অ্যাডিলেড, ৬ ডিসেম্বর : গোলাপি বল আর অ্যাডিলেড ওভাল এখন আতঙ্ক ভারতের জন্য। মন্দের ভাল ৩৬-এর থেকে একটু ভাল হল এবার। ৪৪.১ ওভারে ১৮০। সেটাও হয় না যদি নীতীশ রেড্ডি তিন ছক্কায় ৪২ না করে যেতেন। মহারথীরা যখন মিচেল স্টার্কের সামনে নাজেহাল, তখন নীতীশই বেশি রান করেছেন। শেষবেলায় অস্ট্রেলিয়া বুমরাদের যাবতীয় চাপ সামলে তুলেছে ৮৬/১। এখনও ৯৪ রানের ঘাটতি থাকলেও মাকসুইনি (৩৮) ও লাবুশেন (২০) লড়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রথম দিন একমাত্র খোয়াজার (১৩) উইকেট হারিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় অস্ট্রেলিয়া।
আরও পড়ুন-সরকারি স্কুলে ঢুকে প্রধানশিক্ষককে গুলি করে খুন বিজেপি রাজ্যে
পারথে মিচেল স্টার্ককে খেপিয়ে দিয়েছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল। বলেছিলেন তুমি স্লো হয়ে গিয়েছ! স্টার্ক পরে বলেছিলেন, তিনি শুনতে পাননি। আসলে ভুল। বিলক্ষণ শুনেছেন আর তারই জবাব এখানে দিলেন গুনে গুনে আধ ডজন উইকেট নিয়ে। ৪৮ রানে ৬ উইকেট বাঁহাতি ফাস্ট বোলারের। টেস্টে ১৫ বার পাঁচ উইকেট নিলেও এই প্রথম ভারতের বিরুদ্ধে এমন কীর্তি স্থাপন করলেন তিনি। ছোট, বড় সব উইকেট গেল স্টার্কের আগুনে পেসে। দিনভর ১৪০-এ বল করে গেলেন তিনি। বাকি চার উইকেট কামিন্স ও স্কট বোলান্ডের দখলে।
গোলাপি বল কখন কী করবে কেউ জানে না। বিশেষ করে লাইট জ্বলে ওঠার পর। অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম দিন লাঞ্চের আগের কুড়ি মিনিট রীতিমতো নাটক হল। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসল ভারত। ৬৯/৩ থেকে নিমেষে ৮১/৪। ম্যাচের প্রথম বলে যশস্বী জয়সোয়াল ফিরেছিলেন। পরের তিনটি উইকেট ছিল কে এল রাহুল, বিরাট কোহলি ও শুভমন গিলের। সবাইকে অবাক করে বিকেলে আলো জ্বলে ওঠার পর অবশ্য গোলাপি বল আর বেশি কারিকুরি করেনি। অস্ট্রেলিয়া আরামসে রান তুলে নিয়ে গিয়েছে ৩৩ ওভার ব্যাট করে।
আরও পড়ুন-শ্রীনগরে জঙ্গিদমন অভিযানে হৃদ্রোগে আক্রান্ত মৃত্যু সেনা জওয়ানের
শুক্রবার প্রথম দুই সেশনে মিচেল স্টার্ককে প্রায় অপ্রতিরোধ্য দেখাল। পারথে তাঁকে যশস্বী খোঁচা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তুমি তো দেখছি স্লো হয়ে গিয়ে! তরুণ ওপেনারকে পরের টেস্টেই জবাব দিয়ে দিলেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। কীভাবে? স্টার্ক দেখেছেন তরুণ ব্যাটারের অফ স্ট্যাম্পে শাফল করে উঠে আসার প্রবণতা আছে। প্রথম বলটাই তাই সোজা লেগ স্ট্যাম্পের উপর রাখলেন। সামান্য ভিতরে ঢুকে এল। যশস্বী (০) মিড উইকেটে খেলতে গিয়েছিলেন। গতি ও স্যুইংয়ের মিশেলে লাইন মিস করে সোজা এলবি।
এতদ্বারা একটা জিনিস তিনি শিখলেন, আহত বাঘকে খোঁচাতে নেই। পারথে ফর্মে ছিলেন না স্টার্ক। অ্যাডিলেডে গোলাপি বল হাতে ভয়ঙ্কর হলেন। শূন্য রানে এক ওপেনার চলে যাওয়ার পর রাহুল আর শুভমন একটা জুটি তৈরি করেছিলেন। দুজনে মিলে ৬৯ রান তুলে ফেলার পর সেই স্টার্ক রাহুলকে (৩৭) তুলে নেন। এখানকার হার্ড উইকেটে দিব্যি বাউন্স পাচ্ছেন ফাস্ট বোলাররা। স্টার্ক সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। রাহুলের সঙ্গে বিরাটের (৭) উইকেটও কিছুটা এর সৌজন্যে।
আগের টেস্টে সেঞ্চুরি করলেও বিরাট আবার একই ট্র্যাপে পড়লেন। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। সঞ্জয় মঞ্জরেকর বিরাটের আউটের পর সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিরাট কিছুতেই এভাবে খেলতে যাওয়ার অভ্যেস ছাড়বেন না! স্টার্ক বুদ্ধিমান বোলার। বিরাটের জন্য লম্বা স্লিপ কর্ডন সাজিয়ে রেখেছিলেন। বারবার তিনি বিরাটের উইকেট নিচ্ছেন। এখানে স্লিপে তাঁর ক্যাচ নিলেন স্টিভ স্মিথ। এরপরই শুভমনের (৩১) উইকেট গেল। এলবি হলেন স্কট বোল্যান্ডের বলে। তিরিশ আর চল্লিশের মধ্যে প্রায়শই আউট হন পাঞ্জাব ব্যাটার। রোগটা সারছে না। না হলে যেভাবে খেলছিলেন তাতে লম্বা রানের আশ্বাস ছিল।
আরও পড়ুন-একতাই মূলমন্ত্র, সংহতি দিবসে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
রোহিত রাহুলকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে ছয়ে এলেন। বহুদিন বাদে এত পিছনে এলেন অধিনায়ক। কিন্তু নতুন জায়গা তাঁর জন্য সুট করল না (৩)। ২৩ বল উইকেটে পড়ে ছিলেন স্বভাবসিদ্ধ আগ্রাসন ছেড়ে। উপায়ও ছিল না। স্টার্কের ধাক্কায় ভারতীয় ব্যাটিংয়ের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। কিন্তু বোলান্ডকে উইকেট দিয়ে চলে গেলেন দলের ৮৭ রানে। এরপর ঋষভ পন্থ (২১) যখন কামিন্সের বলে আউট হয়ে গেলেন, ভারত ১০৯/৬। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই রান দুশোতেও যাচ্ছে না। শেষদিকে অশ্বিন ২২ বলে ২২ রান করে গেলেন। ওয়াশিংটনের জায়গায় ফিরেছেন তিনি। এছাড়া নীতীশ রেড্ডির রান ৪২। এই রানটা না হলে ভারত ১৮০ পর্যন্ত যেতেই পারত না।