লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প অন্যরাও নিচ্ছে। দুয়ারে রেশন প্রকল্প, দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্য সাথী থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প সবকিছুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে এগোতে চাইছে অন্য সব রাজ্যসরকার। এমনকি বি জে পি শাসিত রাজ্যে গুলোও নিচ্ছে এই সব প্রকল্প। মানুষের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প ইতিমধ্যেই ভারত জুড়ে রোল মডেল । পুনঃপ্রমাণিত, ভারতের আগামী বাংলার জননেত্রীর হাতেই নিরাপদ। লিখছেন ফারুক আহমেদ
আরও পড়ুন-জিতল রিয়াল, হার বার্সেলোনার
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (এন এফ এইচ এস) ২০১৮-২০-র তথ্য এবং বহুমুখী দারিদ্র্য সূচক (এম পি আই) সংক্রান্ত নীতি আয়োগের সমীক্ষায় প্রকাশিত উপাত্ত বলছে, লিঙ্গ সাম্য সূচক বা জেন্ডার ইকোয়ালিটি ইনডেক্স পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫তে ছিল ২৩৮ আর ২০২০তে সেটা বেড়ে হয়েছে ২৬৮। একইভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়ন সূচক বা ফিমেল এম্পাওয়ারমেন্ট ইনডেক্স একই সময়কালে ১৪১ থেকে বেড়ে ২৫০ হয়েছে।
এই অগ্রগতি কোনও আলাদিনের প্রদীপ সম্ভবায়িত করেনি। এর পেছনে রয়েছে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের পর এক জনমুখী প্রকল্প। কন্যাশ্রী থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার । এক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষণীয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যাবলীর পদাঙ্ক অনুসরণের ঝোঁক ক্রমবর্ধমান। এই সূত্রে একথা পুনরায় প্রমাণিত, বাংলা আজ যা ভাবে, বাকি দেশ তা ভাবে আগামীকাল।
আর তা হবে নাই বা কেন?
আরও পড়ুন-Suvendu Adhikary: পুরভোটে উধাও, দলীয় বিধায়করাও অসন্তুষ্ট, বিজেপিতে কোণঠাসা এবার শুভেন্দু
কেইনসীয় অর্থনীতির মৌলিক নীতি হল, অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে হলে কবে বাজার চাঙ্গা হবে, তার জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না। সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। বাজার চাহিদা বৃদ্ধির জন্য নগদ অর্থের যোগান বাড়াতে হবে। মানুষের হাতে নগদ অর্থ জুগিয়ে সরকারকে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই মা মাটি মানুষের সরকারের যুগান্তকারী প্রকল্প ‘ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ‘।
এখনও পর্যন্ত প্রায় দুই কোটির বেশি মহিলা এই প্রকল্পে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশই তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসির আওতাভুক্ত। চারিদিকে আলোড়ন তুলেছে এই প্রকল্প। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম জমা পড়তেই ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকেই গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ঢুকছে। বাংলার অর্থনীতির পরিসরে নারীর মর্যাদা বজায় রাখতে এমন অভিনব উদ্যোগ আগে কখনও দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন-চোটে জেরবার ইস্টবেঙ্গল
কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণ ও পূর্ববর্তী বাম জমানার পাহাড়প্রমাণ দায়ের সুদ মেটাতে গিয়ে ভয়ানক আর্থিক সংকটের মধ্যে জননেত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার। তবুও এই সরকার ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘সবুজসাথী’ “স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড”-এর মতো ডজনখানেকেরও বেশি জনমুখী প্রকল্প চালু করায় সব ধর্ম সম্প্রদায়ের আম-জনতা উপকৃত ।
আরও পড়ুন-লক্ষ্মণ বললেন বিরাটকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে
‘মার্কসবাদী’দের মতো তিনি তত্ত্বের কচকচানি না করেও গরিবদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অবহেলিতদের তিনি সম্মান জানিয়েছেন। দেশ জুড়ে সর্বত্র বিকৃত দর্শন প্রচারক বিজেপি – আর এস এস-এর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বিদ্বেষের বিষ বাষ্প না ছড়িয়েও, স্রেফ মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে, বিপন্ন মানুষের সহমর্মী হয়েও, বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায়।
আরও পড়ুন-অমিত শাহর নিরাপত্তা বাহিনীর ‘ভুলে’ রক্তাক্ত ওটিং, নাগাল্যান্ডে নিহত ১৩
দশভুজা দুর্গার মতো তাঁর প্রকল্পগুলি। ‘যুবশ্রী’ ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘সবুজ সাথী’- সহ নানাবিধ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ইতিহাস রচনা করেছে বা করছে। নেত্রীর কর্মকুশলতা দশ দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অজস্র প্রতিবন্ধকতা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা সত্ত্বেও ১১ বছরে যা উন্নতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে, তাতেই তিনি নিজেকে যোগ্য ভারতনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মোদি- শাহর মতো ১৫ লাখ টাকার জুমলা রাজনীতি তিনি করেননি। ভারতের জুমলা পার্টির প্রকল্পগুলির বিবরণ দিতে বসলে পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার একটি পঙক্তিই যথেষ্ট। ” দেশের লোকের ছাড়ছে নাড়ি। বাড়ছে দলের গাড়ি বাড়ি।” অপশাসককে অপসারিত করে বাংলার নেতৃত্বেই দিল্লির সরকার গঠনের সম্ভাবনা তাই প্রতিদিন উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে।
আরও পড়ুন-আগামী বছরের শুরুতেই আসছে করোনার থার্ড ওয়েভ, জানাল কানপুর আইআইটি
এটা কোনও অন্ধ ভক্তের তোষামুদে কথা নয়। বিভিন্ন স্তরে একাধিক গবেষণার ফলেও এটা স্পষ্ট।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের গবেষকদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এমনই একটি তথ্য।
কিশোরী মেয়েদের শিক্ষায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রভাব কেমন তা দেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ওপর এম. ফিল কোর্সের গবেষণার কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক : দেবদীপ ভট্টাচার্য ,মোসিরা পারভীন ও ঋততপা চক্রবর্তী ।
ড. দেবযানী গুহ’র তত্বাবধানে উপরোক্ত গবেষকেরা যথাক্রমে পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলী জেলার বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন সেগুলি হল
১. কন্যাশ্রী প্রকল্প মেয়েদের কমবয়সে বিয়ে বন্ধ করবার ও বয়ঃসন্ধির মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প।
২. এই প্রকল্পের স্কলারশিপ (K1) স্কুলে পড়া মেয়েদের আর্থিক সহায়তা দান করে।
আরও পড়ুন-
৩. এই স্কিম বালিকা-শিক্ষার উন্নতি ত্বরান্বিত করেছে, বিদ্যালয়ে মেয়েদের উপস্থিতির হার বাড়িয়েছে।
৪. এর ফলে মেয়েদের বিদ্যালয় ছুটের হার কমছে।
৫. এই প্রকল্প ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা জোগাচ্ছে।
৬. এই প্রকল্প বাল্য বিবাহ রোধে সাহায্য করছে।
৭. অপরিণত মায়েদের মৃত্যু হার কমেছে এই প্রকল্পের ফলে।
৮. এই প্রকল্প সমাজিক সচেতনতা তৈরি করেছে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে, মেয়েদের স্বাধীন করেছে, তাদের দক্ষতা দিয়েছে; ফলে তাদের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে।
৯. কন্যাশ্রী প্রাপকরা ‘কন্যাশ্রী ক্লাব” এর মাধ্যমে অন্য মেয়েদের যেমন এই প্রকল্পের সুবিধাগুলো বোঝাতে পারছে তেমনি নারী পাচার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে।
১০. এই প্রকল্পের ফলে মেয়েদের সামাজিক শক্তি ও আত্মমর্যাদা বেড়েছে।
এক কথায় নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প হল প্রথম ও অত্যন্ত উপযোগী একটি ধাপ। এই ধাপ নির্মাণের অগ্রনায়িকা স্বাভবিকভাবেই এখন আসমুদ্র হিমাচলের রোল মডেল।