আর্থিকা দত্ত l জলপাইগুড়ি: ‘বনু আসিলোতে থাক, চড়েয়া দ্যেছ ভাত। ছ্যেঁকা দিয়া আন্ধেছ মুই ভিত কুমড়ার ভাত।’ সকালে উঠেই পান্তাভাত লঙ্কা ও কাঁচা পেঁয়াজের সঙ্গে ছ্যেঁকা বা প্যাল্কা দিয়ে যে খায়নি সে বুঝবে না এর কী স্বাদ! আর সঙ্গে যদি যোগ হয় শিদোল, তাহলে তো কথাই নেই। বলা হয়, শিদোল পোড়ানোর গন্ধেই হয়ে যায় অর্ধভোজন। বহু যুগ ধরেই রাজবংশী পরিবারের অনেকেরই প্রিয় খাদ্য এগুলি। তবে এখন পুরনো মানুষগুলি হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে চলেছে এই দেশীয় খাবারগুলি। ষাট ছুঁই ছুঁই ভেমটিয়ার ফুলতি বর্মন বলেন, এই খাবার বানানো খুবই কঠিন। তবে এখনও পুরনো মানুষরা থাকতে থাকতে শিখে নেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ছ্যেঁকা বানাতে প্রয়োজন দেশি মোটা বিচকলা গাছের মূল। তা ভাল করে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে রোদে শুকোতে হবে। শুকিয়ে যাওয়ার পর গুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে হবে। এরপর নারকেলের মালায় ফুটো করে ছাঁকবার জন্য দিতে হবে শুকনো পাট। সেই মালায় শুকনো মূল পোড়ানো ছাই দিয়ে দিতে হবে সামান্য পরিমাণে জল। ফোঁটা ফোঁটা করে পড়তে থাকবে জল। রং হবে মাটির মতো। সেই সংগ্রহ করা জলকেই বলে ছ্যেঁকা। পুঁইশাক ও দাড়কা আর পুঁটি মাছের শুঁটকির সঙ্গে সেই জল মিশিয়ে রান্না করলে হয় খুবই সুস্বাদু।
আরও পড়ুন-সীমান্ত এলাকায় স্মার্ট ক্লিনিকের সূচনা
বছর সত্তরের ফুলতি রায় বলেন, “শিদোল যদি তুই পাইস, তোর মাছো না নাগে, মাংসও না নাগে, শিদোল দিয়াই তুই পুরা ভাত খাবার পাবু।’ তাঁর কথায়, শিদোল বানাতে হলে লাগবে টাটকা ছোট ছোট পুঁটি আর দাড়কা মাছ। মাছ কুটে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানাতে হবে। কালো কচুর ডাটা সেই শুঁটকি মিশিয়ে ছাম গাইন দিয়ে থেঁতে ফেলে রেখে দিতে হবে কয়েক দিনের জন্য। পচে সুন্দর গন্ধ বেরোবে। তারপর গোল গোল বলের মতো বানিয়ে আবার রোদে শুকলে তৈরি হয়ে যাবে শিদোল। ঠিক নিয়ম শিদোল বানালে প্রায় এক বছর থাকে ঘরে।