ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় (সম্পাদক, জাগোবাংলা) : ’৯৮ থেকে দলের পথচলা, মানুষের সঙ্গে মানুষের পাশে৷ বহু পথ, বাধা–বিঘ্ন, অত্যাচার পেরিয়ে কর্মীদের আত্মবলিদান, সহস্র অত্যাচারে মাথা নত না করে বামফ্রন্টীয় অপশাসনের কালাপাহাড় সরিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে উদ্ধার করে মানুষের সেবায় মসনদে আসে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)৷
’৯৮–এর ছোট চারাগাছ বহু সংগ্রামের সাক্ষ্য বহন করে আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে৷ কর্মীরা সম্পদ হলে দলের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)৷ বোবা ধর্ষিতা মেয়ের বিচারের দাবি, মানবাধিকার রক্ষা, বন্দিমুক্তি, জেলে বন্দি মৃত্যু নিয়ে দলের দুর্বার অন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে নিয়েই৷ বামফ্রন্টীয় অত্যাচার সেদিন থামাতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেসকে৷
যখন সিপিএম পঞ্চায়েত দখলের বাহুবলী প্রদর্শন করে বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করল, তখন রাজ্য কংগ্রেস প্রায় নীরবতা পালন করেছে। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্জে উঠে বলেছিলেন, ‘নো আইডেনটিটি, নো ভোট’৷ কর্মীদের আত্মবলিদানে আজ ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র স্বীকৃত হয়েছে৷ কখনও ভেজাল তেল খেয়ে মৃতদের পরিবারের পাশে থেকে আন্দোলন, কখনও ভিখারি পাসওয়ান নিয়ে আন্দোলন— ধীরে ধীরে কংগ্রেসের থেকে নেতৃত্বের লাগাম ছিনিয়ে নিয়ে সিপিএম–এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কর্মীদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে, বাংলার মানুষের কাছে ভরসার মুখ, আস্থার মুখ হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কর্মীদের, সমর্থকদের জোরালো দাবি আর মানুষের ভালবাসায় প্রতিষ্ঠিত হল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস— ১ জানুয়ারি ১৯৯৮৷
আরও পড়ুন-ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বর্ষবরণ, পুলিশি তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণ সর্বত্র
তারপর থেকেই আন্দোলন আর মানুষের পাশে থেকে পথহাঁটা৷ ২০০১ সালে বিধানসভায় সর্ববৃহৎ দলের (বিরোধী) মধ্যমণি হয়ে বিরোধী দলনেতার স্বীকৃতি পেল তৃণমূল কংগ্রেস৷ শুরু হল ভিতরে-বাইরে সিপিএম বা বামফ্রন্ট সরকারের অপদার্থতার বিরুদ্ধে মানুষের হয়ে সোচ্চার হওয়া৷ সিঙ্গুরে কৃষকের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন৷ এগিয়ে এলেন বিশিষ্টজনেরা৷ শুরু হল দুর্বার আন্দোলন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসে পড়লেন আমরণ অনশনে৷
তাঁর অনমনীয় মনোভাবে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষিত হল— যা তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) কর্মীদের কাছে আজও ঐতিহাসিক আন্দোলনের মহান চিত্রকে বহন করে৷
এর মধ্যে দলের সংগঠন ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করেছে৷ বাংলার মানুষ আস্থা–ভরসা রাখতে শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর৷ অবশেষে ২০১১–তে মা–মাটি–মানুষের প্রতিষ্ঠা হল মহাকরণের মসনদে৷
দল রাজ্য প্রশাসনে, তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আশা, উৎসাহ, উদ্দীপনা, ভরসা, আস্থা আজ বাংলার মানুষের তাঁকে ঘিরেই৷ দলের সংগঠন আজ পরিকাঠামোগতভাবে অনেক সজীব, মজবুত৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার সার্বিক উন্নয়ন, শান্তি–প্রগতি, সংহতি আজ শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে৷ বাংলার মানুষের মন জয় করে প্রকৃত অর্থে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সাংগঠনিকভাবে আজ বিস্তার লাভ করছে অন্য রাজ্যেও। দলের নেত্রীর সঙ্গে হাল ধরতে নবীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরলস প্রচেষ্টায় সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস আজ ত্রিপুরা, মেঘালয়, হরিয়ানা আর গোয়ায় মানুষের জোরালো সমর্থনে এগিয়ে চলেছে৷
সেদিনের চারাগাছ আজ বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে৷ দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, মৈত্রী, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সুরক্ষা আর গণতন্ত্র রক্ষার একমাত্র ভরসাস্থল— তৃণমূল কংগ্রেস৷ একমাত্র বিজেপি-বিরোধী শক্তির মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
‘‘আমরা করব ভারত জয়, নিশ্চয়’’— এ মন্ত্রে ও বিশ্বাসে ২০২২-এ এগিয়ে যাবে— রক্ষা করবে দেশকে, দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে৷