প্রতিবেদন : গত রবিবার দেশের ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। তবে দেশের ক্ষমতা দখল করলেও কান্দাহার বিমানবন্দরের দখল তারা এখনও পায়নি। মার্কিন সেনা সেখানে এখনও রয়েছে। এই অবস্থায় কাবুল বিমানবন্দরে দখল পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালিবান জঙ্গিরা। কাবুল বিমানবন্দরে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের ভিতরে রয়েছে মার্কিন সেনা আর বাইরে রয়েছে তালিবানরা। একই সঙ্গে রয়েছে হাজার হাজার আফগানবাসী। যাঁরা সকলেই দেশ ছাড়তে চান। দেশ ছেড়ে পালাতে উদ্যত মানুষকে তালিবানদের তীব্র বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। বহু মহিলাকে দেখা গিয়েছে, ছোট্ট শিশুকে বুকে আঁকড়ে ছুটে পালাচ্ছেন। কখনও বা তাঁরা নিজের কোলের সন্তানকে পাঁচিল টপকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন মার্কিন সেনার উদ্দেশে। এদিকে, তালিবানি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ আফগান জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ছবিও দেখা যাচ্ছে আফগানিস্তানে৷ পঞ্জশিরের নর্দার্ন অ্যালায়েন্স রুখে দিয়েছে তালিবানিদের৷ এবার বাগলন প্রদেশের বানু ও পুল–ই–হেসারে আফগান সেনা ও জনতার প্রতিরোধে পিছু হঠছে তালিবান জঙ্গিরা৷ ডেল সালেহার দিকেও প্রতিরোধের মুখে পড়েছে তারা৷
আরও পড়ুন- নিরাপত্তা পরিষদে উদ্বেগ ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর
এদিকে, তালিবানরা মুখে শান্তির কথা বললেও বাস্তবে তারা তার ধারেকাছেও যাচ্ছে না। ক্ষমতা দখলের পর তালিবান জানিয়েছিল, তারা কোনও প্রতিশোধের রাজনীতি করবে না। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘের এক রিপোর্ট থেকে যে চিত্র উঠে এসেছে সেটা তালিবানদের দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। রাষ্ট্রসংঘের ওই রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, আফগানিস্তানের ঘরে ঘরে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে জঙ্গিরা। এতদিন যারা আমেরিকান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করে এসেছে তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। যাঁরা এতদিন আফগান সেনাবাহিনী, পুলিশ বা গোয়েন্দা দফতরে কাজ করেছেন তাঁদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই সমস্ত ব্যক্তিদের হাতে পেতে ইতিমধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করেছে জঙ্গিরা। ক্ষমতা দখলের পর তালিবানরা জানিয়েছিল, সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।
আরও পড়ুন- নেহরু ‘আদর্শ’ নেতা বললেন বিজেপির মন্ত্রী
কিন্তু শুক্রবার জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিকের আত্মীয়কে খুন করেছে জঙ্গিরা। ‘ডয়েচে ওয়েলে’ নামে জার্মান সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিককে খুন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু ওই সাংবাদিককে না পেয়ে জঙ্গিরা তাঁর বাড়ির লোকজনের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তাতে একজনের মৃত্যু হয়। দু’জন গুরুতর জখম হয়েছেন। ওই সাংবাদিকের সন্ধানে চলছে তল্লাশি। জার্মান সংবাদ মাধ্যমের ডিরেক্টর জেনারেল পিটার লিম্ববোর্গ বলেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আফগানিস্তানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা কী ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- জোট শক্ত করতে কোর কমিটির সংবিধান হোক চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এরই মধ্যে তালিবান নেতাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হল আর এক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা। তবে শুধু আল-কায়েদা নয়, একাধিক জঙ্গি সংগঠন তালিবানের প্রশংসা করেছে। তারা বলেছে, তালিবান তাদের প্রেরণা। ক্ষমতা দখলের ৫ দিনের মধ্যেই ক্রমশ তালিবানদের আসল চেহারা সামনে আসছে। গোটা দেশজুড়ে চলছে ভয়াবহ অত্যাচার। বিশেষ করে মহিলাদের উপর। ঘটনার জেরে দেশের বেশিরভাগ মানুষই অবিলম্বে আফগানিস্তান ছাড়তে চাইছেন। দেশবাসী যাতে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে না যান, সেজন্য এবার ইমামদের দ্বারস্থ হল জঙ্গিরা। তারা ইমামদের কাছে আর্জি জানিয়েছে, শুক্রবারের প্রার্থনায় মানুষকে তাঁরা যেন দেশ না ছাড়ার অনুরোধ জানান। জঙ্গিদের কথায় আর কেউই ভরসা রাখতে পারছে না। সে কারণেই তারা এবার ইমামদের দ্বারস্থ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তানে চলতি পরিস্থিতির কারণে ভারত ইতিমধ্যেই সে দেশে থাকা দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে এনেছে।
আরও পড়ুন- ত্রিপুরায় বিজেপি বনাম বিজেপি: সরকারি নিয়োগে অস্বচ্ছতা নিয়ে বিপ্লবকে আক্রমণ সুদীপের
যদিও তালিবানদের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আব্বাস স্তানিকজাইয়ের অফিস থেকে বিদেশমন্ত্রককে বলা হয়েছিল, কাবুলে ভারতীয় কূটনীতিকরা নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবেন। লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীই ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালাবে না। তবে, স্তানিকজাইয়ের অফিসের ওই প্রতিশ্রুতি উপর ভরসা রাখতে পারেনি ভারত। নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হলেও শুক্রবার আফগানিস্তানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে লুঠপাট চালিয়েছে জঙ্গিরা। কান্দাহার এবং হেরাতের দূতাবাসেও হামলা চালানো হয়েছে। বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, দূতাবাস থেকে বেশ কিছু গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরি করে নিয়ে গিয়েছে তালিবানরা। যদিও দূতাবাসগুলি বন্ধ ছিল।