সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্ট নজরে পড়ার পর একরত্তির প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee). বাইপাস সংলগ্ন এক নামি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করে দেন অভিষেক।
শিশুটির পরিবার সূত্র জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সফল অপারেশন হয়েছে একরত্তির। অস্ত্রোপচার করেন ৭জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি টিম। পুরো অপারেশন প্রক্রিয়া তদারকি করেন এই মুহূর্তে শহরের বাইরে থাকা এক প্রখ্যাত চিকিৎসক। হৃদযন্ত্রের জটিল অপারেশনের পর আপাতত সুস্থ আছে শিশুটি। ইতিমধ্যেই ভেন্টিলেশন থেকে বাইরে আনা হয়েছে শিশুটিকে। জ্ঞান ফিরেছে একরত্তির। মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এখনও চিকিৎসকরা কড়া পর্যবেক্ষণে রাখছেন শিশুটিকে।
আরও পড়ুন – গোয়ায় অভিষেক, আজও কর্মসূচি
এদিকে, পরিবারের কণিষ্ঠ সদস্যের প্রাণ বাঁচানোর জন্য সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শিশুটির পরিবার। বাবা জয়ন্ত দেবনাথ বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়মতো পাশে এসে না দাঁড়ালে আজ হয়তো আমার সন্তানকে হারাতাম। তিনি আমার ও আমার পরিবারের কাছে ঈশ্বরের বরপুত্র। আমার দু-দিনের শিশু যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে নীল হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়ান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোদ্ধারা। এত জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমার পক্ষে করানো সম্ভব ছিল না। আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। সবে মাত্র একটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছি। আমার সাধ্যই ছিল না চিকিৎসা করানোর।”
এমন মানবিক কাজের জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ ধন্যবাদ জানিয়েছেন, শিশুটির সম্পর্কে এক দাদু গৌতম ভট্টাচার্য অভিষেকের এই ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়ে লেখেন, মানুষ মানুষের জন্য কথাটি ফের একবার প্রমাণিত হলো।
গৌতমবাবু তাঁর পোস্টে লেখেন, “মানবিক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক, সাংসদের প্রতি আমি ও আমাদের পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে বিনম্র স্বীকারোক্তি ও ভালোবাসা জানাই। সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে অনির্বাণ মাইতি ও যে বা যারা আমাদের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ মাত্র তিন দিনের একরত্তি শিশুর হৃদযন্ত্রের চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছিলেন তাদের প্রতি আমার প্রণাম। রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবিকতা যে অনেক বড় সেটা আজকের দিনে খুব কম দেখা যায়। অভিষেক বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের আপ্তসহায়ক সুমিত রায়ের কাছে রাতে এক ফোনের আবেদন এভাবে ব্যয়বহুল চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন তাকেও কুর্নিশ জানাই। পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। মানুষ মানুষের জন্য, এই কথাটি আবার প্রমাণিত হলো।”
উল্লেখ্য, নদিয়া জেলার হরিণঘাটার নগরউখড়ার মহাদেবপুরের বাসিন্দা পূজা দেবনাথ দমদমের এক নার্সিংহোমে সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পরই সদ্যোজাতর হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে। যার চিকিৎসা খুব ব্যয় সাপেক্ষ। পরিবারের সেই চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা ছিল না। বিষয়টি ফেসবুকে পোস্ট করেন বামমনস্ক টলিউডের শিল্পী অনির্বাণ মাইতি। সেই আবদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সহকর্মীরা।
ঘটনার সূত্রপাত, নদিয়ার (Nadia) হরিণঘাটা থানার নগরউখড়া মহাদেবপুরের বাসিন্দা পূজা দেবনাথ (Puja Debnath) সম্প্রতি দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মদেন শিশুটিকে। জন্মের পরেই সদ্যোজাতর হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ে। হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, এসএসকেএম (SSKM Hospital) অথবা মুকুন্দপুরের আরএন টেগোর (R N Tagore Hospital) হাসপাতাল ছাড়া এর চিকিৎসা সম্ভব নয়। আরএন টেগোর হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। এরপর বিষয়টি গোচরে আসে টলিউডের ফিল্ম এডিটর অনির্বাণ মাইতির কাছে। অনির্বাণবাবু ঘোষিত বামপন্থী বলেই পরিচিত। এরপর তিনি
শিশুটির প্রাণ বাঁচানোর জন্য এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেটি নজরে আসে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যর। গোটা বিষয়টি দেবাংশু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান। বাকিটা ইতিহাস। অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে তাঁর সহযোগীরা যোগাযোগ করে শিশুটির বাড়ির লোকের সঙ্গে। এবং শিশুটির চিকিৎসার সমস্ত খরচ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বহন করবে বলে জানান। শুরু হয় চিকিৎসা। প্রাণ ফিরে পায় একরত্তি।