স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই। আামাদের ৫০ শতাংশ চাই।
আপনি এ-রাজ্য থেকে টাকা তুলবেন আর সেই টাকা ডবল ইঞ্জিন সরকার চালিত রাজ্যে ঢালবেন, তারপর আর্থিক রিপোর্টে দেখা যাবে, আপনার ডবল ইঞ্জিন সরকারের চেয়ে পারফরম্যান্স বহু শতাংশ বেশি ভাল এই পশ্চিমবঙ্গের, সেটা আর চলবে না।
আপনারা সংসদে দাঁড়িয়ে স্বীকার করবেন, পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে বেশি এগিয়েছে, কিন্তু এই বাংলাকে যে আপনারা বঞ্চিত করে চলেছেন বারবার, সে-নিয়ে একটি কথা বলবেন না,
তেমন দ্বিরাচারিতা আর চলবে না।
আমাদের ৫০ শতাংশ চাই।
হকের টাকা। দিতেই হবে আপনাকে।
কেন্দ্রীয় করের ৫০ শতাংশ ফেরাতেই হবে। রাজ্যের হাতে তুলে দিতে হবে আরও আর্থিক ক্ষমতা।
মনে রাখবেন, আপনারা কোনও দয়ার দান দিচ্ছেন না। আমাদের প্রাপ্য অর্থ, ন্যায্য বকেয়া মেটাচ্ছেন। ওটা হকের টাকা।
আপনারা লোকঠকাতে ওস্তাদ। মুখে বলছেন, এখন কেন্দ্রীয় করের ৫১ শতাংশ টাকা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে দিচ্ছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তেমন মোটেই ঘটছে না। উপুড়হস্ত করার ব্যাপারে আপনারা মোটেই অত নীতিনিষ্ঠ সদাচারী নন। সারচার্জ আর সেস বাড়িয়েছেন। ফলত, এখন কেন্দ্রের মোদি সরকারের কাছ থেকে মোটে ২৯ শতাংশ টাকা এ-রাজ্যে ফেরত আসছে। চলতি কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্তি মোটে ৭.৫২৩ শতাংশ। আর আপনারা মুখে বলছেন, ৫১ শতাংশ দিচ্ছেন, আর দিচ্ছেন ১০ শতাংশের কম। লজ্জা করে না এরকম মিথ্যাচার করতে!
কেন্দ্রের থেকে বাংলার বকেয়া কত? প্রায় ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: জননেত্রীর ঐতিহাসিক অনশন, সংসদে মনে করিয়ে দিল তৃণমূল
আবাসের টাকা দিয়েছে মোদি সরকার। না।
১০০ দিনের কাজের টাকা দিয়েছে মোদি সরকার? না।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য করেছেন? না। জনসংখ্যা আর দুর্গম এলাকার সম্পত্তি, এই দুইয়ের মানদণ্ডে রাজ্যের দাবি কি অযৌক্তিক? মোটেই নয়, বরং, ১০ শতাংশ কম দাবি পেশ করেছে রাজ্য। তাতেও আপত্তি?
নগরায়ণের জন্য এখন কেন্দ্রীয় সরকার দেয় ৭.৫ শতাংশ। ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক মানদণ্ডে এখন রাজ্য পায় ১২.৫ শতাংশ, মা-মাটি-মানুষের সরকার দাবি করছে, এই বরাদ্দ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হোক। খুব অন্যায় দাবি? একেবারেই নয়। তবে কীসের আপত্তি?
কর ব্যবস্থাপনা বা ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট খাতে ২.৫ শতাংশ ভাগের অঙ্ক না-বদলানোর কথা বলেছি আমরা? অন্যায় দাবি? যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন? মোটেই নয়।
সুনির্দিষ্ট খাতে এবং সুনির্দিষ্ট নয় এরকম খাতে পশ্চিমবঙ্গকে কত টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের? কমপক্ষে ৮,৭০০ কোটি টাকা। কত টাকা দিয়েছে মোদি সরকার? বড়জোর ২,৪০০ কোটি টাকা। বাকি ৬,৩০০ কোটি টাকার কী হবে? কবে পাব? কোথায় গেল সে-টাকা? উত্তর নেই কেন্দ্রের তরফে।
লজ্জাজনক নির্বাক ভাব প্রদর্শন!
শিলিগুড়ি মহুকুমা পরিষদের মধ্যে খানিকটা পার্বত্য এলাকা। সে-বাবদ বাড়তি টাকা পাওয়ার কথা। দিচ্ছেন সে-টাকা? দেবেন সে-টাকা? প্রশ্ন তুললেই মুখে কুলুপ।
আসলে কেন্দ্রের ফর্মুলা এক, হিসাব এক। মোদির তালে তাল মেলালে বরাদ্দ উন্নয়ন আর বেসুরো হলেই বিসর্জন।
রং না মানলেই টাকা বন্ধ।
বাংলা আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বারবার বলা সত্ত্বেও কেন্দ্রের তরফে কোনও নড়াচড়া নেই। কেন? মিথ্যে অজুহাতে মানুষের হকের টাকা আটকে রাখা হচ্ছে কেন?
এখন তো একটাই কর। জিএসটি। সেটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার। অথচ, ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে আবাস যোজনা, সব বন্ধ। আবার চোখ রাঙিয়ে বলা হচ্ছে, কেন্দ্র বাড়িতে যে রং করতে বলেছে, সেই রংই করতে হবে। নইলে টাকা পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এসব চলে?
একটা কথা মনে করিয়ে দিই। কেন্দ্রীয় অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিজের কোষাগার থেকে ৪০-৫০ শতাংশ ব্যয় করতে হয়। তাও রাজ্যের দেওয়া নাম বা লোগো ব্যবহার করা চলবে না। এ আবার হয় নাকি?
পশ্চিমবঙ্গের মনরেগা বা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দিল্লি থেকে টাকা আসছে না। তিন বছর ধরে। নানা বাহানায় আটকে রাখা হয়েছে গরিব মানুষের আবাস প্রকল্পের টাকা। অর্থ বরাদ্দ করার সময় পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত। আবার ন্যায্য পাওনা পাওয়ার ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত। তাও পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি শুকিয়ে যায়নি। তাও বাংলার গরিব মানুষ মরেনি। তাও বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণি সার্বিক স্থবিরত্ব অর্জন করেনি। তাও বাংলার অর্থনীতির চাকাটি সচল। কারণ একটাই— জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক জনমুখী প্রকল্প।
কারণ একটাই— জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প অর্থনৈতিক ভাবনা।
কারণ একটাই— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্বিক সমাজকল্যাণ ভাবনা।
প্রকল্পগুলির নাম দেখলেই বোঝা যায়, কাদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, কাদের সুবিধার্থে, সমাজের কোন অংশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রাখতে রাজ্য সরকার প্রকল্পগুলি রূপায়ণের পথে পা বাড়িয়েছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্যশ্রী, সবুজসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রভৃতি। গ্রামের মানুষ, গরিব আর গরিব পরিবারের মেয়েদের জন্যই এইসব প্রকল্প। এসব ভাতা ও অনুদান বণ্টনের প্রকল্প। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রকল্প। এর সঙ্গে আছে মনরেগা আর আবাসের বিকল্প কর্মসূচি। আর তাতেই মোদির জব্দ-নীতি ভেঙে দিতে পারেনি বাংলার মানসিক দৃঢ়তা। গ্রামীণ অর্থনীতির প্রশংসা যখন মোদির মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন করেন, তখন তিনি বলেন না, উল্লেখ করতে ভুলে যান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা আর বিহারের গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো গত অর্থবর্ষে ৬২৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এই চারটি রাজ্যও। অথচ, মোদি সরকার দরাজ হাতে টাকা বিলি করেন উত্তরপ্রদেশ আর রাজস্থানের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যে।
এই দ্বিচারিতা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে।
তাই, আমাদের একটাই দাবি। বকেয়া টাকা মেটান অবিলম্বে আর করের টাকার ৫১ শতাংশ আমাদের দিন, উন্নয়নের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে।
নইলে …