মুম্বই : মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে সংগীতজগতের তিন মহীরুহের মৃত্যুতে ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিরাট শূন্যতা। কিংবদন্তিদের হারিয়ে অনুরাগীদের মন খারাপ। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল বাপ্পি লাহিড়ীর। তাঁর প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সংগীতের ডিস্কো যুগের যেন অবসান ঘটল। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিউড জগতের একাধিক তারকা।
আরও পড়ুন-শেষ মুহূর্তের গোলে হার বাঁচাল বায়ার্ন
একমাত্র পুত্র বাপ্পা লাহিড়ীর আমেরিকা থেকে ফেরার পর বৃহস্পতিবার সকালে মুম্বইয়ের লাহিড়ী হাউস থেকে ফুলের ট্রাকে করে ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় বাপ্পি লাহিড়ীকে। বাড়ি থেকে ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানের দূরত্ব মাত্র আড়াই কিলোমিটার। কিন্তু শ্মশানযাত্রায় এত বেশি সংখ্যক ভক্ত সমাগম হয় যে, ১০ মিনিটের সেই পথ পেরোতেই সময় লেগে যায় ঘণ্টাখানেক। ভিলে পার্লে মহাশ্মশানে মুখাগ্নি করেন ছেলে বাপ্পা। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বাপ্পির কম্পোজ করা সুর— চলতে চলতে ইয়াদ রাখনার মূর্ছনার মধ্যে বাপ্পি লাহিড়ী পঞ্চভূতে বিলীন হলেন। থেকে গেল তাঁর অজস্র বর্ণময় স্মৃতি আর অসংখ্য সৃষ্টি। বাপ্পির মেয়ে রেমাকে এদিন মরদেহের পিছনে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন-এশিয়ান কাপ যুবভারতীতে
সাজগোজ করতে ভালবাসতেন বাপ্পি। বাপ্পির প্রিয় কালো রঙের পোশাক ও চশমায় তাঁকে শেষবারের মতো সাজিয়ে দেন চিত্রাণী। নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের এক অধ্যায়ের অবসান হল। বলিউডের যে ফিউশন আজ গোটা দেশ মাতাচ্ছে তার স্রষ্টা ছিলেন বাপ্পি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গানের সুর নিয়ে তিনি ডালি সাজাতেন। বাপ্পি সব সময় বলতেন, সংগীত হল এক মহাসমুদ্র। সেখান থেকে দু’ একটা নুড়ি পাথর কুড়িয়ে নিলে সমস্যা কীসের? তবে প্রয়াত বাপ্পির একটা ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেল। তাঁর ইচ্ছা ছিল, বিশ্বের ১০০টি দেশের ১০০ জন সংগীত ও যন্ত্রশিল্পী নিয়ে একটা কনসার্ট করবেন। কিন্তু হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় বাপ্পির সেই ইচ্ছা আর পূর্ণ হল না। আগুনের লেলিহান শিখা শিল্পীর নশ্বর দেহকে যখন গ্রাস করছে তখন মহাশ্মশানে উপস্থিত বাপ্পির অনুরাগীরা আওয়াজ তোলেন— জুম্মা চুম্মা দে দে। তবে সেই আওয়াজ আর শুনতে পেলেন না চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া বাপ্পি লাহিড়ী।
আরও পড়ুন-স্বাস্থ্যসাথীতে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার ফুটবলারের, উদ্যোগ নিলেন বিধায়ক
অসুস্থতার জন্য মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ভর্তি ছিলেন বাপ্পি। সেখান থেকে সোমবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবারই ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মঙ্গলবার রাত ১১.৪৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডিস্কো কিং। ১৯৭০ থেকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ী। ‘চলতে চলতে’, ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘শরাবি’-র মতো কালজয়ী ছবির গানে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে বাগি- ৩-এর জন্য শেষ সুর করেন তিনি।