প্রতিবেদন : মুম্বইতে প্রথমবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সভা। এতেই সবার মন জয় করে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। বিশিষ্টদের প্রতি বিশেষ বার্তা।
শুধু তাই নয়, তাঁকেই মোদি বিরোধী লড়াইয়ে মুখ বলে আখ্যা দিলেন বলিউডের অভিনেতা, পরিচালক-সহ সাহিত্যিক মহল। বুধবার, মুম্বই সফরের দ্বিতীয় দিনে বিশিষ্টজনদের মুখোমুখি হন মমতা। উপস্থিত ছিলেন জাভেদ আখতার, স্বরা ভাস্কর (Swara Bahskar), মহেশ ভাট (Mahesh Bhat), রিচা চাড্ডা (Richa chaddha), অদিতি মিত্তল (Aditi Mittal), মেধা পাটকর (Medha Patkar), শোভা দে (Shobha De)-রা। সেখানে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুশীল সমাজকে একজোট করে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা বলেন তৃণমূল (Tmc) নেত্রী। তিনি বলেন, “প্রত্যেক রাজ্যের এটা হোক। শুরু হোক মুম্বই থেকেই। মুম্বই আর কলকতা একসঙ্গে কাজ করলে দিল্লি ভয় পাবে।’’ কমিটিতে চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর বিশিষ্টজনদেরও সঙ্গে নেওয়ার কথাও বলেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন : ‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে না কংগ্রেস’ ক্ষোভপ্রকাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুম্বইয়ের সঙ্গে কলকাতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মহারাষ্ট্র এবং বাংলার মানুষ সত্যের জন্য লড়াই করতে পারে। তাঁর কথায়, রাজনীতিবিদদের কাজ তাঁরা করবেন। কিন্তু বিজেপিকে হটাতে এগিয়ে আসতে হবে সুশীল সমাজকেও। “দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিশিষ্টজনেরা তাঁদের মতামত-পরামর্শ দিন, যাতে রাজনৈতিক দলগুলির সেই মতো কাজ করতে পারে”- বার্তা মমতার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কম কথা, বেশি কাজে বিশ্বাস করি”। বাংলায় রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি তুলে ধরেন মমতা। জানান-
• বাংলায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে প্রত্যেককে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়
• মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করা হয়েছে
• বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হয়
• বিনামূল্যে সবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা আছে
• কন্যাশ্রী প্রকল্প আছে রাষ্ট্রসঙ্ঘে পুরস্কৃত
• পড়ুয়াদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে
• পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পোশাক, জুতো, ট্যাব দেওয়া হচ্ছে
• মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়
• শিল্পীদের জন্য বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে
• কৃষকদের জন্যও কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু হয়েছে
• এমএসএমই, ই-টেন্ডারিংয়ে বাংলা দেশের মধ্যে প্রথম
সবার কথা মন দিয়ে শোনেন মমতা। প্রথমেই বলেন, “আমি খুব একটা এলিট ক্লাসের লোক নই। একেবারেই তৃণমূল স্তরের মানুষ”। হালকা মেজাজে রসিকতাও করেন। শোভা দে তাঁকে প্রশ্ন করেন, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মুখকে? উত্তরে মমতা বলেন, “সেটা আপনিও হতে পারেন। সব সময় রাজনীতিবিদদেরই যে মন্ত্রী হতে হবে এর কোনও মানে নেই।” এই সময়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, অভিনেতা এবং নাট্যব্যক্তিত্ব হওয়ার পাশাপাশি ব্রাত্য রাজ্যের দায়িত্বশীল শিক্ষামন্ত্রী।
সভায় স্বরা ভাস্কর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। মুনাওয়ার ফারুকি-সহ একাধিক নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জানান, বিজেপি সরকারের আমলে কী ভাবে চাপ সহ্য করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাঁরা। প্রশ্ন তোলেন, UAPA-র প্রয়োগ নিয়ে। এর উত্তরে মমতা বলেন, অনৈতিকভাবে এই আইন প্রয়োগ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বরার কথার উত্তর দেওয়ার পরেই, ফের মাইক তুলে নেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাকে প্রশ্ন করেন, “তোমাকে কবে রাজনীতিতে দেখতে পাব? এরকম দৃঢ়চেতা মহিলাদের রাজনীতিতে প্রয়োজন”।
আরও পড়ুন : ‘আমাদের লক্ষ্য দেশ এবং গণতন্ত্র বাঁচানো’, স্পষ্ট জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, শুধু বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়ে গেলেই হবে না। সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। “আমাদের কেন ঘুরতে হয়? আমরা তো বাংলায় ঠিক আছি। এইজন্যই ঘুরছি, যাতে আমি গেলে আমার সঙ্গে এই লোকেরাও যাবেন। তাহলে প্রতিযোগিতা বাড়বে”। তবে, মুম্বইয়ের সুশীল সমাজ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মোদি-বিরোধী মুখ বলে মনে করছে, তা এদিন তাদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট।