প্রতিবেদন : ঠিক একবছর আগে ২০২২ সালের ১৭ মে দেশের সবচেয়ে বড় বিমা সংস্থা এলআইসিকে শেয়ার বাজারে ঢুকিয়েছিল মোদি সরকার। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার ‘শুভ সূচনা’ করেছিলেন। সূচনার দিন যে শেয়ারের দাম ছিল ৯৪৯ টাকা, ১৭ মে বাজারে আসার পর তার দর নেমে আসে ৮৬৭ টাকায়। আর বছর ঘোরার পর সেই দাম পড়ে হয়েছে ৫৭২ টাকা। অর্থাৎ, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এলআইসির মূলধন কমেছে ৪০ শতাংশ। এই বিরাট পতনে আমজনতার সর্বনাশ। যাঁরা ভরসা করে এলআইসিতে লগ্নি করেছিলেন সেইসব সাধারণ লগ্নিকারীর বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজার থেকে গায়েব। যার অঙ্ক প্রায় ২ লক্ষ কোটি ছুঁই ছুঁই! শেয়ার বাজারে নথিভুক্তির সময় ভারতীয় জীবনবিমা নিগমের মূলধনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি।
আরও পড়ুন-জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল
অঙ্কের বিচারে দেশের সেরা পাঁচটি সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থার মধ্যে অন্যতম ছিল এলআইসি-ই। বর্তমানে সেই মূলধন নেমে এসেছে ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার কোটিতে। অর্থাৎ, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মূলধনের বিচারে দেশের সেরা কোম্পানির তালিকায় ১৩তম স্থানে নেমে গিয়েছে এলআইসি। সৌজন্যে মোদি-আদানি জুটি। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এটাই স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির কলঙ্কময় অধ্যায়। তৃণমূলের অভিযোগ, মোদির হুকুমে আদানির সাম্রাজ্যে বিপুল টাকা ঢেলে এই পতন। মোদি সরকারের সৌজন্যে আদানিকে বিপুল টাকা দিয়ে এলআইসি এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। ৪০ শতাংশ বাজারমূল্য কমে গিয়ে টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২ লক্ষ কোটির কাছাকাছি। এই টাকা সাধারণ মানুষের। মোদি সরকার এই বাস্তবতা আড়াল করতে চাইছে।
আরও পড়ুন-কাটোয়া-আজিমগঞ্জ রুটে রেলের ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে রেলমন্ত্রীকে চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, শেয়ার বাজারে বিপুল কারচুপি করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা। সেই তথ্য সামনে আসতেই আদানির বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর পড়তে শুরু করে। তা সামাল দিতেও গ্রাহকের দেয় অর্থ থেকে আদানির সংস্থায় এলআইসি লগ্নি করেছে বলে অভিযোগ। আরও দাবি, এলআইসি-র বিভিন্ন লগ্নি তথ্যও রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর হাতে। যার জেরে এলআইসি-র শেয়ার দর গত এক বছরে আর মাথা তুলতে পারেনি। তাই আস্থা হারিয়েছে লগ্নিকারীদের। সংশয় তৈরি হয়েছে গ্রাহকদের মধ্যেও। কষ্ট করে রোজগার করা, জমানো টাকা এলআইসি-তে বিনিয়োগ করা নিরাপদ কি না, দুর্ঘটনা ঘটলে প্রিয়জন বিমার টাকা ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। যা এলআইসি-র মতো সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এলআইসি-র হাল ফেরানো, গ্রাহকদের আস্থা ফেরানো যাবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।