রাত পোহালেই ত্রিপুরায় পুরভোট (Tripura Municipal Election)। নির্বাচনকে নিয়েই গেরুয়া সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছিল রাজ্যের শাসক দল বিজেপি (BJP) যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটেছে। দিনের পর দিন তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা প্রার্থীদের উপর হামলা হয়েছে। গুলি চলেছে। মহিলা থানা ভাঙচুর করেছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা (Law and Order) ভেঙে পড়ছে। যা নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছিল ঘাসফুল শিবির।
আরও পড়ুন-বাড়তি বিল, স্বাস্থ্য কমিশনের কোপে পাঁচ হাসপাতাল
আগরতলার বিজেপির বর্ষীয়ান বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিপ্লব দেবের দিকে আঙুল তুলেছেন। তৃণমূলের পক্ষে দায়ের হওয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, ২৫ নভেম্বর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে পুরভোট করতে হবে ত্রিপুরাতে। যাতে মানুষ নির্ভয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট উৎসবে সামিল হতে পারে। এই মর্মে ত্রিপুরা রাজ্য নির্বাচন কমিশন ডিজিপি, ডিআইজি সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করেছে এবং ভোটারদের নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, দ্রুত তার রিপোর্টও তলব করে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন-বাংলার কৃষকদের ফের বঞ্চনা
ঘুমিয়ে থাকা ত্রিপুরা রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা অবশেষে নড়েচড়ে বসে। সুপ্রিম কোর্টের চাপে পুরভোটের আগে প্রতিটি বুথে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তৎপর হয় ত্রিপুরা রাজ্য প্রশাসন। এই মর্মে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। যেখানে প্রতিটি বুথে সশস্ত্র পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করার কথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-Panchayat Election: পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের দিকে সমর্থনের ঢল
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার ছটি নগর পঞ্চায়েত, ৭টি মিউনিসিপাল কাউন্সিল ও আগরতলা পুরনিগমের ভোট। সব মিলিয়ে ৬৪৪টি পোলিং স্টেশন। যা ২০টি থানার আওতাধীন। প্রতিটি বুথে কার্যত স্পর্শকাতর। তাই ৬৪৪টি বুথের মধ্যে ৩৭০টি বুথকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বুথগুলির প্রতিটিতে ৪ জন করে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলের (TSR) সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তারমধ্যে আগরতলার বুথগুলিতে অতিরিক্ত একজন অর্থাৎ ৫ জন করে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলের সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। বাকি ২৪৪টি পোলিং স্টেশনের প্রত্যেকটিতে ৪জন করে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে।
এছাড়া ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সেক্টর অফিসার সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করবে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী। ভোট শেষ হওয়ার পর স্ট্রং রুমকেও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হবে।
স্ট্রং রুম পাহারায় থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
আরও পড়ুন-বন্ধু পেইনের পাশে থাকবেন না বেইলি
ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও এরিয়া ডমিনেশন-এর জন্য ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলের ২৫ জন করে সশস্ত্র পুলিশ সংশ্লিষ্ট ২০টি থানায় থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি থানার জন্য অতিরিক্ত ৩০ জন করে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলের জওয়ানদের তৈরি রাখা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি CRPF সমন্বয় রেখে কাজ করবে। এছাড়া শুধুমাত্র আগরতলা পুরসভা ভোটের জন্য অতিরিক্ত ১৫ কোম্পানি CRPF মোতায়েন করা হয়েছে। তৈরি রাখা হচ্ছে QRT টিম। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে এই টিম।
বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় সব মিলিয়ে ১২৩টি নাকা চেকিং পয়েন্ট করে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সন্দেহজনক গাড়ি দেখলেই আটক করা হচ্ছে। ভোটের আগে একাধিক দাগি আসামিকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের চাপে সব মিলিয়ে পুরভোটের আগে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে দুর্গের চেহারা নিয়েছে রাজধানী আগরতলা সহ ত্রিপুরার বিভিন্ন জেলা।
আরও পড়ুন-বিরাটদের আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ,আগে পাঠিয়ে শার্দূলদের তৈরি রাখছে বিসিসিআই
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর পুরভোটে নিরাপত্তা নিয়ে ত্রিপুরা পুলিশের এই তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিরোধী তৃণমূল। তারা পুলিশের এমন উদ্যোগকে পুরভোটের আগে নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছে। ত্রিপুরার দায়িত্বে থাকা তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ টুইটে লেখেন, “তৃণমূল এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চাপে পুরভোটের নিরাপত্তা জানালো ত্রিপুরা প্রশাসন। আমাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের সব নির্দেশ মেনে আজকের মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দিতে হবে। হামলা, প্ররোচনার মামলাগুলিতে কী ব্যবস্থা হল, জানাতে হবে।”
আরও পড়ুন-বন্ধু পেইনের পাশে থাকবেন না বেইলি
একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশ্যে লেখেন, “মানুষ কাল সকাল সকাল ভোট দিন। নিজের ভোট নিজে দিন।” অৰ্থাৎ, তৃণমূলের দাবি, মানুষ যদি উৎসবের মেজাজে হইহই করে ভোট দিতে বুথমুখী হন, তাহলে পুরভোটে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত।