নবনীতা মণ্ডল নয়াদিল্লি : সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানালেন, তৃণমূল কংগ্রেস তার শক্তি বাড়াবে৷ রাজ্যে রাজ্যে সংগঠন তৈরি করে বিজেপিকে তখ্ত থেকে সরাতে সবরকমের উদ্যোগ নেবে৷ সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে নিয়ে এগিয়ে যাবে৷ একইসঙ্গে দলীয় সাংসদদের সাসপেনশন নিয়ে সাংসদের সাফ কথা, ক্ষমা যদি চাইতে হয়, তাহলে চাইবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি৷ তিনি সংসদের মধ্যে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন৷ সংসদ ভবনে এসেই অভিষেক এদিন সরাসরি গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের ধরনাস্থলে চলে যান৷ সাংসদদের সঙ্গে বিক্ষোভে বসে পড়েন৷ একের পর এক প্রশ্নের জবাবে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে থাকেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক৷
বিষয় কংগ্রেস : ইউপিএ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ইউপিএ মোটেই তৃণমূল ভাঙেনি৷ কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও আমরা একই অভিযোগ করতে পারি৷ কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট লড়তে গিয়ে বিজেপিকে পরোক্ষে সাহায্য করেছে৷ এটা বাস্তব, দেশের মানুষ ভরসা করেছিল কংগ্রেসকে৷ সেই আস্থা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস৷ যে কারণে স্বৈরাচারী হয়েছে৷ কংগ্রেস যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে তৃণমূল বসে থাকবে না৷ বিজেপিকে প্রতিরোধ করতে নিজেদের শক্তি বাড়াবে৷ কংগ্রেস যেভাবে চলছে তাতে আগামী ৫০ বছরেও বর্তমান সরকারের প্রধান সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে থেকে যাবে৷ সাংসদদের সাসপেনশন : অভিষেক বলেন, সংসদের মধ্যে দাঁড়িয়ে অশালীন, অভব্য শব্দ ব্যবহার করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি৷ তিনি যদি ক্ষমা না চান, তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস কেন চাইবে? সরকার শুধু বিরোধীদের ক্ষমা চাইতে বলছে৷ তার কারণ, বিরোধীরা সরকারের স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছে৷ আগে ওরা নিজেদের ঘর সামলাক৷ ত্রিপুরার ভোট : ত্রিপুরায় পুরভোটের ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বসিত অভিষেক৷ বলেন, এটা তো দেশের কাছে একটা উদাহরণ৷ শূন্য থেকে শুরু করে মাত্র তিন মাসে ২০% ভোট পেয়েছে তৃণমূল৷ বাংলায় বিজেপির এই ভোটটা পেতে ২০ বছর লেগেছিল৷ আর ত্রিপুরায় কী ঘটেছে দেশের মানুষ দেখেছেন৷ প্রার্থীরা প্রচার করতে পারেননি৷ নিজের ভোট নিজেই দিতে পারেননি৷
আরও পড়ুন : বিডিও–আইসিদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, বন্ধ করুন বিএসএফের ‘অনধিকার অনুপ্রবেশ’
রাজ্যে রাজ্যে তৃণমূল : পশ্চিমবঙ্গে যেমন সকলে ভোটপ্রচারে যেতে পারেন, তেমনি গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয় বা হরিয়ানায় গিয়েও দলের বিস্তার ঘটানোর অধিকার আমাদের আছে৷ সেই কাজই আমরা করছি৷ একটার পর একটা রাজ্যে আমরা ইউনিট তৈরি করছি৷ বুধবার হরিয়ানায় পার্টি অফিসেরও উদ্বোধন হচ্ছে৷
শরদ–মমতা বৈঠক : মুম্বইয়ের বৈঠক প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, মানুষের ভুলে গেলে চলবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শরদ পাওয়ার পুরনো সহকর্মী৷ তাঁরা দেখা করতে পারেন৷ আলোচনাও করতে পারেন৷
বুধবারের কর্মসূচি : সাংসদদের নিয়ে সংসদের ৬৩ নম্বর ঘরে বৈঠকে বসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সিদ্ধান্ত হয়, নাগাল্যান্ডে গণহত্যার প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস তার প্রতিনিধি দল পাঠাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে৷ প্রতিবাদপত্র তুলে দেবে তাঁর হাতে৷ আজ, বুধবার সময় চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে৷ দলের নেতৃত্ব দেবেন সুখেন্দুশেখর রায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মূল দাবি থাকবে, নিহতদের পরিবারকে সরকার কী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে তা প্রকাশ্যে জানাক৷ এছাড়াও আফস্পা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অবস্থান পরিষ্কার করুক৷
সাংসদদের আচরণবিধি : বৈঠকে প্রাথমিকভাবে দলের বেশকিছু আচরণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন৷ সেগুলি হল— (১) লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের দলীয় নিয়ম মেনে চলতে হবে৷ (২) অধিবেশন চলাকালীন সংসদে উপস্থিত থাকতে হবে৷ (৩) কোনও সাংসদ অনুপস্থিত থাকলে কারণ জানিয়ে চিঠি দিতে হবে৷ না দিলে শোকজ করা হবে৷ (৪) অধিবেশন চলাকালীন প্রত্যেকদিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সংসদে ঢুকতে হবে৷ রেজিস্টার খাতায় সই করতে হবে৷ (৫) অধিবেশন শুরুর আগে যে যে বিল আসছে সেই বিল নিয়ে সাংসদদের বক্তব্য কী হবে তা আগাম আলোচনা করে নিতে হবে৷ (৬) রাজ্যসভা–লোকসভা কিংবা নবীন–প্রবীণ ভেদাভেদ নয়, সাংসদদের মধ্যে সুষ্ঠু কাজের জন্য কমিটি তৈরি হবে৷ (৭) মঙ্গলবারের বৈঠকে যাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হবে। অভিষেক ছাড়াও এদিন বক্তব্য রাখেন কাকলি ঘোষদস্তিদার, মহুয়া মৈত্র, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়৷