অনুরাধা রায় : উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা অহরহ শোনা যায় বিজেপি নেতাদের মুখে। যে উন্নয়নের কথা তাঁরা বড়াই করে বলেন সেখানেই ঘটল বিরাট দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা শুধু নয়, গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের মধ্যে উঠে এসেছে রেল বেসরকারীকরণের প্রসঙ্গও। এই অভিযোগ তুলে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রেল কর্মচারী সংগঠনের সদস্যরা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ পাল বলেন, ‘‘একের পর এক বেসরকারীকরণ চলছে। রেলে এনজিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট যদি সময়মতো চালু হত তা হলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।”
বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার আগে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়েছিল এনজেপিতেই (NJP) । চালক সে ত্রুটির কথা ফোরম্যানকে জানিয়েও ছিলেন। কিন্তু রেল কর্তারা বলেছিলেন যে, কোনওরকম উপায় ছিল না। বড় প্রশ্ন এখানেই। কেন উপায় ছিল না? এর উত্তরে স্পষ্ট ধরা পড়েছে রেলের গড়িমসি। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এনজিপিতে (NJP) ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের কোনও ইউনিট তৈরি করতে পারেনি রেল। ২০২০ থেকে এনজিপিতে বৈদ্যুতিক ট্রেন যাতায়াত করছে। কিছুদিনের মধ্যেই বৈদ্যুতিক লাইন পৌঁছনোর কথা গুয়াহাটিতে। কিন্তু উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় নেই বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতির ইউনিট। যদিও এই ইউনিট তৈরি হচ্ছে বলে ফাঁকা আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার (Central Government)।
কর্মচারী সংগঠন বলছে, যদি তা তৈরি হয়ে যেত তা হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। উদাসীনতার ফলে এত বড় দুর্ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকারের (Central Government) চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর পরেও নেওয়া হয়েছে ঝুঁকি। দুর্ঘটনার দেড়দিনের মাথায় রেললাইনের কাজ সম্পন্ন হতে না হতেই রেল কত ‘করিৎকর্মা’ তা প্রমাণ করতে ভাঙা স্লিপারের ওপর দিয়ে চালানো হয় ট্রেন। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত কামরা সরিয়ে লাইন মেরামত করে ট্রেন চালিয়ে মহড়া দেয় এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬-১০ মিনিটে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই লাইনে চালু হয়ে যায় ট্রেন-চলাচল। যায় অওয়ধ-অসম এক্সপ্রেস। তখনও প্রশ্নচিহ্ন রেখে কংক্রিটের ভাঙা স্লিপারগুলি দেখা যাচ্ছিল লাইনের মধ্যে। তাতেই রেলের আধিকারিকদের একাংশ দাবি করেছেন, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে প্রশ্নের ঝড়। বিশেষজ্ঞ মহল থেকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, রেল কি তবে ইচ্ছাকৃতভাবে যাত্রীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে?