যন্ত্রণাবিদ্ধ মুজিবরের চোখেমুখে সেদিন দেখেছিলাম আতঙ্ক

Must read

কুণাল ঘোষ: চোখের সামনে ভাসছে সেদিন মুজিবর (Mujibar) ইসলামের বাড়ির ছবিটা। রাজনৈতিক সন্ত্রাস কাকে বলে, পরিকল্পিত হামলা কী জিনিস, বুঝিয়ে দিয়েছিল বিজেপি।

২৮ অগাস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ত্রিপুরায় পরপর কর্মসূচি। প্রবল উৎসাহ। বিজেপির হামলা, মামলা উপেক্ষা করেও কর্মীরা রাজপথে। কলকাতা থেকে গিয়েছি ডাঃ শান্তনু সেন এবং আমি।
সকালে গান্ধীমূর্তির সামনে পতাকা উত্তোলন। সকলে হাজির। মিছিল। মুজিবরও। এরপর শান্তনু আর আমি অন্য কর্মসূচিতে গেলাম। দুপুরে মার্স হোটেলের হলঘরে মমতাদির ভাষণ সম্প্রচারের ব্যবস্থা। আর আগরতলার আরেকদিকে মুজিবরের বাড়ির উঠোনেও টিভি দেখা, সঙ্গে যোগদানপর্ব।

দুপুরে একটি অনুষ্ঠান সেরে আমরা মার্স হোটেলে আসছি, হঠাৎ ফোন, মুজিবরের বাড়িতে হামলা শুরু হয়েছে। পুলিশ নেই। তাণ্ডব চলছে। গাড়িতে শান্তনু, আমি, মামুন খান। সিদ্ধান্ত হল সময় নষ্ট না করে মুজিবরের বাড়ি যাওয়ার। গাড়ি ঘুরিয়ে গতি বাড়িয়ে আমরা রওনা হলাম। আমরা জানতাম যে তখন আমরাও হামলার মুখে পড়ে যেতে পারি। কিন্তু কিছু করার ছিল না এ-ছাড়া।

মামুন খান ফোনে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জানাল মুজিবরের (Mujibar) বাড়িতে বিজেপির হামলা চলছে এবং আমরা যাচ্ছি। ওদিক থেকে যাই বলা হোক, মামুন বলে দিল, আমরা যাবই। আপনারা ফোর্স পাঠান।
আমরা যখন মুজিবরের বাড়ির কাছে, তখন দূর থেকে দেখছি দৃশ্য। পুলিশ গাড়ি থেকে তাড়া করছে। আর গুন্ডারা পালাচ্ছে। দেখলাম, ধরা হল না। তাড়ানো হল। দু’মিনিট আগে ঢুকলে আমরা গুন্ডাদের মুখেই পড়তাম। যাই হোক, দেখা যেত।
মুজিবরের বাড়ি ঢুকে দেখি ভয়ানক অবস্থা।

টিনের বেড়া ধারালো অস্ত্রে ফালা ফালা। উঠোন ধ্বংসস্তুপ। তৃণমূলের পতাকাগুলি লুটোচ্ছে মাটিতে। চেয়ার টেবিল ভেঙে তছনছ। মুজিবর (Mujibar) প্রবল মারে জখম। হাত ভাঙা। যন্ত্রণা। যুবনেতা শুভঙ্কর অচৈতন্য প্রায়। মাথা, নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত। মাটিতে রক্ত। শরীর থরথর করে কাঁপছে। মহিলা কয়েকজন আতঙ্কিত। উদ্বিগ্ন।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকায় হোম আইসোলেশনে থাকার মেয়াদ কমানো হল

রাগে কাঁপতে কাঁপতে শান্তনু সামনে জাতীয় সড়কে গাড়ি আটকে বসে পড়ল। দাবি, দোষীদের গ্রেপ্তার চাই। এলাকা জুড়ে আতঙ্ক। আমি পুলিশকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি দুটো বিষয়ে। অবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্স এনে মুজিবর এবং শুভঙ্করকে হাসপাতালে পাঠানো। সেই সঙ্গে বাড়ি এবং হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। মুজিবরকে শোয়ানো ছিল বিধ্বস্ত ঘরের খাটে। সক্রিয় পরিচিত রাজনৈতিক পরিবার। আকস্মিকতায় বিহ্বল। সঙ্গে যন্ত্রণা। কোনওমতে বললেন, ‘সকলে মিলে মমতাদিদির ভাষণ শোনার ব্যবস্থা হচ্ছিল। হঠাৎ হামলা। যে যেদিকে পেরেছে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমি ভাবতেই পারছি না আমার বাড়িতে ঢুকে এইভাবে মারল।’ যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন মুজিবর।

এরপর পুলিশের সঙ্গে শান্তনু আর আমার কথার টানাপোড়েন। পুলিশ বলল থানায় আসুন, আলোচনা করব। আমরা বললাম, কীসের আলোচনা? দোষীদের ধরুন। ওদের হাসপাতালে পাঠিয়ে আমরাও ছুটলাম হাসপাতালে। ততক্ষণে কলকাতা থেকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয়। এদের কলকাতায় নিয়ে চিকিৎসার কথা শুরু। সেদিন ভয়াবহ হাল ছিল শুভঙ্করেরও। এরপর ছুটে এলেন ত্রিপুরার অন্য নেতারা। শান্তনু নিজে ডাক্তার হওয়ায় সুবিধে হচ্ছিল।

এরপর চিকিৎসার নানা পর্যায়ে সময় পার হয়েছে। শুভঙ্কর সুস্থ। তবে হাত এখনও স্বাভাবিক নয়। ক্ষত গভীর।
আর আজ মুজিবরের মৃত্যুসংবাদ পেলাম। একটা পরিকল্পিত হামলায় গুরুতরভাবে জখম এক রাজনৈতিক সহকর্মীর যাত্রাপথ শেষ হল অকালে।
চোখের সামনে ভাসছে সেই ২৮ অগাস্ট হামলার পর ছত্রভঙ্গ বাড়িতে আতঙ্কিত, যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুজিবরের মুখটা।

Latest article