প্রতিবেদন : গা-জোয়ারি না করে ভোট করতে হবে। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস না দেখে ওয়ার্ডে বিরোধীদের বাড়িতেও প্রার্থীকে যেতে হবে। দু’বেলাই প্রচার করতে হবে। সরকারের উন্নয়নের খতিয়ানকে প্রচারে আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে। যাঁরা এবার টিকিট পাননি, তাঁরা যদি মনে করেন কোনওরকম দলবিরোধী কাজ করবেন তাহলে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে দল তাঁকে বহিষ্কার করতে পিছপা হবে না। গা-জোয়ারি করে কেউ জিতে গেলেও তার পরিণাম ভাল হবে না। এক ঝলকে এই হল শনিবার মহারাষ্ট্র নিবাস হলে দলের পুরপ্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকের নির্যাস। দলের গাইডলাইন। যা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা পুরভোটকে কেন্দ্র করে প্রচার তুঙ্গে রয়েছে। এবারে ৩৯ জন প্রথমবারের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। বাকিরা পুরনো। সকলের উদ্দেশেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আরও বেশি করে মানুষের দরজায় প্রার্থীদের যেতে হবে। সরকারের উন্নয়নের কাজগুলিকে আরও বেশি করে প্রচারে নিয়ে আসতে হবে। বিধানসভা ভোটে বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা বাংলায় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চান। তৃণমূল কংগ্রেসকেই চান। তাই কোনওভাবেই কেউ গা-জোয়ারি করে ভোট করবেন না। কলকাতাবাসী যেন উৎসবের মেজাজে ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন হল গণতন্ত্রের উৎসব। সেই উৎসবে সকলকে শামিল করতে হবে। এরপরেই অভিষেকের সংযোজন, কেউ যদি মনে করেন, গা-জোয়ারি করে ভোট করবেন, ভুল ভাবছেন। দল নজর রাখছে। নজর রাখবে। গা-জোয়ারি করে কেউ জিতে গেলেও দল তাঁকে রেয়াত করবে না। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল।
আরও পড়ুন : Russia থেকে অস্ত্র কিনলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা
কেন পুরপ্রার্থীদের এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে অভিষেক বলেন, মনে রাখতে হবে বিরোধীরা ওঁত পেতে আছে তৃণমূল কংগ্রেসের ভুলের জন্য। তা হতে দেওয়া যাবে না। দল বড় হয়েছে। অন্য রাজ্যেও তৃণমূল কংগ্রেস পা রাখছে। যেখানে তৃণমূল পা রাখছে, হয় সেখানে মুখ্য বিরোধী দল হচ্ছে নয়তো সরকার গঠনের জায়গায় রয়েছে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে চলেছি বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে। ২০২৪-এ বড় লড়াই। বিজেপিকে হঠাতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নন। তিনি দেশনেত্রী। তাই এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে বিরোধীরা কোনও সুযোগ পায়। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে হবে। এটাই শেষ কথা। এর যেন নড়চড় না হয়। বক্তব্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল নেতা তথা পুরভোটে প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে জয়লাভ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও জোরাজুরি করা যাবে না। দল এখন যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে কেউ যদি এ ধরনের কাজ করেন তা শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে আসবেই। সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী পাঁচবছর তাঁকে কাজ করতে দেওয়া
হবে না।
দলে বিদ্রোহীদের বিষয়েও এদিন অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যাঁরা টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা অন্যায় করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে জানান অভিষেক। একইসঙ্গে বার্তা দেন, যাঁরা পুরভোটে টিকিট পাননি, তাঁরাও তৃণমূলের সৈনিক। সবাইকে নিয়েই ভোটের ময়দানে লড়াই করতে হবে। সব মিলিয়ে বৈঠকে পুরভোটের ‘ডুস অ্যান্ড ডোন্টস’ বাতলে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক শনিবার। পুরভোটের জন্য নির্বাচনী সভা করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ ডিসেম্বর বেহালা চৌরাস্তা ও বাঘাযতীন যুব সংঘের মাঠে একই দিনে দুটি সভা করবেন তিনি। এদিনের বৈঠকে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরপর একে একে বলেন সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাস, দেবাশিস কুমার। এদিনের সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম।