প্রতিবেদন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্প। তাঁরই হাত ধরে এই স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ শুরু হয়েছিল। শুক্রবার জোকা থেকে তারাতলা— আংশিক যাত্রাপথে ওই মেট্রো প্রকল্পের ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। বস্তুত জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্প শুধু নয়, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বাদ দিয়ে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালই যে পাঁচ রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন তার চারটিই তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গৃহীত প্রকল্প। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিনয়ের সঙ্গে সে-কথা প্রধানমন্ত্রী-সহ উপস্থিত সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি বলেন, ডানকুনি-চন্দনপুর চতুর্থ লাইন, বৈঁচি-শক্তিগড় তৃতীয় লাইন পাতার কাজের পরিকল্পনা তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন চূড়ান্ত হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের ফালাকাটা-গুমানিহাট দ্বিতীয় রেললাইন পাতার কাজও তাঁর রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের পরিকল্পনা বলে জানান তিনি। তবে জোকা-বিবাদীবাগ মেট্রো প্রকল্প তাঁর কাছে কেন অন্যসব প্রকল্পের থেকে উল্লেখযোগ্য সে-কথাও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি জানলে খুশি হবেন, আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন। কারণ এটা আমার স্বপ্নের প্রকল্প। আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গে জোকা-তারাতলা মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলাম। আজ আমি অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব কলকাতা পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায়কে যিনি জোকা ও তারাতলা মেট্রো স্টেশনের জন্য সমস্ত জমি সংগ্রহ করেছিলেন। ধন্যবাদ তৎকালীন নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও। ২০১০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ২০১০-’১১ রেল বাজেটে কলকাতা মেট্রো রেলের নতুন ৪টি রেলপথ অনুমোদন করেন। এর অন্যতম ছিল জোকা-বিবাদীবাগ মেট্রো, যা লাইন-৩ নামে খ্যাত। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জোকার কাছে জোকা-বিবাদীবাগ মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল।
আরও পড়ুন-গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলা বা তীর্থস্থান করা হোক, নমামি গঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি
২০১১-’১২ রেল বাজেটে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৬১৯ কোটি টাকা। পরবর্তীকালে মেট্রো-৩ লাইনকে জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার উদ্বোধন হলো জোকা-তারাতলা অংশের। প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল পথের প্রায় অর্ধেকটা এলিভেটেড। শুক্রবার সেই এলিভেটেড অংশেরই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত বাকি অংশ তৈরি হবে ময়দান এলাকায় মাটির নিচে।
১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর কলকাতার প্রথম মেট্রো রেল চালুর আগেই মহানগরীর নানা প্রান্তকে মেট্রো রেলে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তখনই ঠাকুরপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রোতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো রেলের অনেকটাই চালু হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, দমদম থেকে দক্ষিণেশ্বর যুক্ত হয়েছে আগেই। ঠাকুরপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ার একটা পর্ব পূরণ হবে জোকা-তারাতলা পর্যন্ত মেট্রো চালু হওয়ার সুবাদে। গত ১০ নভেম্বর উত্তর সীমান্ত রেলের সেফটি কমিশনার ওই মেট্রো পথ পর্যবেক্ষণ করেন। এই পথে ট্রেন চলাচলের ছাড়পত্র দেন এরপর।