অলোক সরকার
আকাশ ভাসল। নাইটদের কপালও কি বৃষ্টিতেই ভেসে গেল? অঙ্ক সেটা বলছে না। বাকি পাঁচ ম্যাচের সবক’টিতে জিতলে ১৬ পয়েন্টের ম্যাজিক ফিগারে যেতে পারেন রাহানেরা। কিন্তু অঙ্ক আর বাস্তব কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না এই নাইটদের দেখে!
তাহলে যা দাঁড়াল, আরও গাড্ডায় পড়েছে শাহরুখ খানের দল। মরশুমের এটাই প্রথম পণ্ড ম্যাচ। এক-এক পয়েন্টে ভাগাভাগি হল শনিবারের খেলা। এতে কেকেআরের মতোই মুশকিলে পড়েছে পাঞ্জাব কিংস। দু’শো প্লাস রান করেও জেতা হয়নি তাদের। রবিবার মুম্বই আর লখনউ। যারা জিতবে তারা টপকে যাবে শ্রেয়সদের। এদিন আর এক পয়েন্ট পেলে এগিয়ে থাকতেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-এক পয়েন্টই অনেক, বলছে কেকেআর
কেকেআর ইনিংসে সবে এক ওভার বল হওয়ার ওর শুরু হয় ঝড়। তারপর বৃষ্টি। আইপিএল আর কালবৈশাখী কিছুটা সমার্থক। এপ্রিল মাসে ঝড় হবেই । আইপিএলও চলবে। এদিন ঝড়ের তোড়ে গোটা মাঠ ঢেকে রাখাই ছিল মাঠ কর্মীদের জন্য চ্যালেঞ্জ। একটা দিক ওরা ঢাকছেন তো আরেক দিকে প্লাস্টিক কভার উড়ে যাচ্ছে। গ্যালারি ততক্ষণে অনেক ফাঁকা। সবাই মাথা বাঁচাতে গ্যালারির নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। পরের দিকে ঝড় একটু কমলেও বৃষ্টির প্রকোপ বেড়ে গিয়েছিল।
বৃষ্টি আর ঝড়ে সবথেকে বেশি মুশকিলে পড়েছিল কেকেআর। বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিততে হবে এই ছিল অঙ্ক। এখন খেলা না হলে মুশকিল পয়েন্ট টেবলে সাতে থাকা দলেরই। আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী খেলা শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময় থেকে বাড়তি আরও ৬০ মিনিট দেখা যায়। ফলে ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত সাড়ে দশটা, তখনও সামনের ছবিটা অস্পষ্ট। ক্লাব হাউসের দু’পাশের গ্যালারির নিচে তখন মানুষের ঢল। সবাই খেলা হওয়ার আশা ছেড়ে বাড়ি ফেরার হিসেব করছেন। শেষ ঘোষণা এল এগারোটায়।
শেষপর্যন্ত খেলা আর হল না। এগারোটায় ঘোষণা হয়ে গেল ম্যাচ বাতিল। এতে পাঞ্জাব ১ পয়েন্ট পেয়ে উঠে গেল ১১ পয়েন্টে। ৯ ম্যাচে তাদের এই পয়েন্ট। পাঞ্জাব আপাতত চারে। উল্টোদিকে কেকেআরের ১ পয়েন্ট পেয়ে হল ৭ পয়েন্ট। এতে তারা যেখানে ছিল সেখানেই থাকল। সাত নম্বরে। নাইটদের আকাশ অতএব সেই মেঘাচ্ছন্নই থেকে গেল।
অনেকে এদিন মাঠে এসেছিলেন শ্রেয়সের ব্যাট দেখবেন বলে। কিন্তু পাঞ্জাব অধিনায়ককে ঘিরে যে বদলার বারুদ তৈরি হয়েছিল, তিনি সেই রাস্তাতেই গেলেন না। যখন উইকেটে এলেন, প্রভসিমরন ওয়েল সেট। শ্রেয়স তাঁর হাতে ব্যাটন ছেড়ে দিলেন। প্রভসিমরন ফিরে যাওয়ার পর জস ইনগ্লিশ ৬ বলের ক্যামিও করে যান। মাঝখানে ম্যাক্সওয়েল (৭) যথারীতি ব্যর্থ। জেনসেনও (৩)। আর শ্রেয়স? তিনি চুপচাপ ১৬ বলে ২৫ করে গেলেন। আর পাঞ্জাব অধিনায়ক এতক্ষণ ছিলেন বলেই রানটা ২০ ওভারে ২০১/৪ হল।
পাঞ্জাব ইনিংস বেশ সাবধানে শুরু হয়ছিল। পাওয়ার প্লে-র শেষে রান ছিল ৫৬/০। ৬ ওভারে এটা ভাল রান। কিন্তু সাংঘাতিক কিছু নয়। তবু ভালই। প্রভসিমরন সিং আর প্রিয়াংশ আর্য্য এবার নিয়মিত রান করছেন। প্রিয়াংশ সম্পর্কে তাঁদের স্পিন কোচ সুনীল জোশি আগের দিন বলছিলেন, ছেলেটা এবারের আআইপিএলের সেরা আবিষ্কার। খুব ভাল খেলছে।
শ্রেয়স আইয়ার কেন টসে জিতে ব্যাট নিলেন, সেটা বোঝা গেল। এটা দুটো ম্যাচ খেলা হয়ে যাওয়া উইকেট। এখানে পেস-বাউন্স প্রথমদিকে সিমারদের সাহায্য করে। পরে স্পিনাররাও উইকেট থেকে সাহায্য পায়। নাইটরা এদিন চেতন শাকারিয়া ইমপ্যাক্ট হিসাবে খেলিয়ে দিল কিন্তু শাকারিয়া আর বৈভব দুজনেই প্রথম স্পেলে ছাপ ফেলতে পারেননি। সিমারদের সুবিধার ব্যাপারটা আসলে নজরেই আসেনি। একমাত্র রাসেল কিছুটা ভাল বল করলেন।
৩০ লাখের বেস প্রাইস থেকে পাঞ্জাব প্রিয়াংশকে ৩.৮ কোটিতে কিনেছে। দিল্লি প্রিমিয়ার লিগে পরপর ছয় ম্যাচে ছ’টি সেঞ্চুরি করে প্রীতিদের নজরে এসেছিলেন দিল্লির অশোকনগরের তরুণ। চেন্নাই ম্যাচে ৩৯ বলে সেঞ্চুরি করেছেন। এদিন ৩৫ বলে ৬৯ করে ফিরে গেলেন রাসেলের বলে। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, প্রিয়াংশ নাইট বোলিংকে চাপে রেখেছিলেন। আর সেটা দ্রুত প্ল্যান এ পাল্টে বি করে। যেমন রিভার্স ছক্কাটাই ধরা যাক। পা বাড়িয়ে পাবেন না দেখে দ্রুত রিভার্সে চলে গেলেন।
তবে কেকেআর সুযোগটা দিয়েছে। যুক্তি বলে তোমার সেরা বোলারকে শুরুতেই রাখো যাতে ব্রেক থ্রু করা যায়। নাইটদের সেরা বোলার বরুণ। তাঁকে প্রথম দুটো ওভার বল করিয়ে রাহানে বিশ্রামে পাঠিয়েছিলেন। আবার আনেন চতুর্দশ ওভারে। ততক্ষণে ঘর গুছিয়ে নিয়েছেন প্রভসিমরণরা (৮৩)। বরুণ ফিরে এসে দেন ১৯ রান। বরুণ-নারিনকে দু’দিকে রাখলে পাঞ্জাব এত আরামে এগোতে পারত না। হায়দরাবাদ ও গুজরাট ম্যাচে এই উইকেটে রান হয়েছে। কিন্তু শক্তি তো বরুণরাই। তাহলে শ্রেয়সদের জন্য এমন জামাই আদরের উইকেট কেন? ওরা সেই সুযোগে দু’শো পার করে দিলেন।