিত আগ্রহ যেমন সেই নারীর স্বাভাবিক জীবনকে দুঃসহ করে তোলে তেমনই তাঁর পাশে দাঁড়ানো এক সাহসী নারীর জীবনকেও দুঃসহই করে তোলে এই অন্তরদর্শনেই দুই নারীর লড়াইকে দেখিয়েছিলেন পরিচালক তাঁর ‘দহন’ ছবিতে। শুধু তাই নয় শান্ত, সাংসারিক জীবনের ঘেরাটোপে ঘটতে থাকা প্রতিনিয়ত ম্যারিটাল রেপ-এর মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছে ঋতুপর্ণের নারীচরিত্র। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অন্যায় প্রতিবাদে
অক্ষম দমে যাওয়া নারীকে যেমন দেখিয়েছেন তেমনই আবার প্রচলিত কুসংস্কার বা অন্যায় ধ্যানধারণার কবলে পড়ে থাকা নারীকে বের করেও আনতে চেয়েছিলেন সবসময়।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে নাবালিকাকে ধর্ষণ, অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন ক্ষিপ্ত জনতার
‘দহন’ ছবিটা তাই যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীর দহনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং এটি হয়ে উঠেছিল এই সমাজের নির্মম প্রতিচ্ছবি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কীভাবে বলি হয়ে যায়, তার নির্মম বহিঃপ্রকাশ এই ছবির নারীচরিত্রেরা। আবার ঝিনুকের মতো এক সাহসী নারীর লড়াইটাও রেখেছিলেন। ঝিনুক এমন একটি মেয়ে যে স্রোতের বিপরীতে ভাসতে জানে, ন্যায় আর সত্যের বিচার জানে। স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে সে জোয়ার আনে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মেয়েদের ভয় কাটিয়ে উঠতেই হয় সামাজিক বন্ধন উপেক্ষা করে, প্রতিবাদ করতে হয়, সংসার ভেঙে যাওয়া, একা থাকা— এ-সব কিছুর
ভয়ই যে কাটিয়ে উঠতে হয় এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি বারবার তাঁর নারীচরিত্রগুলোর মাধ্যমে।
শুভ মহরৎ
ঋতুপর্ণের নারীচরিত্রের কথা বলতে গেলে ‘শুভ মহরৎ’ ছবির কথা বলতেই হয়। আগাথা ক্রিস্টির ‘mirror cracking from side to side’ কাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্রায়িত এই ছবি ভীষণভাবেই নারীকেন্দ্রিক। নারীমনের চিরন্তন অন্তর্দ্বন্দ্ব এখানে সুস্পষ্ট। যেখানে এক নারীর মাধ্যমে ঋতুপর্ণ নিজেই দিয়েছিলেন সেই ইগো আর সুপারইগোর কনফ্লিক্টের বার্তা। তাই ‘একসঙ্গে দুজনকে ভালবাসা যায় না’ এই সাধারণ জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে ভয়ঙ্কর দ্বিধার মুখে পড়তে হয় আমাদের। যে প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজতে চাই না সেই উত্তরের মুখে দাঁড় করিয়েছেন তিনি তাঁর সৃষ্টি করা দুই নারীকে। শর্মিলা ঠাকুরের অর্থাৎ পদ্মিনীর মতো সংবেদনশীল নারীচরিত্রকে আমরা ভেঙে যেতে দেখি ক্লাইম্যাক্সের তীব্রতায়। আবেগের দোলাচলে যখন তাঁর হৃদয় দুমড়েমুচড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে তখনও তিনি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। পদ্মিনী এবং রাঙা পিসিকে নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন পরিচালক। সেকেলে বাঙালি বিধবা কোনও এক গৃহবধূ যদি ব্যোমকেশ বা ফেলুদার মতো ঘরে বসে কেস স্টাডি করে আবার রহস্যের উন্মোচনও করে তা ভাবতে বেশ লাগে সেই এক অনবদ্য ক্ষমতাসম্পন্ন নারীকে তিনি তৈরি করলেন এই ছবিতে। রাখি গুলজার তথা রাঙা পিসির অসাধারণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, দূরদৃষ্টি এবং স্মৃতিশক্তি, ক্ষুরধার বুদ্ধি যে কী না কাজ করতে, খাবার খেতে, সেলাই করতে করতে সমাধান করে ফেলেন রহস্যের। ভাইঝি মিলি বা রিপোর্টার মল্লিকা বা নন্দিতা দাসের চরিত্রটি কিন্তু যুগের চেয়ে মন মানসিকতায় অনেকটাই এগিয়ে।
আরও পড়ুন-কলেজে-কলেজে প্রতিবাদ
উনিশে এপ্রিল
ঋতুপর্ণের সবচেয়ে প্রিয় নারী মনে হয় সরোজিনী আর অদিতিই। এমন রক্তমাংসে গড়া চরিত্র বোধহয় খুব কমই দেখতে পেয়েছি আমরা। মা এবং মেয়ের সম্পর্কে টানাপোড়েন, ইগোর লড়াই, ঈর্ষা, রাগ, বিরক্তি, বন্ধুত্বের এক অনবদ্য রসায়নের গল্প ‘উনিশে এপ্রিল’। এই ছবিতে একই নারীকে কী মুনশিয়ানায় চারটে ফ্রেমে ধরেছিলেন পরিচালক! সেই নারী আসলে একজনই শুধু তাঁদের সত্তাগুলো আলাদা। তার নাম সরোজিনী। একজন নামকরা নর্তকী যাঁর মধ্যে ছিল গভীর শিল্পীচেতনা। শিল্পের বাইরে নিজের আলাদা কোনও অস্তিত্বই নেই। তথাকথিত সামাজিকতাকে অস্বীকার করে চলা, আপসহীন সেই সরোজিনীই আবার একজন স্ত্রী এবং মা হয়ে পদে পদে নীরব পিতৃতন্ত্রের শিকার। নব্বইয়ের দশকের রক্ষণশীল বাঙালি পরিবারের কাছে সরোজিনী একটু বোহেমিয়ান, পরিবার করতে না চাওয়ার সমালোচনায় দগ্ধ হলেও এই শতকের মানুষের কাছে সরোজিনীর ইচ্ছের, অনিচ্ছের স্বীকৃতি রয়েছে। আর অন্যদিকে শিল্পী সরোজিনীর জমকালো রুটিন জীবন, খ্যাতির বিড়ম্বনা, সংসারের সুতোর টানের সঙ্গে বোর্ডিং স্কুলে বড় হওয়া মেয়ে অদিতির বাবার আদর্শের প্রতি টান কিংবা মায়ের খ্যাতির ছায়ায় বড় হতে না চাওয়ার তীব্র প্রত্যাশা বাস্তবের অদিতিকে গড়পড়তা বাঙালির অনেক কাছের করে দিয়েছে। মা এবং মেয়ের অসাধারণ সম্পর্কের গল্প বুনেছেন ঋতুপর্ণ। এই ছবির সেরা প্রাপ্তি অবশ্যই অপর্ণা সেন এবং দেবশ্রী রায় জুটি।