প্রতিবেদন : আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই মোহনবাগান নামের আগে থেকে এটিকে সরানোর ঘোষণা করেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। সোমবার মোহনবাগান তাঁবুতে ফুটবলারদের শুভেচ্ছা জানাতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বলেছিলেন, গোয়েঙ্কার সঙ্গে কথা বলতে। অনুষ্ঠান-মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘আমি অরূপকে বলেছিলাম, সঞ্জীবের সঙ্গে কথা বলো। এটিকে-টেটিকে শুনতে ভাল লাগে না। মোহনবাগান, মোহনবাগান-ই। এই ক্লাবের ইতিহাস সোনায় বাঁধানো।’’
আরও পড়ুন-ফের ভর্ৎসনা কেন্দ্রকে, সেনা পেনশন মেটানোর সময়সীমা নিয়ে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত
মোহনবাগান তাঁবুতে এসে কোচ, প্রতিটি ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফদের জন্য উপহার হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী এনেছিলেন মিষ্টি। নিজের হাতেই সেই উপহার সকলের হাতে তুলে দেন। কোচ জুয়ান ফেরান্দো ও অধিনায়ক প্রীতম কোটালকে সবার আগে সবুজ-মেরুন উত্তরীয় পরিয়ে, রসগোল্লার হাঁড়ি, ফুলের তোড়া ও স্মারক তুলে দেন। এরপর নিজের হাতেই বাকি ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফ সদস্যদের সংবর্ধিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তব্য রাখতে উঠে সবার আগে কোচ, ফুটবলারদের অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘কোচ, অধিনায়ক, সেরা গোলকিপার এবং সব ফুটবলারদের আমি অভিনন্দন জানাই। আপনারা মহান। আপনাদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে। বিদেশিদের উদ্দেশে বলছি, আমাদের ভালবাসা ও শুভেচ্ছাবার্তা আপনাদের পরিবারের সদস্য এবং দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেবেন। আমরা আপনাদের জন্য গর্বিত।’’ বলার সময় গ্যালারিতে হিল্লোল উঠল।
আরও পড়ুন-ইতিহাসে পদ্মলক্ষ্মী
মোহনবাগানের সাফল্যের দিনেও ইস্টবেঙ্গলকে ভুললেন না মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘‘মোহনবাগান জিতে চলেছে। ইস্টবেঙ্গল বেচারা ভাল করে দলটা তৈরি করতে পারেনি।’’ তাঁর মুখে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পড়শি ক্লাবের কথা শুনে সমর্থকরা চিৎকার করে ওঠেন। তাঁদের থামিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে চলেন, ‘‘প্লিজ শুনুন, আমার কাছে সবাই সমান। ওরা (ইস্টবেঙ্গল) যখন শুরু করেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ওরা দলটা ভালভাবে তৈরি করতে পারেনি। তার আগেই মোহনবাগান খেলাটা খেলে দিয়েছে। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার তো টাকার অভাব নেই। ওরা নানাভাবে সাহায্য করে ক্লাবটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নাম তার মোহনবাগান। এটিকে মোহনবাগান নয়, মোহনবাগান সুপারজায়ান্টস। আমি যখন অরূপকে বললাম, তোমাকে ফাইনালে যেতে হবে। ও বলল, ওর বুকে চাপ পড়ছে। ও নিতে পারবে না। আমি বললাম, ফাইনালে যখন দল উঠেছে, চ্যাম্পিয়নও হবে। স্বপ্ন আমিও দেখি। ফাইনালের দিন ভোরবেলায় স্বপ্ন দেখি, মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি খেলার আগেই এটা অরূপকে এসএমএস করে জানিয়েওছিলাম। যাতে ও চিন্তা না করে। বাংলা আজ ভারতসেরা, আমরা গর্বিত। আগামী দিনে বিশ্বসেরাও হবে। আমরা কথায় কথায় বলি, ‘হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো। মোহনবাগানই এই পথটা আমাদের দেখিয়েছে। সব খেলার সেরা বাংলার এই ফুটবল। প্রমাণ করে দিয়েছে মোহনবাগান।’’
আরও পড়ুন-মুম্বইয়ে ন’দিন ধরে মায়ের দেহ টুকরো করেছিল মেয়ে
আইএসএল জেতার জন্য মোহনবাগানকে পুরস্কৃত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করেন আরও ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি গত বছর এখানে এসেছিলাম। ক্লাবটা সুন্দরভাবে গড়ে দিয়েছিলাম। বাংলার তিন বড় ক্লাবেরই উন্নতি করেছে আমাদের সরকার। আমি আজ সমর্থকদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য এবং ক্লাবের আরও উন্নতির জন্য আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০ লক্ষ টাকা দিচ্ছি। আবার খেলা হবে, আবার জিততে হবে। বিশ্বজয় করতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর গলায় তাঁর ফুটবলপ্রেমী পরিবারের কথাও। বললেন, ‘‘আমাদের পরিবার ফুটবলের সঙ্গে আন্তরিকভাবে যুক্ত। তবে আমি সব দলের সমর্থক। আমি তখন বেশ ছোট। আমার মা মোহনবাগানের খেলা থাকলেই কালীবাড়িতে পুজো দিতে যেত। আমার এক দাদা এখন ইস্টবেঙ্গলে আছে। কিন্তু ও মোহনবাগান সমর্থক। সত্যিটা বলতে আমার কোনও বাধা নেই। ফুটবলের জন্যই ওর ঘর প্রায় ভেঙেই যাচ্ছিল। আমার পাড়ায় ছোট একটা ক্লাব রয়েছে, কালীঘাট মিলন সংঘ। ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে জেনেছি, বাবা নাকি স্বাধীনতার আগে এই ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। আজও বাবার নামে রেকর্ড আছে।’’