সাহিত্যের অঙ্গনে মহিলা সাহিত্যিক

নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলা সাহিত্যে বড় একটা জায়গা দখল করে নিয়েছেন লেখিকারা। এখন যে লেখিকারা বাংলা সাহিত্যে তাঁদের সাহিত্য সৃষ্টি করে চলেছেন, তাঁরা কীভাবে দেখছেন বাংলার মহিলা সাহিত্যিকদের? এমনই দুই জনপ্রিয় সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায় ও অর্পিতা সরকার-এর সঙ্গে কথা বললেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব-১)

Must read

বাংলা সাহিত্যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। আঠারো শতকের মধ্যভাগে বাংলা সাহিত্যে লেখিকাদের আবির্ভাব ঘটে। বাংলা সাহিত্যকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়; প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০), মধ্যযুগ বা অন্ধকার যুগ (১২০০-১৮০০) ও আধুনিক যুগ (১৮০০- এখন পর্যন্ত)। মধ্যযুগ অনেকেই অন্ধকার যুগ বলে দাবি করেন। কারণ এই যুগে রচিত কোনও সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে সাহিত্যে নারীদের ভূমিকা খুব একটা পিছিয়ে নেই। সেই সময় যেসব মহীয়সী নারী ঘরে ঘরে আলোর প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের দেখানো সেই পথে আজও নারীরা তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।

নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলা সাহিত্যে বড় একটা জায়গা দখলে নিয়েছেন নারী লেখকরা। মূলত আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকেই সাহিত্যে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা।

স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য মহিলা সাহিত্যিক। ১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস দীপনির্বাণ প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বর্ণকুমারী দেবীই ছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক। স্বর্ণকুমারী দেবী একাধিক উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন।

বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ছিলেন সরলা দেবী। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রজা স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ হল ‘নববর্ষের স্বপ্ন’, ‘জীবনের ঝরাপাতা’, ‘শিবরাত্রি পূজা’। তাঁর লেখনী আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিল।

বাংলা সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টি উপন্যাস ‘ন হন্যতে’-এর স্রষ্টা মৈত্রেয়ী দেবী সাহিত্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন । এমনকী সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার পান। তাঁর বই ইংরেজি সহ বহু বিদেশি ভাষাতে অনুবাদ করা হয়েছিল।

বাংলার এক প্রথিতযশা মহিলা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi)। আদিবাসী- মুন্ডা- শবর সম্প্রদায়কে নিয়ে তিনি তাঁর উপন্যাস রচনা করেছেন, যা মানুষকে নাড়া দিয়েছিল। ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘হাজার চুরাশির মা’ এর মতো অসংখ্য কালজয়ী উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশের বহু ভাষাতে তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে।

বাঙালির নারী জাগরণের পথিকৃৎ ছিলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন । এই প্রাবন্ধিক ঔপন্যাসিক সাহিত্যিক একাধারে ছিলেন চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক। তাঁর রচিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’ ছিল নারীবাদী সাহিত্যের এক ক্লাসিক্যাল নিদর্শন।

বাংলায় প্রথিতযশা ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক ছিলেন আশাপূর্ণা দেবী। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হল ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’, ‘বকুলকথা’। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন বিশেষ করে মহিলাদের জীবন ও তাদের মনস্তত্ত্বের প্রকাশ ছিল তাঁর লেখার মূল বিষয়। দেবারতি মুখোপাধ্যায়। যাঁরা বাংলা বই পড়তে ভালবাসেন তাঁদের কাছে নামটাই যথেষ্ট।

তিনি একজন ইন্সপিরেশনাল পার্সোনালিটি। যিনি একাধারে মোটিভেশনাল স্পিকার অন্যধারে একজন অসামান্য লেখিকা। আবার কর্মজগতে তিনি একজন WBCS! তিনি (Mahasweta Devi) ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং, তারপর ফিন্যান্সে MBA। প্রথমে কিছুদিন Cognizant এ চাকরি করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। চারবছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন ব্রাঞ্চে জয়েন্ট ম্যানেজার ছিলেন। ২০১৮ তে রাজ্য সরকারে যোগ দেন WBCS Officer হিসেবে। কিন্তু মানুষ এখন তাঁকে চেনেন একজন জনপ্রিয় লেখিকা হিসেবে। ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ঈশ্বর যখন বন্দি’। আর তারপর? অঘোরে ঘুমিয়ে শিব, গ্লানির্ভবতি ভারত, নরক সংকেত, দিওতিমা, হারিয়ে যাওয়া খুনিরা, বটকৃষ্ণবাবুর বুলেট, নীলাম্বরের খিদে, দাশগুপ্ত ট্রাভেলস, নারাচ এবং সম্প্রতি লিলি। একাধিক জনপ্রিয় পুরস্কার ও বেস্ট সেলারের খেতাব।

তিনি বলছেন মেধার সঙ্গে সাহিত্যের সেভাবে কোনও সম্পর্ক নেই। বরং তিনি বলছেন, সাহিত্য সৃষ্টির জন্য সবার আগে দরকার ভাষার ওপর দখল, লেখকোচিত মন এবং কল্পনাশক্তি। তার সঙ্গে মেধার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা এমন অনেক লেখক-লেখিকাকে জানি দেশে এবং বিদেশে যাঁরা সেভাবে ডিগ্রির অধিকারী না হয়েও কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। ছোট থেকে যেমন তিনি অনেক বই পড়তেন তেমনই নিজে হাতে লিটিল ম্যাগাজিন বের করতেন। এমনকী সর্বভারতীয় প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বহুবার তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করছেন যে মধ্যবিত্ত পরিবারে কেরিয়ার গড়ার জন্য একটা চাপ থাকে এবং ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার একটা যে প্রবণতা সেটা হয়তো কিছুদিন তাঁকে লেখার জায়গা থেকে বিরত করেছিল কিন্তু পড়া তাঁর থামাতে পারেনি। তিনি এখনও প্রচুর বই পড়েন এবং বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালবাসেন।

ব্যাঙ্কের উচ্চ পদে চাকরি করার সময় তিনি দেখেছেন ব্যাঙ্ক দেশের মধ্যে এমন একটা সেক্টর যেখানে বিভিন্ন গ্রামের তৃণমূল স্তরে মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ থাকে এবং সেখান থেকে তিনি যা আহরণ করেছেন তার প্রভাব কিন্তু তাঁর লেখার মধ্যে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশের নোটবন্দি সময়ের কথা বলেন। জানান, এ সময় তিনি একটি ব্যাঙ্কের জয়েন্ট ম্যানেজার ছিলেন এবং দেখেছেন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। সে যেন এক অন্য পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি। বর্তমানে রাজ্য সরকারের যে দফতরের দায়িত্বে আছেন সেখানেও কিন্তু তৃণমূল স্তরের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আছে এবং যা তাঁর লেখার অন্যতম অনুপ্রেরণা। তিনি একটি বড় উপন্যাস লেখেন দাশগুপ্ত ট্রাভেলস।

তিনি বলেন এখনকার প্রজন্মের প্রচুর ছেলেমেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সঙ্গে যুক্ত। এবং আমি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় থাকাকালীন দেখেছি তাদের চাওয়া-পাওয়া-হতাশা। তা নিয়ে আমি উপন্যাস লিখেছি। আমার মনে হয় একটা ভাল উপন্যাস লেখার জন্য সবার আগে দরকার বিভিন্ন ধরনের বহুস্তরীয় অভিজ্ঞতা। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জীবনবোধের কথাই আমার লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, সাহিত্যে সীমারেখা তো আছে অবশ্যই কারণ, আমি এমন কিছু লিখতে পারি না যা আমার পাঠককে অবতরণের পথে নিয়ে যায়। আমার সব সময়ই লক্ষ্য থাকে আমার লেখা যাতে পাঠককে উত্তরণের পথে নিয়ে যায়। আমি যখন কোনও লেখা পড়ি তখনও সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ি। তিনি স্পষ্ট জানান, তাঁর লেখার লক্ষ্য থাকে এখন তাঁর লেখা কত বিক্রি হল, পাঠকদের কাছে কতটা মুখে মুখে ফিরছে তা নয়। বরং, তাঁর মৃত্যুর ৩০-৪০ বছর পরে যদি সেই সময় তাঁর লেখা সমাদৃত হয় পাঠকের কাছে তবে তাঁর সৃষ্টি অনেক বেশি সার্থক। কারণ, এখন সময় উল্কার গতিতে বদলাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। বলেন, আগে মানুষ বিনোদনের একটা অঙ্গ হিসেবে বই পড়তেন কিন্তু এখন মানুষের কাছে বিনোদনের কোনও অভাব নেই। বর্তমানে সাহিত্যকে এতকিছু বিনোদনের সঙ্গে লড়তে গেলে কিন্তু অবশ্যই যুগোপযোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এখনকার পাঠক কী চাইছেন সেটা বোঝা জরুরি। মননবোধ সৃজনশীলতার পাশাপাশি এখনকার পাঠক কেন অন্যান্য বিনোদন ছেড়ে আমার বই পড়বেন এটা বুঝতে হবে। এবং এরই তিনি জানিয়েছেন, ফিকশন নয় নন-ফিকশন বই পড়তে তিনি বেশি পছন্দ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, আলাপন মুখোপাধ্যায়ের লেখার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, এঁদের লেখার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে এবং আমি সেটাই চেষ্টা করি।

অর্পিতা সরকার। জন্ম নবদ্বীপের কাছে সমুদ্রগড়। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। তারপর চাইল্ড ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টে চাকরি পান। স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হলেও লেখালিখির সূচনা ২০১৬ সালের শেষের দিকে। ফেসবুকে নিজস্ব পেজ ‘এক চিলতে রোদ্দুরে’ নিয়মিত লেখালিখি করেন। প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের বইমেলায়। প্রথম বই ‘দেখা না দেখায় মেশার’ সাফল্যের পর একে একে প্রকাশিত হয়, ‘কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর’, ‘নির্বাচিত গল্প-১’, ‘প্রাণের আলাপ’, ‘নীরবে তোমায় দেখি’, ‘সে ছিল অন্তরালে’ ‘চেনা অচেনার ভিড়ে’ ‘নির্বাচিত গল্প-২’, ‘নির্বাচিত গল্প-৩, ‘অনুভবে তুমি’, ‘খেলাঘরের ডাকে’ প্রতিটা বইই পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

এবারের বইমেলায় লেখিকার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে, একটি লালমাটি থেকে মর্নিং ওয়ার্ক সিরিজ। নিশ্চয়ই ভাবছেন কী আছে এই লেখায়? প্রতিদিন আপনারা যাংরা মর্নিং ওয়াকে বের হন সেই সময় নানান টুকরো-টুকরো ঘটনা ঘটে। সেই সব অভিজ্ঞতার খণ্ড চিত্রের এক অসাধারণ সংকলন এই লেখনী। এবং দীপ প্রকাশন থেকে ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’ নামে আরও একটি লেখা, যাতে ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ানোর পরের অভিজ্ঞতার কথা। অর্পিতা বলছেন, ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ানোর পরে আমরা অনেকেই লক্ষ্য করি কোলে বাচ্চা নিয়ে সাহায্যের আশায় ছুটে আসেন একাধিক মহিলা। সত্যি কি সবার কোলে থাকে নিজের শিশু? বাস্তব বলছে, না। অনেক সময় দেখা যায় অন্যের শিশু, চুরি করা অথবা পাচার হওয়া শিশুরাও থাকে সেই দলে। সেই নিয়েই অর্পিতা সরকারের ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’ নজর কেড়েছিল এবারের বইমেলার পাঠক-পাঠিকাদের কাছে।

কোনও লেখা যখন পাঠক-পাঠিকা কাছে জনপ্রিয়তা পায় তখন কি সত্যি সেই লেখার গুণগত মানের জন্যই তার জনপ্রিয়তা পায়? এই প্রশ্নের উত্তরে কিন্তু অর্পিতা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম লেখেন এবং সেখান থেকেই তাঁর উত্থান। কোনও পত্র-পত্রিকায় তার আগে তিনি লেখেননি। তিনি জানান, ২০১৬ তে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ ‘এক চিলতে রোদ্দুর’ তিনি লিখতে শুরু করেন এবং অচিরেই ধীরে ধীরে তা পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। ভাবতে পারেন যিনি ২০১৬ তে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের একটি পেজে লেখা শুরু করলেন বর্তমানে তার সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ! লেখিকা বলতে থাকেন, যখন আমি আমার পেজে লিখতে থাকি এবং ৪০ হাজার মেম্বার হয়ে যায় তখনই প্রথম বিভা প্রশাসন থেকে আমাকে লেখার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে এখানেও কিন্তু তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন পেজ-এর অভাব নেই। প্রচুর লেখক-লেখিকা তাঁদের নিজস্ব পেজে লিখে চলেছেন। সেখান থেকে জনপ্রিয়তা পেতে গেলে অবশ্যই লেখার গুণগত মানের কিন্তু দরকার। এই এই বিষয়েও তাঁর স্পষ্ট যুক্তি, কেন এত পেজ-এর মধ্য থেকে এত লেখার মধ্যে থেকে আপনার লেখা পাঠক-পাঠিকারা পড়বেন। যদি আপনার কোনও লেখার প্রকাশক থেকেও থাকেন তার যদি গুণগত মান ঠিক না থাকে তবে কিন্তু তা পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না এবং মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। আমার ১৫তম বই ট্রাফিক সিগন্যাল। কিন্তু এই দু’মাসের মধ্যে ৩০০০ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে এটা বলব যে অবশ্যই কোয়ালিটি তো নিশ্চয়ই আছে লেখার মধ্যে। এর আগেও তিনি এক পুলিশ অফিসার এসআইকে নিয়ে লিখেছেন। বিষয়টি পুলিশ অফিসার হলেও লেখিকা নিজে কী বলছেন শুনুন। তাঁর উপন্যাসের মূল চরিত্র, যিনি একজন এসআই তিনি পুলিশ হতে পারেন কিন্তু আদতে তিনি গোয়েন্দা। এবং তিনি কিন্তু একটি শিশুর হারিয়ে যাবার মূল কারণটা খুঁজে বার করতে পারেন। আসলে তিনি কিন্তু শুধু থ্রিলার লেখাই লেখেন না। তিনি নিজে বলছেন, তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু সামাজিক প্রবলেম। বলেন, আমি দুটো থ্রিলার লিখলাম, একটা ‘খেলাঘরের ডাকে’। সেখানে তিনটি উপন্যাস আছে একটা ঐতিহাসিক একটা মনস্তাত্ত্বিক এবং একটা থ্রিলার।

এখনও পর্যন্ত পনেরোটা বই লিখেছেন। যার মধ্যে অধিকাংশ বই প্রেম, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক প্রবলেমের ওপর।

তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমার বড় মাসি, দিদা, এমনকী আমার মাও খুব ভাল কবিতা লেখেন। কিন্তু এমন কখনওই মনে করবেন না যে আমার পরিবারে এরা লিখছে বলেই এদের দেখে আমার লেখার ইচ্ছে তৈরি হয়েছে বা মনে হয়েছে আমারও লেখা উচিত।

২০১৫ থেকে আমি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পেজে অল্পবিস্তর লিখতাম। তারপর যখন দেখেছি যে পাঠকদের আমার লেখার প্রতি আগ্রহ আছে, তখন ২০১৭ তে আমি আমার নিজের পেজে লেখা শুরু করি।

আমি লিখতে হবে বলে, লেখিকা হতে হবে বলে লেখা শুরু করেছি এমন কোনও বিষয় কিন্তু নয়। এই মুহূর্তে আমি নবকল্লোল, শুকতারা, আজকাল, কিশোর ভারতী এরকম নানা বাণিজ্যিক পত্রিকায় লিখছি বটে। কিন্তু নিজেকে আমি ফেবু লেখিকা বলতেই বেশি ভালবাসি। কারণ, আমি এখনও মনে করি ফেসবুক না থাকলে আমার মতো লেখিকাকে আজকে পাঠক চিনত না জানত না, আমার লেখা পাঠকদের কাছে এতটা জনপ্রিয়তা পেত না।” নারায়ণ সান্যাল, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা পড়তে যেমন তিনি ভালবাসেন এবং নিয়মিত পড়ে থাকেন, তেমনই এই প্রজন্মে যেসব লেখক-লেখিকা লিখেছেন তাঁদের মধ্যে বিনোদ ঘোষালের লেখা ছোটগল্প তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। ভাল থাকুন অর্পিতা সরকার। আরও নতুন নতুন সাহিত্য সৃষ্টিতে বাংলার পাঠকদের সমৃদ্ধ করুন।

Latest article