কাবুল: মুড়ি-মুড়কির মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা তো আছেই, সেইসঙ্গে শাস্তির অভিঘাত তীব্র করতে রাজপথে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা আকছার ঘটছে বর্তমান তালিবান জমানায়। প্রকাশ্যে শাস্তির এমন প্রবণতা দেখে বাকি বিশ্ব শিউরে উঠলেও আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের সাফাই, প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে ভয় জাঁকিয়ে বসবে, অপরাধ হবে কম। এমন ঘটনা সভ্যতা ও আন্তর্জাতিক নিয়মের বিরোধী কিনা তা নিয়ে মাথাব্যথাই নেই তালিবান শাসকদের।
আরও পড়ুন-বিজেপির ভোটমুখী রাজনীতি ফাঁস মালার প্রশ্নে
সর্বশেষ আফগানিস্তানে ফের এমন ঘটনা ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভরা স্টেডিয়ামে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে অত্যাচার ও গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল এক আসামির। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে। এক পরিবারের মহিলা, শিশু-সহ ১৩ জনকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল ওই আসামির বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, নিম্ন আদালত এবং আপিল আদালত— দুই জায়গা থেকেই তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ বহাল রাখে। তারপর তালিবানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অনুমোদন নিয়ে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক নাবালক আত্মীয়কে দিয়েই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় ৮০ হাজার আফগান জনতার সামনে চলে নিধনপর্ব।
আফগানিস্তানে এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবান শাসনের আমলে প্রকাশ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। ফের ২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে। দ্বিতীয় দফাতেও প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১১বার প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে গত এপ্রিলে একই দিনে আফগানিস্তানের তিন প্রদেশে আলাদা স্টেডিয়ামে চারজনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এইসব ঘটনার জেরে ফের একবার আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রসংঘও।
আরও পড়ুন-তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে সংসদে বঞ্চনার খতিয়ান তুলে ধরল তৃণমূল
আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে হত্যা ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত বিশেষ দূত রিচার্ড বেনেট। মঙ্গলবারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের প্রথা বন্ধ করার দাবিতে ফের সওয়াল করেন তিনি। সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে বেনেট লেখেন, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া অমানবিক। শাস্তি দেওয়ার এই নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক প্রথা আন্তর্জাতিক আইন তথা সভ্যতার পরিপন্থী।

