গ্রাসরুট স্তরের রাজনীতি বুঝতে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী তাঁর বিদেশফেরত পুত্র কবীরকে পাঠাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামে। রাজনীতির পাঠটা যাতে সে হাতে-কলমে পায়। কারণ বিদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ও রিসার্চ করলেও দেশের মানুষের সঙ্গে মিশে, মানুষের মধ্যে থেকেই যে রাজনীতির সম্যক জ্ঞান অর্জন হয় সেটা ছেলের বোঝা দরকার। এই প্রথম কবীর গ্রামে যায়। এবং গ্রামের প্রেমে পড়ে যায়। শুধু গ্রাম, গ্রামের মানুষ, গ্রামের পরিবেশই নয়, বাড়তি প্রেম তৈরি হয় গ্রামের বনমালী মাস্টারমশাইয়ের মেয়ে পায়েলের প্রতি। এরকম প্রত্যন্ত একটি গ্রামেও যে এরকম আধুনিক একটি মেয়ে তার আধুনিক ভাবনা-চিন্তা, কাজকর্ম নিয়ে থাকতে পারে কবীরের ধারণা ছিল না। পায়েল তেমনই দারুণ একটি মেয়ে। খুব সাধারণ। গার্ল নেক্সট ডোর চরিত্র। কিন্তু বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত স্বচ্ছ ধ্যান-ধারণায় জীবন গড়তে চাওয়া মেয়ে। ওর এই ভাবনার ছোট্টবেলা থেকে সঙ্গী অয়ন, যার সঙ্গে ঝগড়া, দুষ্টুমি, খুনসুটি, বন্ধুত্বে বড় হয়েছে। পায়েল রাজনীতি সচেতন ও কলেজের জেনারেল সেক্রেটারি। অয়ন ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। অয়ন পিতৃ-মাতৃহীন ছেলে, মাস্টারমশাইয়ের কাছেই মানুষ, মাস্টারমশাই তার গুরু, তাঁর কাছ থেকেই ওরও রাজনীতির হাতেখড়ি। কবীর গ্রামে আসার পর পায়েলের জীবনে একটা তোলপাড় তৈরি হয়। কবীরকে দেখে ও প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হয়। কবীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অয়নেরও। তিনজনেই দারুণ বন্ধু হয়, কারণ তিনজনেরই কমন ইন্টারেস্ট রাজনীতি, গ্রামের মানুষের হিত আর এভাবেই বন্ধুত্ব ও মুগ্ধতার মধ্যে অজান্তেই টানাপোড়েন শুরু হয়। আর এখানেই রাজা চন্দের ‘আম্রপালী’ মেনস্ট্রিম বাংলা ছবির ছক থেকে আলাদা হয়ে যায়। দুই হিরোর লাভ ইন্টারেস্ট এক হয়ে গেলে দুজনের মধ্যে যে মারকাটারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ঈর্ষা, শত্রুতা তৈরি হয় আর তার ফলস্বরূপ বাধ্যতামূলকভাবে কিছু ফাইট সিকোয়েন্স, কন্সপিরেন্সি সিকোয়েন্স দেখতে দর্শক বাধ্য হয় তা এখানে হচ্ছে না।
পরিচালক রাজা চন্দের কথায়, “আমি আমার স্টোরি-টেলিংটা বদলে দিয়েছি এখানে। যে প্যাটার্নে, যে গ্র্যাঞ্জারে সাধারণত আমি সিনেমা বানাই এখানে তার থেকে আলাদা ভাবে ভেবেছি। কাহিনি-চিত্রনাট্য আমারই তৈরি। আর সচেতনভাবেই এটা করেছি। তবে কমার্শিয়াল ছবির যা যা এলিমেন্ট থাকে তার সবই কিন্তু থাকছে। কারণ আমি নির্দিষ্ট কোনও অংশের দর্শকের কথা ভেবে ছবি বানাই না। গ্রাম-শহর বিভাজনেও বিশ্বাস করি না। বিনোদন এমন হবে তা যেন সর্বজনগ্রাহী হয়, সেভাবেই সব ছবি তৈরি করি। ‘আম্রপালী’কেও সেভাবে ভেবেছি। সোমরাজের বক্তব্যও তাই, সাধারণত একজন নায়িকাকে কে জিতে নেবে তার একটা অভ্যস্ত ছবি আমরা দেখে এসেছি এতদিন। ‘আম্রপালী’তে অয়ন ও কবীর দুজনেরই পায়েলের প্রতি ভাললাগা বা ভালবাসা তৈরি হলেও তারা একদম অন্যভাবে জীবনটাকে ভাবে। খুব কন্টেম্পোরারি ডিলিংস আছে ট্রিটমেন্ট-এ। চরিত্রগুলোও বোনা হয়েছে সুন্দরভাবে। অয়ন যেমন ভীষণ সাদা-সরল। সে গ্রামের মানুষ আর নিজের ভালবাসাকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। কবীর কিন্তু তা নয়। সে অনেক বেশি সর্টেড, সেও ভালবাসে পায়েলকে কিন্তু তার লক্ষ্য আরও বড়। নিজের প্রেম-ভালবাসার চেয়েও সে অনেক বেশি মানুষের কথা ভাবে এবং তা নিজের মতো করে। এর জন্য একসময় সে তার বাবার বিরুদ্ধেও দাঁড়ায়। বাবার চেয়ে মাস্টারমশাইয়ের রাজনীতির আদর্শ অনেক গ্রহণযোগ্য মনে হয় তার।”
আরও পড়ুন-Trinamool Congress: ধান্দায় এসে দলের বদনাম করলেই এবার বহিষ্কার
ছবির নায়িকা আয়ুসী জানালেন, ‘‘রাজনীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ পার্ট এই ছবির। তবু বলব ছবিটা মূলত সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প। অন্তত আমার চরিত্রটা তেমনই। পায়েল সচেতনই ছিল না অয়নের প্রতি ওর ভালবাসা সম্পর্কে। আবার কবীরের জীবন সম্পর্কে ভাবনা, রাজনীতির ধরনেও সে আকৃষ্ট হয়। পুরো ছবিটা শ্যুট হয়েছে বোলপুরের কাছে একটা গ্রামে। খুব ভাল শ্যুট করেছি সবাই। সামান্য কিছু অংশ বাকি আছে যেটা সম্ভবত নর্থ বেঙ্গলে হবে।” রিয়েল লাইফ জুটি সোমরাজ ও আয়ুসী। রিল লাইফে এই প্রথম একসঙ্গে। তাই দুজনের দিক থেকেই উত্তেজনা বেশ। দর্শক দুজনকে কেমনভাবে নেবে সেটা ভেবে বেশ টেনশন-এ। সোমরাজ যদিও জানালেন, “আয়ুসী থাকায় কমফর্ট জোনটা অবশ্যই বেটার ছিল। তবে ক্যামেরা চললে আর রিয়েল লাইফ প্রেমের কথা কারোরই খেয়াল থাকে না। কারণ চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে হয়। সেটাই মাথায় ঘোরে তখন।” আর আয়ুসীর বক্তব্য, “সোমরাজ অন সেট এক্কেবারে আলাদা। কাজের বাইরে অন্য কিছু ভাবতেই পারে না। এত সিরিয়াস ক্যামেরার সামনে যে আমিও আমার চরিত্রের বাইরে আর কিছু ভাবিনি। তবে আশা রাখি আমাদের জুটিকে সবার ভাল লাগবে। বনির সঙ্গেও আমি এর আগে সায়ন্তন ঘোষালের একটা ছবি করেছি। ফলে ওর সঙ্গেও বন্ধুত্ব ছিল। সব মিলিয়ে বেশ মজা করেই কাজ হয়েছে।”
আর নতুন এই জুটি সম্পর্কে রাজা নিজেও আশাবাদী, “নতুন জুটি বলুন, নায়ক, নায়িকা, চরিত্রাভিনেতা বলুন সবই আমাদের ভীষণ দরকার এবার। কিছু বছর আগেও একটা গ্যাপে আমরা বড়পর্দায় নিউকামার লঞ্চ করেছি। অনেকদিন সেটা বন্ধ। ফের চালু হওয়া দরকার। আশা রাখি সোমরাজ-আয়ুসীকে দর্শকের ভাল লাগবে।’’