প্রতিবেদন : যে রাজনৈতিক দল যেখানে শক্তিশালী, সে সেখান থেকেই লড়াই করুক। শুক্রবার সামশেরগঞ্জের (Samserganj- river erosion) সভা থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হঠাতে ‘একের বিরুদ্ধে এক লড়াই’-এর ডাক দিলেন দেশনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, আসুন আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে লড়াই করি, দেশ থেকে বিজেপিকে সরাই। এই মঞ্চ থেকে গঙ্গা-ভাঙন নিয়ে সরব হওয়ার সঙ্গে ভাঙন-রোধে বৃহস্পতিবারের পর আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন— মোট ১০০ কোটি বরাদ্দ। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর বাকি। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এখন থেকেই বিজেপি-বিরোধী জোটকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতেই নেত্রীর এই জোট-বার্তা। গত বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপি-বিরোধী শিবিরের নেতারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে চলছেন। কলকাতায় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন এইচ ডি দেবেগৌড়া-নীতীশ কুমার-তেজস্বী যাদব-অখিলেশ যাদবরা। নেত্রী নিজে ভুবনেশ্বরে গিয়ে দেখা করে এসেছেন নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে। এ-ছাড়াও অরবিন্দ কেজরিওয়াল-এম কে স্টালিন-সহ বিরোধী শিবিরের সব নেতাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এই প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করতে আগামী ১৭-১৮ তারিখে পাটনায় সব বিরোধী দলের নেতৃত্বের মধ্যে একটি মেগা বৈঠক হতে পারে। তাই শুক্রবার নেত্রীর বক্তব্য জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জে (Samserganj- river erosion) গঙ্গানদীর ভাঙন-প্রতিরোধে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালে ভাঙন- কবলিত সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান শ্মশানঘাট এলাকা পরিদর্শনে এসে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করেন। সভামঞ্চ থেকে আজ তিনি নদী-ভাঙনে সর্বহারা ৮৭টি পরিবারের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেন।
আরও পড়ুন-শিক্ষকদের টিউশন আইনত নিষিদ্ধ হল
বৃহস্পতিবার মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সামশেরগঞ্জের গঙ্গানদী-ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমি ভাঙন প্রতিরোধের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম। আজ সেচ দপ্তরের তহবিল থেকে অতিরিক্ত আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলাম। চলতি অর্থবর্ষে সামশেরগঞ্জে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে গঙ্গানদীর ভাঙন-নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আজকের সভাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, গঙ্গানদীর ভাঙন-প্রতিরোধ নিয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ এবং দিল্লির সাথে অনেকবার কথা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনও রকম সাহায্য করেনি। ভারত-বাংলাদেশ জলচুক্তি হওয়ার সময় রাজ্যের ৭০০ কোটি টাকা পাওনা ছিল। কুড়ি বছর হয়ে গেলেও কেন্দ্র সরকার সেই টাকা আমাদের দেয়নি এবং গঙ্গার ভাঙন-নিয়ন্ত্রণের কাজও তারা করছে না। ওরা রাজনীতি, দাঙ্গা এবং প্ররোচনা নিয়ে শুধু মাথা ঘামায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গার ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। দশ বছরের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গাভাঙন-নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্যের সেচ দপ্তর। নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষদের তিনি আবেদন করে বলেন— যাঁরা নতুন করে বাসস্থান তৈরির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা যেন নদী থেকে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাড়ি নির্মাণ করেন, যাতে নিজেদের বাসস্থান অন্তত কুড়ি বছর নিরাপদ থাকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্য পাঁচবার প্রথম হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার বর্তমানে সেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ লোককে কাজ দিয়েছে এবং ১০ কোটি কর্মদিবস তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন— কেন্দ্র সরকার রাজ্যের প্রাপ্য জিএসটি-র টাকাও আটকে রেখে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, মুর্শিদাবাদের অনেক রাজনৈতিক নেতা এই জেলা নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু এই জেলার জন্য কেউ কিছু করেননি।