বিভিন্ন ধরনের খাবারের কারণে শরীরে ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সাধারণত খাবার খাওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, রক্তে অ্যান্টিবডি, হিস্টামিন-সহ কিছু কেমিক্যাল বেড়ে যায়, শুরু হয় ‘ফুড অ্যালার্জি’। শরীর এমন কিছু সাধারণ জিনিসকেও ঝুঁকি মনে করে সক্রিয় হয়ে তাকে প্রতিরোধ করতে শুরু করে— তখন সেটাই অ্যালার্জি।
অ্যালার্জি যে কোনও কিছু থেকেই হতে পারে যেমন চিংড়িমাছ, ডিম, কাঁকড়া, বাদাম, নারকেল, দুধ, ময়দা, পনির ইত্যাদি। তাই বলে কি খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেবেন? দেখতে হবে সেই খাবারটা আপনার শরীরে কতটুকু সহনীয়। কারণ কোনও অ্যালার্জিই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একটা বয়সের পর সেরে যায়। তাই বিকল্প খাবারের কথা ভাবুন। আর বাড়াবাড়ি রকম অ্যালার্জি বা ইনটলারেন্স থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অ্যালার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার খান।
আরও পড়ুন-ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গুলি, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনারকে তলব করল বিদেশমন্ত্রক
ফুড অ্যালার্জি বনাম ফুড ইনটলারেন্স
খাবারে অসহিষ্ণুতা এবং খাবারে অ্যালার্জির দুটোই একই ধরনের সমস্যা। সূক্ষ্ম একটা তফাত রয়েছে। খাবারে অ্যালার্জি হয় যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কোনও খাবারের প্রতিক্রিয়া দেখায়। শরীর থেকে হিস্টামিন নির্গত হয় যার কারণে বিপজ্জনক উপসর্গ দেখতে পাই। খাবারে অসহিষ্ণুতা হয় যখন শরীরে কোনও খাবার খাওয়ার পর রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। খাবারে অসহিষ্ণুতার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ শক্তি জড়িত নয়।
গ্লুটেন সংবেদনশীলতা
ইদানীং ‘ল্যাক্টোস ফ্রি’, ‘গ্লুটেন ফ্রি’ জাতীয় খাবার খাচ্ছেন বহু মানুষ। আগে এগুলো ছিল না। কারণ অনেক মানুষকে বলতে শোনা যায় তার গ্লুটেনে অ্যালার্জি আছে। একে গ্লুটেন সেনসিটিভিটিও বলে। গ্লুটেনে অ্যালার্জি রয়েছে যাঁদের তাঁরা গ্লুটেনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরেই পেট ফাঁপে, গ্যাস হয়। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের একটা বড় কারণ হল গ্লুটেন সেনসিটিভিটি। এর পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। গম, বার্লি ও বেশ কিছু দানাশস্য, বাদাম থেকেও হতে পারে গ্লুটেন-অ্যালার্জি। এই সমস্যা থাকলে রুটি, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি খেলে সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন-৯ বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা
দুধে সমস্যা
দুধে অ্যালার্জি থাকলে দুধের জিনিস খেলেই পেটের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। এটাকে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্টও বলে। দুধে থাকে ‘ল্যাকটোজ’। এটি হল শর্করা। এই শর্করা হজম করতে এক বিশেষ ধরনের উৎসেচকের প্রয়োজন হয় যাকে বলে ‘ল্যাকটেজ’। এই উৎসেচক যাঁদের শরীরে তৈরি হয় না তাঁরাই দুধের তৈরি খাদ্যদ্রব্য হজম করতে পারে না।
হাই-ফাইবার সহ্য হয় না
হাই-ফাইবার রয়েছে এমন খাবার বা ফল খেলেও অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে অনেকের। গায়ে র্যাশ বেরিয়ে যাওয়া, বমি ভাব, অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হিস্টামিনের সমস্যা
হিস্টামিন ইনটলারেন্স। এক্ষেত্রে হিস্টামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে হাঁচি-কাশি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হয় অনেকের। তখন হিস্টামিন আছে এমন খাবার খাওয়া চলবে না। যেমন চিজ, ওয়াইন, চকোলেট ইত্যাদি।
সয়াবিনে সমস্যা
সয়াবিনে অ্যালার্জি রয়েছে যাঁদের তাঁরা সয়ামিল্ক খেতে পারবে না, সহ্য হবে না। তাই এমন খাবার খেতে হবে যা উদ্ভিজ প্রোটিনই, কিন্তু সেটা খেলে অ্যালার্জি হবে না।
অ্যালার্জির লক্ষণ বা উপসর্গ
চুলকানি বা আমবাত।
জিভ, মুখ, ঠোঁট ফুলে ওঠে।
মুখে খিঁচুনি হয় বা চুলকানি হয়।
বমি হয়। ডায়ারিয়া হতে পারে।
কারও কারও কোনও নির্দিষ্ট খাবার খেলেই পেটে ব্যথা হয়।
শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। লো ব্লাড প্রেশার হয়। হালকা মাথা ঘোরা থাকে।
সাধারণত চুলকানি থেকে উপসর্গ শুরু হয়, বাড়াবাড়ি হলে অ্যালার্জি থেকে প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে। অ্যালার্জি গুরুতর হলে তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যানাফিল্যাক্সিস। এক্ষেত্রে রোগী শ্বাস নিতে পারে না, চেতনা হ্রাস পায়। প্রেশার অনেকটা নেমে যায়।
এই উপসর্গগুলো খাবার খাওয়ার দু-ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয়। আবার হয়তো কম খেলে সমস্যা হয় না। বেশি খেলে হয়।
তাহলে কী কী খাবেন
দুধে অ্যালার্জি থাকলে ভিটামিন এবং ক্যালশিয়ামের বিকল্প খাবার হিসেবে সয়ামিল্ক, চিয়াসিড, ফ্ল্যাকসিড, ব্রকোলি এবং ফলের মধ্যে কমলালেবু খান।
আটা, ময়দা, নুডুলস কোনও কিছুই খেতে পারছেন না গ্লুটেনে অ্যালার্জির কারণে। বদলে কিনোয়া, ডালিয়া, ব্রাউন রাইস, চালের আটার রুটি খান।
হাই-ফাইবার যুক্ত খাবারে সমস্যা কম, ফাইবার যুক্ত খাবার খান। যেমন বেরি বা পেঁপে, কলা, লেবু খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
হিস্টামিন আছে এমন খাবার যাদের সহ্য হয় না তাঁরা মাছ, ডিম, সবুজ শাক-সবজি নারকেলের দুধ বা কাঠবাদামের দুধ, মধু খেতে পারেন।
সয়াবিন জাতীয় খাদ্যে সমস্যা থাকলে সবুজ শাক-সবজি, বিভিন্ন ফল, ফলের রস, ওটমিল, মাখন, নানা ধরনের বাদাম খেতে পারেন।
আরও পড়ুন-সইফ-কাণ্ড হামলা থেকে তদন্ত, প্রতিপদে বাড়ছে রহস্য
অ্যালার্জি প্রদাহ রুখতে
দই প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টি-অ্যালার্জেটিক। একজিমা জাতীয় চর্মরোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে। শরীরের অন্ত্রকে উন্নত করে অ্যালার্জি প্রতিকার ও প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বায়োফ্ল্যাভানয়েড যা গাছের ছাল ও ফলে থাকে যেমন লাল পেঁয়াজ, আপেল ইত্যাদি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, আঙুরে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ন্যাচারাল অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি উপাদান অ্যালার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, তেল, কিছু বাদামজাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোগ শক্তি বাড়ায়।
এ ছাড়া ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কারকিউমিনে রয়েছে যেমন হলুদ, ব্রোমালিন রয়েছে যেমন আনারস। এগুলো অ্যালার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।