“আজকের তারিখটা লিখে রাখুন। ঠিক দেড় বছর পর এখানে সরকার গড়বে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০২৩-এ ত্রিপুরায় সরকার গঠন করব। সেই লক্ষ্যেই আজকে স্থির করে দিয়ে যেতে চাই”। ত্রিপুরায় সাংবাদিক বৈঠক করে সাফ জানিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-গণতন্ত্র! ত্রিপুরাবাসী বিচার করবেন: বাধা পেরিয়ে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো অভিষেকের
সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটায় আগরতলার মাটিতে পা রাখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির যাওয়া পর্যন্ত একাধিক বাধা পেয়েছেন তিনি। এরপর সমস্ত বাধা কাটিয়ে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক। বলেন, যা বলার বলবেন চারটের সাংবাদিক বৈঠকে। এদিন তিনি বলেন, “এই স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে আজ থেকে আমাদের লড়াই শুরু হল, এটা অনেক দিন চলবে”। এরপরেই এদিন তার ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “বিজেপি নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে অথচ মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়িতে বাঁশ-লাঠি-রড দিয়ে হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, “অতিথি দেব ভব” বলার পরে যে কাণ্ড ঘটিয়েছে সেটা সবাই দেখছেন। “মা ত্রিপুরেশ্বরী কাছে আমি যাতে পৌঁছতে না পারি, তার সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে আটকানো যায়নি, আমি মন্দিরে পুজো দিয়েছি। আমার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৩ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের পিঠে, কোমরে চোট লেগেছে”। এরপরেই সুর চড়ান অভিষেক। বলেন, “আমরা সিপিএম নই, যে চিমটি কাটলে বসে যাব। তৃণমূলকে যত তাতাবে, তত শক্তিশালী হবে”।
অভিষেক আরও বলেন, ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় তাঁদের সাংগঠনিক কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এদিন থেকে তৃণমূল সেখানে পা রাখল এবং দেড় বছরের মধ্যে সেখানে সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। একইসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘর ভাঙানোর চেষ্টা তাঁরা করছেন না। তবে, ত্রিপুরার অনেক বিধায়কই কলকাতায় তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁদের নাম বললে তাঁরা অস্বস্তিতে পড়বেন বলেই সাংবাদিক বৈঠকে সেটা বলতে চাননি অভিষেক। তবে, তিনি বলেন, দল ভাঙানোর খেলায় নামলে কয়েকদিনের মধ্যেই ত্রিপুরায় সরকার ফেলে দিতে পারত তৃণমূল। অভিষেক জানান, ত্রিপুরা হৃতগৌরব উদ্ধার করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়বে তৃণমূল।
আরও পড়ুন-ত্রিপুরায় গিয়ে ‘আক্রান্ত’ অভিষেক, গাড়িতে হামলার ভিডিও নিজেই পোস্ট করলেন টুইটারে
এরপরই ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বারবার ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলে বিজেপি। অথচ ত্রিপুরায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। উল্টে ত্রিপুরার মানুষের শিক্ষার যে গর্ব ছিল তা তাদের মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ধুলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, কেন ত্রিপুরার মানুষকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেতে হয়? ডবল ইঞ্জিন সরকার কী করছে? ত্রিপুরায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তা পালন করছে বিপ্লব দেবের সরকার? ত্রিপুরায় নারী সুরক্ষা বলে কিছু আছে? ত্রিপুরার মানুষের ভালোমন্দ এদের কাছে গুরুত্ব পায় না। “ত্রিপুরায় ডবল ইঞ্জিন সরকার ব্যর্থ। ত্রিপুরার মানুষকে এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে।”
পাশাপাশি অভিষেক বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সরকার গঠন হওয়ার তিনমাসের মধ্যেই তা পালন করেছেন। “তমসাচ্ছন্ন ত্রিপুরায় উন্নয়নের সরকার গড়বে তৃণমূল।” এরপরই সরাসরি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৫ দিন পর যখন আবার আসব তখনও পারলে আমাকে আটকে দেখাবেন। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে গেলাম, আপনার দিল্লির নেতারা যতবার আসবে, তার থেকে পাঁচগুণ বেশিবার আসব ত্রিপুরায়। এবার থেকে মাসে তিন-চার বার আসব।” অভিষেকের মতে, “২০১৬-তে যখন ত্রিপুরায় এসেছিলাম- মানিকবাবুদের সরকার ছিল। তখন এত খারাপ পরিস্থিতি ছিল না”।
আরও পড়ুন-ত্রিপুরায় গিয়ে ‘আক্রান্ত’ অভিষেক, গাড়িতে হামলার ভিডিও নিজেই পোস্ট করলেন টুইটারে
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দুয়ারে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, আর ত্রিপুরায় রয়েছে দুয়ারে গুন্ডা- এই মন্তব্য করে অভিষেক বলেন, “ত্রিপুরায় চমকানি-ধমকানি আর চলবে না। সমাজ বিরোধীদের খেলা শেষ, আজ ত্রিপুরার মানুষের খেলা শুরু। ত্রিপুরায় বিরোধী নেই বলেই বিজেপি অত্যাচার করতে পারছে। আজ থেকে এর ইতি হল”। রাজনৈতিক মহলের মতে বিপ্লব থেকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে পরোক্ষে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার বার্তায় দিলেন অভিষেক।