অলোক সরকার: এমন ইডেন কখনও কেউ দেখেনি। একটার পর একটা ব্লক। খালি এবং খালি! তবে ক্লাব হাউসের উপর তলায় ঠাসা ভিড়। সেখানে এতক্ষণ যে হইহই ব্যাপারটা ছিল, সেটাও হঠাৎ চুপ মেরে গেল। শূন্য ইডেনে একরাশ শূন্যতা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন কিং কোহলি! আগের দু’দিন নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন প্রাকটিসে। দেখে মনে হচ্ছিল বুধবারই রানে ফেরার প্রচণ্ড তাগিদ রয়েছে। কিন্তু কোন এক ফ্যাবিয়েন অ্যালেন টুক করে তাঁর উইকেটটা নিয়ে চলে গেলেন! ভারত অবশ্য এরপরও অনায়াসে জিতল প্রাক্তন ও বর্তমান দুই নাইটের জন্য। সূর্যকুমার যাদব ৩৪। ভেঙ্কটেশ আইয়ার ২৪। দুজনেই নট আউট। ভারত (India vs West Indies) জিতল ৬ উইকেটে।
৪.৩ ওভারে পঞ্চাশ উঠে যাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছিল এই ম্যাচ কোথায় গিয়ে শেষ হবে। ততক্ষণে রোহিত শর্মা তাঁর পয়ামাঠে চেনা ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন। এই মাঠে একের পর এক মাইলফলক স্থাপন করেছেন হিট ম্যান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে ২৬৪ আজও অমর-অক্ষয় হয়ে আছে। ক্রিকেট-পণ্ডিতেরা বলেন, ইডেন দেখলেই রোহিতের ব্যাট আরও চওড়া হয়ে যায়। কিন্তু যখন মনে হচ্ছিল আরও একটা বড় রান তাঁর ব্যাটে আসছে, তখনই চেসকে বাউন্ডারি লাইনে উইকেট দিয়ে এলেন রোহিত (১৯ বলে ৪০)। এরপর বিরাট ফিরতেই চাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই চাপ কেটে গেল সূর্য ও ভেঙ্কটেশ অপরাজিত জুটিতে।
আরও পড়ুন-১৫ ফুটের চিলা রায়ের মূর্তি, মুখ্যমন্ত্রী চান পুলিশে নারায়ণী সেনাদের
এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘরের মাঠে টি-২০ সিরিজে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এসেছে। কিন্তু ভারতে (India vs West Indies) এসে পোলার্ডরা মোমেন্টাম হারিয়ে বসেছেন। আমেদাবাদে একদিনের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এই ম্যাচের পর টি-২০ সিরিজের কপালেও সেরকম কিছু আছে কি না কৌতূহলী অনেকে। ৭.৩ ওভারে ৬৪ তুলে ফেলার পর রোহিত ফিরলেন। তারপর ঈশান কিষাণ ( ৪২ বলে ৩৫)। তখনও ফুরফুরে মেজাজেই ছিল ইডেন, কিন্তু পরের ধাক্কাটা শক্তিশেলের মতো বুকে বিঁধল। আবার সেই ইনসাইড আউট মারতে গিয়ে অ্যালেনের বলে পোলার্ডের হাতে নিজেকে তুলে দিয়ে এলেন বিরাট কোহলি (১৩ বলে ১৭)। অথচ নিজেকে গুছিয়ে ফেলেছিলেন বিরাট। মনে হচ্ছিল আজ বড় রানই হবে।
রোহিতের টসে জিতে আগে বল করে নেওয়ার পিছনে কোনও রকেট সায়েন্স নেই। পরের দিকে শিশির পড়লে উপ মহাদেশের সর্বত্র বোলারদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হয়। সুতরাং এটাই হওয়ার ছিল। কিন্তু গত ক’দিনে এই উইকেট নিয়ে যত চর্চা ছিল, তার সঙ্গে কোনও মিল খুঁজে পাওয়া গেল না এদিন। ন্যাড়া উইকেটে না সিমাররা তেমন সুবিধা পেলেন, না স্পিনাররা বল ঘোরালেন। তবু রবি বিষ্ণোইয়ের কথা বলতে হয়। প্রথম ম্যাচে নেমে ১৭ রানে দুই উইকেট। রস্টন চেস আর রভমান পাওয়েলের উইকেট ভরলেন পকেটে। আর রবি যেভাবে বল করলেন তাতে মনে হয়নি এটা তাঁর প্রথম ম্যাচ। রবির জীবনে অনেক গল্প আছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ছোট ছেলে রাজস্থানের অনূর্ধ্ব ১৯ ট্রায়ালে বাদ পড়ার পর বাবা বলেছিলেন, আর ক্রিকেটে দরকার নেই। পড়াশুনো কর। নাছোড়বান্দা কোচ তখন বাবার কাছে একটা বছর চেয়ে নিয়েছিলেন। বাকিটা সবার জানা।
ক্যারিবিয়ানরা ৯০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসার পরও যে ১৫৭ রানে গেলেন, সেটা নিকোলাস পুরাণের জন্য। দশ কোটিতে সানরাইজার্স হায়দারাবাদে যাওয়া পুরাণ এদিন ৪৩ বলে ৬১ রান করে গেলেন গোটা চারেক বাউন্ডারি ও পাঁচটি ছক্কা সহযোগে। এ-ছাড়া ওপেনার কাইল মেয়রসের রান ৩১। শেষদিকে অধিনায়ক পোলার্ড কিছু রান (২৪ নট আউট) করে গেলেন। বাকিরা খেলতেই পারলেন না। তবে একটা সময় এই রানও হবে বলে মনে হয়নি। বিষ্ণোইয়ের মতোই দুটি উইকেট নিয়েছেন হর্ষল প্যাটেলও।