আজ ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে (International Friendship Day)। বন্ধুত্বের দিন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ও হিংস্রতায় মানুষ বন্ধুহীন হয়ে পড়ে। সেই অবস্থার পরিবর্তনে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধুদিবস (International Friendship Day) পালনের ধারণা এসেছিল বলে মনে করা হয়। ১৯১৯ সালের অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে ফুল, উপহার বিনিময় করে এই দিনটি প্রথম পালন করেন।
ও বন্ধু আমার!
ফ্রেন্ডশিপ ডে! অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবার বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বন্ধুদিবস। পৌরাণিক যুগ থেকেই উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে বন্ধুত্বের স্মরণীয় নিদর্শন। বিশ্ববরেণ্যদের সেই সব বরণীয় বন্ধুত্বের গল্প বললেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী
‘A friend is one that knows you as you are, understands where you have been, accepts what you have become, and still, gently allows you to grow.’
—William Shakespeare
আজকের নিরিখে দিনটার মূল্য যা-ই হোক না কেন সৃষ্টির আদিকাল থেকেই অমর হয়ে রয়েছে বন্ধুত্বের (International Friendship Day) গল্প। দ্বারকার রাজা শ্রীকৃষ্ণও তাঁর ভগবত্তা ছেড়ে নিখাদ বন্ধু (International Friendship Day) হয়ে উদ্ধার করেছিলেন সুদামাকে। আবার বহু মনীষী তাঁদের বন্ধুত্বের সুনামে আজও বরণীয়।
শ্রীকৃষ্ণের প্রাণসখা সুদামা
শ্রীকৃষ্ণের শৈশবের বন্ধু ছিলেন সুদামা। একদিকে কৃষ্ণ ছিলেন দ্বারকার রাজাধিরাজ। অপরদিকে সুদামা এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ। বেশিরভাগ দিন সন্তানের জন্য অন্নটুকু জোগাড় করতে পারতেন না সুদামা। একদিন সুদামার স্ত্রী তাঁর স্বামীকে বললেন, ‘আমি জানি শ্রীকৃষ্ণ আপনার প্রাণসখা। আপনিও তাঁর এক পরম ভক্ত। শ্রীকৃষ্ণ অতীব ভক্তবৎসল। ভগবান কৃষ্ণই আপনার একমাত্র আশ্রয়। এই জন্য দয়া করে একবার তাঁর কাছে যান। আমি নিশ্চিত, তিনি অচিরেই আপনার দারিদ্র্যের কথা উপলব্ধি করবেন।’
স্ত্রীর বারংবার অনুরোধে সুদামা দ্বারকা যেতে মনস্থ করলেন। কৃষ্ণকে উপহার দেওয়ার জন্য গৃহে কিছু আছে কিনা জানতে চাইলেন। তখন স্ত্রী চার মুঠো চিঁড়ে একখণ্ড কাপড়ে বেঁধে স্বামীকে দিলেন শ্রীকৃষ্ণকে উপহার দেওয়ার জন্য।
এরপর কৃষ্ণ-চিন্তায় তন্ময় হয়ে পায়ে-পায়ে দ্বারকায় হাজির হলেন সুদামা। পথে পায়ে কাঁটা বিঁধে রক্তারক্তি। যাদব রাজন্যবর্গের প্রাসাদে কৃষ্ণসাক্ষাতের অনুমতি পেয়ে সুদামা যখন তাঁর কাছে পৌঁছলেন। বন্ধুকে চিনতে পেরে সেই মুহূর্তে আসন ছেড়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে শ্রীকৃষ্ণ এগিয়ে গেলেন। জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। ফল ও পানীয় দিয়ে অতিথি অভ্যর্থনার পর নিজের হাতে পালঙ্কে বসিয়ে সুদামার ক্ষতবিক্ষত পা ধুয়ে দিলেন। সুদামা শ্রীকৃষ্ণের জন্য যে উপহার এনেছিলেন সংকোচে দিতে পারলেন না। অন্তর্যামী ভগবান তা টের পেয়ে একটা সময় নিজেই চেয়ে নিলেন সেই চিঁড়ে। দীর্ঘসময় কথা বললেন তাঁরা দুজন। কিন্তু সুদামা বলতে পারলেন না সাহায্য চাইবার কথা! বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। বাড়ি ফিরে অবাক হয়ে দেখলেন তাঁর সেই কুঁড়ে ঘরটি আর নেই। তার বদলে পাকা বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। সুদামা বুঝলেন শ্রীকৃষ্ণের মতো বন্ধু (International Friendship Day) পাওয়া কত জন্মের পুণ্যের ফল।
আদর্শের বন্ধু রামমোহন ও দ্বারকানাথ
যে দুজন মানুষের জুড়িঘোড়ার টানে এই বঙ্গে নবজাগরণ এসেছিল তাঁরা হলেন রাজা রামমোহন রায় এবং প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। প্রায় বাইশ বছরের বড় রামমোহনের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল তাঁর ভাবশিষ্য দ্বারকানাথের। স্নেহ এবং শ্রদ্ধার মেলবন্ধনে একই আদর্শে এগিয়েছিলেন দুজনেই। বহু বিষয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এক। সমাজের রক্ষণশীলতা, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়েছিলেন একসঙ্গে। দিয়েছিলেন নবযুগের আগমনবার্তা।
একুশ বছর বয়সে রামমোহনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় পর্ব শুরু হয়। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে রামমোহন কলকাতায় স্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করেন। ওই সময় তিনি ‘আত্মীয় সভা’ স্থাপন করেন। এই ‘আত্মীয় সভা’ সংগঠনে এসেই রামমোহন এবং দ্বারকানাথের বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। রামমোহনের প্রখর ব্যক্তিত্ব, ক্ষুরধার যুক্তি, সামাজিক মর্যাদার আকর্ষণে অনেক নামজাদা, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা আত্মীয় সভায় আসতেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দ্বারকানাথ। আত্মীয় সভার সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম এবং সমাজ সংস্কার। সে উদ্দেশ্যে সপ্তাহে একদিন মিলিত হয়ে নানা আলাপ-আলোচনা, সংস্কারের উপায় নির্ধারণ চলত। দ্বারকানাথ ঠাকুর তো আসতেনই, সেই সঙ্গে আসতেন পাথুরিয়া ঘাটার প্রসন্নকুমার ঠাকুর, টাকির কালীনাথ মুনশি ও বৈকুণ্ঠনাথ মুনশি, রাজা কালীশঙ্কর ঘোষাল, নন্দকিশোর বসু প্রমুখ। তবে রামমোহনের সঙ্গে মিশলে বা তাঁর অনুরাগী হলেই যে নিজের ধর্মীয় ঐতিহ্য ছাড়তে হবে এমনটা কেউ মানতেন না। দ্বারকানাথকে ভীষণ প্রভাবিত করেছিলেন রামমোহন। তাঁর সংস্পর্শে এসে অনেক বদলে গেলেন দ্বারকানাথ। দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথের তৃতীয় সন্তান হেমেন্দ্রনাথের মেজো ছেলে ক্ষিতীন ঠাকুরের কথা অনুযায়ী— সতীদাহ নিয়ে রামমোহনের কাজকর্ম উপলক্ষে দ্বারকানাথ ঘন ঘন তাঁর কাছে যেতেন ফলে তখন সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এতটাই জুড়েছিলেন রামমোহনের সঙ্গে যে নিরামিষাশী দ্বারকানাথ মাংস খেতে প্রবৃত্ত হন। রামমোহনের অনুকরণে বৈষ্ণব পরিবারভুক্ত দ্বারকানাথ অল্প পরিমাণে শেরি মদ্য পান করতেন। আসলে রামমোহনের সত্যনিষ্ঠা, তাঁর ধর্ম সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্যের জন্য সংগ্রাম দ্বারকানাথের মন, আদর্শ, চিন্তা চেতনার সমর্থন পেয়েছিল। তাই সম-আদর্শ তাঁদের বন্ধুত্বকে (International Friendship Day) প্রগাঢ় করেছিল।
দুর্দিনের বন্ধু বিদ্যাসাগর ও মধূসুদন
‘বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,’
মাইকেল মধূসুদন দত্ত বিখ্যাত এই কবিতা রচনা করেছিলেন তাঁর বন্ধু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্য। অথচ এই দুই বিপরীত মেরুর সাহিত্যিকের বন্ধুত্ব শুরুর অভিজ্ঞতা কিন্তু সুখকর ছিল না। দুজনের কেউই কাউকে পছন্দ করতেন না তেমন।
মাইকেল মধুসূদন বিদ্যাসাগর মশাইকে আড়ালে ডাকতেন ‘টুলো পণ্ডিত’ বলে, আর মধুসূদনের ‘অমিত্রাক্ষর’ ছন্দ নিয়ে বিদ্যাসাগরও ব্যঙ্গ করতে ছাড়তেন না। এই ছন্দ নিয়ে তিনি ক্যারিকেচার করতেন : ‘তিলোত্তমা বলে ওহে শুন দেবরাজ,/তোমার সঙ্গেতে আমি কোথায় যাইব?’ তবে ‘টুলো পণ্ডিত’ বলে ব্যঙ্গ করলেও মাইকেল তাঁর বন্ধু ও ত্রাতা বিদ্যাসাগরের প্রতি ছিলেন পরম শ্রদ্ধাশীল।
‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ ও ‘পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ নামে দুটি কবিতায় মাইকেল তাঁকে অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ধীরে ধীরে তাঁদের বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে প্রগাঢ়। সেই ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কালোত্তীর্ণ মর্যাদায় আসীন।
মাইকেল মধুসূদন কবি হিসেবে সফল হলেও জীবনের অধিকাংশ সময় খুবই অর্থকষ্টে ভুগেছেন। ওই দুর্দিনে তাঁকে আর্থিক ও মানসিকভাবে আগলে রেখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আর্থিক সাহায্য করতে কুণ্ঠিত হননি।
বিদ্যাসাগরের সঙ্গে মধুসূদন দত্তের পরিচয় হয় ১৮৫৬ সাল থেকে। তখনও তাঁদের সম্পর্ক গাঢ় হয়নি। পরবর্তীতে ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’কে ঘিরে তাঁদের সম্পর্কের বাঁক পরিবর্তন হতে শুরু করে।
মধুসূদনের বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়ার অন্যতম সমর্থক ছিলেন বিদ্যাসাগর। ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়তে কবি বিলেত যান। জমিজমা-সংক্রান্ত জটিলতায় বিলেতে দিনযাপনের সময় ভারতবর্ষ থেকে তাঁর জন্য টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিনি সীমাহীন আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়েন। একটা সময় দেনার দায়ে তাঁর ফ্রান্সের জেলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। অভাব যখন তীব্রতর হল এবং আর কোনও উপায় না দেখে নিজের দুর্দশা জানিয়ে বিদ্যাসাগরকে চিঠি লিখলেন। মধুসূদনকে পাঠানো অর্থসাহায্য সংগ্রহ করতে বিদ্যাসাগরকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। পরবর্তীতে সেসব অর্থঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে, বিদ্যাসাগরকে অনেকের কটুকথা এবং অপমানও সহ্য করতে হয়েছিল।
তবুও তিনি চেয়েছিলেন, যেকোনও মূল্যে মধুসূদনের পাশে থাকতে, যাতে তাঁর সাহিত্যচর্চা অব্যাহত থাকে। মাইকেল নিজে বিদ্যাসাগরকে সত্যিকারের বন্ধু ও মানুষ আখ্যা দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-পরানসখা বন্ধু হে আমার
বিবেকানন্দের মার্কিন বন্ধু জোসেফাইন
এক সময় এক ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসীকে একজন আমেরিকান মহিলা প্রশ্ন করেছিলেন, আমি আপনার জন্য কী করতে পারি? উত্তরে সন্ন্যাসী বলেছিলেন, ‘ভারতবর্ষকে ভালবাসো’। সেই সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ আর মার্কিন মহিলা মিস জোসেফিন ম্যাকলিওড। স্বামীজির বন্ধু, ভক্ত, শিষ্যা জোসেফিন সত্যিই ভারতবর্ষকে ভালবেসেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ আদর করে তাঁকে কখনও জো, কখনও জয়া, কখনও ত্যান্তিন বলে ডাকতেন। ভারতবর্ষের সঙ্গে তাঁর ছিল আত্মার যোগ তাই যুক্ত হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আন্দোলনের সঙ্গে। জোসেফিন বলতেন আমি স্বামীজির শিষ্যা নই আমি তাঁর বন্ধু। স্বামীজিকে তিনি অনেক সময় আর্থিকভাবেও সাহায্য করেছিলেন। ১৮৯৫ সালের ২৯ জানুয়ারি জোসেফিনের সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের দেখা হয়। তিনি স্বামীজির বেদান্ত দর্শনের উপর ভাষণ শুনে মুগ্ধ হন এবং বেদান্ত দর্শন সম্পর্কে আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। এরপর জোসেফিন বিবেকানন্দের বেদান্ত সোসাইটির একজন সদস্য হন। স্বামীজি যেখানেই গেছেন সেখানেই কোনও না কোনও ব্যক্তি বা পরিবারকে আপন করে নিয়েছেন। বন্ধুত্বে আবদ্ধ হয়েছেন। বিবেকানন্দ বলতেন, ‘There cannot be firendship without equality’।
জোসেফিন ছিলেন এটিকেট সম্পর্কে খুব সচেতন। স্বামীজির একবার ইচ্ছে হল তাঁকে নিয়ে মজার করার। স্বামী সুবোধানন্দকে একদিন ডেকে বললেন, ‘খোকা, তুই এই খাবারটা জোকে দিয়ে আয়। সে তোকে নিশ্চয়ই Thank You বলবে। তুই তার উত্তরে Don’t care বলে চলে আসবি’।
এ একেবারেই এটিকেট বিরুদ্ধ ব্যবহার। সরল সুবোধানন্দ কিছু না বুঝেই তাঁর আদেশে জোসেফিনকে খাবার দিয়েছেন, জোসেফিনও যথারীতি ‘Thank you’ বলেছেন। সুবোধানন্দজিও স্বামীজির শেখানো কথা ‘Don’t care’ বলে দিলেন।
এরপর স্বামীজি ঠিক যা আন্দাজ করেছিলেন হল তাই, জোসেফিন ভীষণ উত্তেজিত হয়ে স্বামীজির কাছে এসে রেগে ফেটে পড়েছেন, ‘What right has this lad to humiliate me!’ জো-র সেই রাগত মূর্তি দেখে স্বামীজির সে কী হাসি!
অভিনব বন্ধুত্বে আইনস্টাইন ও চ্যাপলিন
তাঁরা দুজনেই ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা জগতের বাসিন্দা। একজন জগৎ-বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অন্যজন কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা।
অথচ এমন বিপরীত জগতে থেকেও দুজনের মধ্যে জমে উঠেছিল দারুণ এক বন্ধুত্ব। সালটা ১৯৩০-’৩১ ওই সময় আইনস্টাইন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আমন্ত্রণে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন।
বিজ্ঞানের জগতে আইনস্টাইন তখন সূর্য। তাঁর আশেপাশে ভিড় জমাতেন হাজারো ভক্ত। এদিকে চ্যাপলিনের অভিনয়খ্যাতিও তখন আকাশ ছুঁয়েছে।
আইনস্টাইনের সঙ্গে পরিচয় ছিল বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কোম্পানি ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিওস’-এর প্রধান কার্ল ল্যামলের। ‘অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য বিজ্ঞানীকে হলিউডে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ল্যামলে। সিনেমা দেখার কোনও এক মুহূর্তে আইনস্টাইন ল্যামলেকে বলেন, তিনি চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। এরপরে ল্যামলে চ্যাপলিনকে ফোন করেন। আইনস্টাইন ও চার্লি চ্যাপলিনের প্রথম দেখা ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে। সেখানেই একসাথে খাবার খাওয়া ও দীর্ঘ আলাপচারিতার মধ্যে একে অপরের সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা করতেও ছাড়েননি।
প্রথম পরিচয় থেকেই চ্যাপলিন ও আইনস্টাইনের বন্ধুত্ব জমে গিয়েছিল। চ্যাপলিন সে-সময় তাঁর ছবি ‘সিটি লাইটস (১৯৩১)’-এর প্রথম শো দেখতে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন। ছবিটি দেখতে আইনস্টাইন একেবারে চ্যাপলিন-সাজে হাজির! জানা যায়, দুজনকে দেখে দর্শকেরা ব্যাপক উল্লসিত হয়েছিলেন এবং ঘন ঘন অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। এটি দেখে আইনস্টাইন খানিকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, এই সময়ই নাকি চার্লি চ্যাপলিন সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন। তা হল, ‘তারা আমাদের দুজনকে দেখেই অভিভূত। তোমাকে দেখে অভিভূত, কারণ তারা কেউই তোমাকে বুঝতে পারে না। আমাকে দেখে অভিভূত, কারণ সবাই আমাকে বোঝে!’ অবশ্য এ-ঘটনা ও উক্তি নিয়ে ঢের বিতর্ক আছে।