নয়াদিল্লি: সঞ্চার সাথী অ্যাপ নিয়ে কেন্দ্রের টেলিকম মন্ত্রকের নির্দেশিকা জারির পর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং কেন্দ্রের সম্ভাব্য নজরদারি নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। এই ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির নেতারা। অভিযোগ ওঠে নাগরিক জীবনে গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে ঘুরপথে পেগাসাসের মত নজরদারির ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে মোদি সরকার। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই চাপে পড়ে যায় মোদি সরকার। খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রেখেছিলেন। এই নির্দেশ গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছিল গুগল, অ্যাপলের মতো সংস্থাও। শেষপর্যন্ত দেশ জুড়ে বিরোধিতার মুখে বিজ্ঞপ্তি জারি করার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই স্মার্টফোনগুলিতে বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশন ‘সঞ্চার সাথী’ প্রি-ইনস্টল করার নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিল টেলিকম বিভাগ ।
আরও পড়ুন-রাজ্যের উদ্যোগে প্রাণ ফিরছে রেশমশিল্পের
বুধবার কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সঞ্চার সাথী অ্যাপের ক্রমবর্ধমান গ্রহণকে বিবেচনা করে সরকার মোবাইল প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রি-ইনস্টলেশন আর বাধ্যতামূলক না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর টেলিকম বিভাগ কর্তৃক জারি করা প্রাথমিক নির্দেশিকায় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের নতুন ফোনে এবং সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে পুরোনো ফোনেও অ্যাপটি প্রি-ইনস্টল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে অ্যাপটির কার্যকারিতা কোনওভাবেই নিষ্ক্রিয় বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না। অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের জাল কল, মেসেজ এবং চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের রিপোর্ট করতে সাহায্য করবে। এই বিতর্কের মধ্যে মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সংসদে বলতে বাধ্য হন যে প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রয়োজনে সরকার নির্দেশটি পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। চাপের মুখে তিনি নজরদারির উদ্বেগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, নজরদারি সম্ভব নয়, করাও হবে না। জানা যায়, অ্যাপল এবং গুগলের মতো প্রযুক্তি সংস্থাগুলি, যারা বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অপারেটিং সিস্টেম (আই ওএস এবং এন্ড্রয়েড) পরিচালনা করে, তারাও এই সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। শিল্প সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে কোথাও ডিভাইসে রাষ্ট্রীয় অ্যাপ প্রি-লোড করার কোনও নজির না থাকায় এবং ভারতে এর জন্য বিশেষ কাস্টমাইজেশনের প্রয়োজন হওয়ায় সংস্থাগুলি পরিচালনগত চ্যালেঞ্জ এবং সিস্টেম নিরাপত্তার গুরুতর উদ্বেগ তুলে ধরেছিল। নাগরিক সমাজের কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-ইনস্টলেশন চাপিয়ে দেওয়া পছন্দ এবং সম্মতির নীতির পরিপন্থী এবং ভবিষ্যতে অ্যাপটির মূল উদ্দেশ্যের বাইরে কার্যকারিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

