নকীব উদ্দিন গাজী, ফলতা: একটা সময় ছিল যখন দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে ফলতার জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠে বসত যাত্রা প্রতিযোগিতা। সে কী উন্মাদনা! কথিত রয়েছে, চারণকবি মুকুন্দ দাসও নাকি এসেছিলেন এই দেব সরকার পরিবারের যাত্রাপালায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিন বদলেছে। নেই সেই যাত্রাপালার প্রতিযোগিতা। কিন্তু এখনও নবমীর রাতে কবিতায়, নাচে-গানে-নাটকে, আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা এবং অতিথিরা।
আরও পড়ুন-যাদবপুরের নিহত পড়ুয়ার বাড়িতে গেলেন দেবাংশু
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই প্রতিফলিত হয় জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য, আভিজাত্য। কলকাতার ছাতুবাবু-লাটুবাবুদের বংশধর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার দেব সরকার পরিবার। সেই সূত্রেই মালা মণিরামপুরে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁরা। জমিদারি বিস্তার করেছিলেন বিহারীলাল দেব সরকার। ফলতা সহ বিভিন্ন জায়গায় ধান-চালের ব্যবসা করে ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন তাঁরা। বিহারীলাল দেব সরকারের নাতি কালিকৃষ্ণ দেব সরকার শুরু করেছিলেন মা দুর্গার আরাধনা। তখন থেকেই এই সুবিশাল জমিদারবাড়ির দুর্গাদালানে হয়ে আসছে উমার আরাধনা। সেই সুবিশাল জমিদারবাড়ির এখন ভগ্নপ্রায় দশা। আগাছায় ঢেকেছে প্রাসাদ। একটু একটু করে খসে পড়ছে চুন-সুরকির গাঁথনি। তবে পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে জমিদারবাড়ির বিভিন্ন জায়গা নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-কোচবিহারের রাস্তায় জয় রাইড
জমিদারবাড়ির পুজো এ-বছরে ২৭৯ তম বর্ষে পা দিল। সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিনই মায়ের সামনে হয় এই ছাগ বলি। একটা সময় বিশাল বিশাল থালায় সাজানো হত ৭ মন-৯ মন চালের নৈবেদ্য। তবে এখন বহর কমেছে। মায়ের বোধন থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত সমস্ত কাজই বাড়ির মহিলারাই সামলান। নাড়ু তৈরি থেকে শুরু করে কলাবউ চান, সন্ধিপুজো— সমস্ত কিছুই থাকে তাঁদের দায়িত্বে। দূরত্বের কারণে জমিদার পরিবারের যে সমস্ত সদস্য পুজোর সময় আসতে পারেন না তাঁদের ভার্চুয়াল মাধ্যমেও পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করেন দেব সরকার পরিবারের পুজোর আয়োজকরা।