কেএমসিতে আবার টিএমসি। এটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ১৯ ডিসেম্বরে ভোটের আগেই কেন এরকম মনে হচ্ছে? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণে শিক্ষক বিজন সরকার
কলকাতা পুরসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে জয় শুধুই সময়ের অপেক্ষা। প্রার্থী তালিকায় যেমন আছে দলের বেশকিছু পোড় খাওয়া মুখ, তেমনই এক ঝাঁক নতুন মুখের মধ্যে বাদ যায়নি তরুণ তুর্কিরাও। নবীনে প্রবীণে দারুণ সমন্বয়। বরাবরের মতোই।
আরও পড়ুন-KMC 120: বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ডাবল হ্যাট্রিকের পথে বুয়া
ছ’মাস আগের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাত্র দশটি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল গেরুয়া পার্টি। যে দশটি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল, সেখানকার মানুষজন ভেবেছিলেন পেগাসাস অধিকারীরা হয়ত সরকারে আসবেন। তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। পরবর্তীতে বিজেপির শোচনীয় হার, নেতাদের মোহভঙ্গ এবং দলছাড়ার হিড়িক মানুষ দেখেছেন। ভোট পরবর্তী পর্যায়ে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতাদের মুখে ভোটে অর্থের এবং নারীর ব্যবহার সম্পর্কেও নানা টিপ্পনি শোনা গেছে। ফলে এসব দেখে ও শুনে সাধারণ মানুষ গেরুয়া পার্টির প্রতি তিতিবিরক্ত।
আরও পড়ুন-তৃণমূল নেত্রী যা বলেন, সেটা করে দেখান আর বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দেয় সেটাকেই ভাঙে: অভিষেক
ছমাস আগেও যেখানে ভোটের টিকিট পাওয়ার জন্য গেরুয়া পার্টির নেতাদের লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো, সেখানে কাউন্সিলর ইলেকশনে দাঁড়াতে নেতারা রাজি হচ্ছেন না। এলাকায় ভোটের কাজের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। পুরনো পার্টি কর্মীরা অনেকে বসে গেছেন, টাকা দিয়েও ভোটের কাজ করার মতো কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। আদি ও নব্যর লড়াই এমন চেহারা নিয়েছে যে অভিযোগ উঠছে, বিজেপি ভোটপ্রার্থীদের ভোটের কাজ করার জন্য বিজেপির কর্মীরাই পাঁচশো টাকা করে চাইছেন।
এর বিপরীতে তৃণমূলের প্রচারে জনজোয়ার। পুরভোটের প্রচারকে কেন্দ্র করে নতুন প্রার্থীরা বেশ চনমনে। পুরনোদেরও জনসংযোগের খিদে চোখে পড়ার মতো। পরিতাপের বিষয় একটাই। প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিশেষ করে রাজ্য বিধানসভার ভোটের নিরিখে যারা প্রধান বিরোধীপক্ষ তাদেরকে দূরবীণে চোখ রেখেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন-তেলের দাম
বামজমানার মতো নোংরা রাস্তা এখন ইতিহাস, সেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে এখন নোংরা পরিষ্কার করা হয়। পার্কগুলির রক্ষনাবেক্ষণ সারাবছর ধরেই হয়। সর্বত্র আলোর ব্যবস্থা আছে। শহরবাসীকে জলের জন্য কোনও ট্যাক্স দিতে হয়না। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে কিন্তু জলের জন্য ট্যাক্স দিতে হয়। যেমন, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায়। ত্রিপুরার মানুষকে জলের জন্য ৪০০ টাকা করে কর দিতে হচ্ছে যা ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বেড়ে হবে ২৪০০ টাকা।
তাই বাংলার মানুষ আর যাই করুন খাল কেটে, গেরুয়া কুমিরকে ডেকে আনবেন না, নিশ্চিত।
সাধারণ মানুষ তথা তরুণসমাজের তৃণমূল কর্মীদের কাছে পাওয়া যথেষ্ট সহজ। সারাবছর দুগ্গা পুজো হোক বা হরিনামের আসর, রক্তদান শিবির হোক বা পাড়ার ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক অনুষ্ঠান, উদ্যোক্তা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের ছোট বড় নেতারা। রাত বিরেতে তাঁরাই মানুষের কাজে, মানুষের পাশে।
আরও পড়ুন-সুরক্ষা বলয়ে ফের বিরাটরা
কলকাতা যে তিলোত্তমা হয়ে উঠেছে তার নেপথ্যেও অবিসংবাদী কারিগর মমতা বন্দোপাধ্যায়। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত হোক বা পুরসভা, মহিলাদের জন্য তেত্রিশ শতাংশ আসন সংরক্ষনের মধ্যে দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত জননেত্রী এক নি:শব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন।
এরই উল্টোদিকে মোদী জমানায় সারাদেশে মেয়েদের আয় নিম্নমুখী লক্ষনীয় হারে। জ্বালানি গ্যাসের দামে বেলাগাম বৃদ্ধিতে জেরবার মা-বোনেদের মুখের উজ্জ্বলতা ম্লান হয়েছে, আর তার সঙ্গে প্রকট হয়েছে প্রচারসর্বস্ব প্রধানমন্ত্রীর উজ্জ্বলা যোজনা প্রকল্পর অন্ত:সারশূন্যতা।
কলকাতাবাসীকে অনেক সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করেছে এই মা-মাটি-মানুষের সরকার। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পর আওতায় এসে নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই শুধু নয়, দক্ষিণ ভারতেও বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। করোনাকালে মানুষ বিজেপির মন্দির মসজিদ গির্জার রাজনীতিতে নয়, চব্বিশ ঘন্টা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে, ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের ওপরেই ভরসা রেখেছেন, তার বিচক্ষণতার পরিচয় পেয়েছেন পদে পদে, যেখানে একেরপর এক বিজেপিশাসিত রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মুড়ি মুড়কির মতো মানুষ মরেছে শুধু সদিচ্ছার অভাবে। সাধারণ মানুষ সব দেখেছেন, বুঝেছেন, নিক্তিতে মেপেছেন, তারপর তৃতীয়বারের জন্য এই সরকারকে বিপুল সমর্থন জানিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় এনেছেন। কলকাতার আগামী পুরভোটেও সেটাই হতে চলেছে।
আরও পড়ুন-দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই শেষ সুযোগ পাচ্ছেন ধাওয়ান
নাগরিক পরিষেবার পাশাপাশি কলকাতা শহর দেশের বড় শহরগুলির নিরিখে নিরাপদতম। শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেশের মধ্যে যে সেরা সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কলকাতা তথা এই বাংলায় সংখ্যালঘু থেকে তপসিলি জাতি উপজাতির মানুষ আমরা একসাথে বসবাস করেছি, নিজ নিজ ধর্মাচরণ করেছি বহুবছর ধরে বিনা বাধায়। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে তপসিলি জাতি উপজাতি সম্প্রদায়ের উপর যে অকথ্য অত্যাচার চলে তার পাঁচ শতাংশও এরাজ্যে কখনও ঘটেনি।
বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসব। এতে শুধু আপামর বাঙালি নয়, সর্বধর্মের ও বর্ণের মানুষ অংশীদার হন। এর জৌলুসের এক ঝালক জননেত্রীর অনুপ্রেরণায় সারা দেশবাসী দেখতে পান রেড রোডে অনুষ্ঠিত অন্তর্জাতিক দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন কার্নিভালে। এছাড়া ঈদ, মহরম, বড়দিন কার্নিভালের আলোর রোশনাইয়ের টুকরো টুকরো ছবির কোলাজে ধরা পড়ে জননেত্রীর সেই স্লোগান – ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ । এটাই তো পথ দেখাচ্ছে এক আগ্রসনমুক্ত ভারতের। সকল ভারতবাসীকে স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা যোগাচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ করার লক্ষ্যে স্থিত হওয়ার জন্য। তাই কোন চক্রান্তেই, বাংলায় সম্প্রীতির বাতাবারণ কখনও নষ্ট হয়নি আর এখানকার সচেতন মানুষ তা হতে দেবেনও না। কলকাতার পুরভোট সেই বার্তাই আবার সজোরে জানিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন-ঘোষণার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই “গৃহলক্ষ্মী কার্ড” জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, প্রবল চাপে বিজেপি
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি আসনে নির্বাচন। কিন্তু এর মধ্যে কটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেস হারবে তা এখনও পর্যন্ত অতিবড় তৃণমূল সমালোচকও বলতে পারছেন না। তাই তর্ক নয়, বিশ্বাস, এবারেও ১৪০টিরও বেশি আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হবে।
জোড়াফুলের টানা জয়ের হ্যাটট্রিক কেবল সময়ের অপে