তৃতীয় জয়ের পর প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ফেসবুকে কী লিখলেন কুণাল ঘােষ
তৃণমূল কংগ্রেসের তৃতীয়বারের সরকারের জয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা।
এক, মনে রাখুন, বিজেপির শীর্ষনেতাদের ডেলি প্যাসেঞ্জারি, সব নখ দাঁত বার করা আক্রমণ, চার আনার বিজেপি কর্মীদের বারো আনা ঔদ্ধত্য, অসভ্যতাকে হারিয়ে জয়।
দুই, মনে রাখুন, সিপিএম, কংগ্রেসকে শূন্যে নামিয়ে দিয়ে জয়।
তিন, মনে রাখুন, কিছু সুবিধাবাদীর হঠাৎ তৃণমূল ছাড়ার বিশ্বাসঘাতকতা ও হুজুগের বিরুদ্ধে জয়।
চার, মনে রাখুন, দিদির নেতৃত্বে এবং অভিষেকের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কর্মীদের জেদের আর আনুগত্যের লড়াইতে জয়।
পাঁচ, মনে রাখুন, একদিকে সরকারের কাজ এবং সঙ্গে সাংগঠনিক এক দক্ষ পরিচালনপদ্ধতির মধ্যে দিয়ে জয়।
আরও পড়ুন-গম দিচ্ছে না এফসিআই
এই বিপুল জয়কে, মানুষের আস্থা ও আমাদের মতো সাধারণ সৈনিকদের মানসিক তৃপ্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। আত্মসমালোচনার জায়গায় গুরুত্ব দিতে হবে। দল বড়, সরকার বড়, আরও জয়, আরও দায়িত্ব, আরও কাজ, কর্মযজ্ঞ চলছে। ৯৯% কাজ ভাল। ১% ভুল থাকলে ব্যবস্থা হচ্ছে এবং হবে। যে কর্মী, সমর্থক, সংগঠকরা ২০২১-এর চরম ঝুঁকির যুদ্ধে জান কবুল লড়াই দিয়েছেন, তাঁদের সম্মান, মর্যাদা, অধিকারবোধ সত্যিই স্বতন্ত্র। দলে রাজনৈতিক সচেতনতাটাকেই অগ্রাধিকার দিন। দেওয়া হয়। ক্ষমতায় থাকার জন্য মুষ্টিমেয়র মধ্যে যদি ব্যক্তিসমীকরণের প্রশাসনিক লাভক্ষতির হিসেব অগ্রাধিকার পায়, তবে তা বর্জনীয়। আর সতর্ক থাকুন, চারপাশে কারা আসছে, তারা কারা, কী চায়। এই সতর্কতার ছাঁকনি যে কোনও ক্ষমতাসীন দলে জরুরি, তৃণমূলেও জরুরি এবং তৃণমূল নজর রাখছে বলেই বারবার তিনবার মানুষ আশীর্বাদ করছেন।
মাথার উপর দিদি, লিডার, দলের প্রাণ, মুখ, শেষ কথা। রয়েছেন তরুণতুর্কি, ক্যাপ্টেন অভিষেক। এবং রয়েছেন নেতা, কর্মী, সমর্থক, দরদির তৃণমূল পরিবার।
আরও পড়ুন-
বিরোধীরা হাত মিলিয়ে চক্রান্ত চালাচ্ছে। রুখতে হবে। তুলনা করুন আগের সর্বনাশা বাম জমানার সঙ্গে। তুলনা করুন অন্য রাজ্যের সর্বনাশা বিজেপি জমানার সঙ্গে।
প্রতিবাদ করুন কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির।
উপসংহার একটাই।
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা,
তৃণমূল কংগ্রেস ভরসা।
বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ভালবাসেন। বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান করেন।
আমাদের দলের মধ্যে থেকেই কোনও ভুলে ওদের হাত শক্ত হতে দেবেন না। সতর্ক থাকতে হবে সকলে। আরও মনে রাখুন, ফেসবুক, ট্যুইটার একদিন বন্ধ থাকলে বিরোধী দলগুলো উঠে যাবে। ওদের সংগঠন, জনসংযোগ নেই। মিডিয়ার একাংশ আর সোশ্যাল মিডিয়া ভরসা। ওরা গোষ্ঠীবাজিতে দীর্ণ। দেউলিয়া রাজনীতির খাঁচায় আটকে।
আমাদের দল বড় হচ্ছে, হবে। কিন্তু আমাদের পা পড়ুক এমনভাবে, যে বড় হওয়ার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সুফল দল পাবে, কিন্তু মেদজনিত নেতিবাচকতা থেকে সতর্ক থাকতেই হবে।
আরও পড়ুন-রাজ্যের উপর আস্থা রাখল হাইকোর্ট
পুরনোরা মানুন, সময়ের সঙ্গে নতুনের পদধ্বনিকে স্বাগত জানাতেই হবে, আমরা ছিলাম বলে আর কেউ আসবে না, তা হয় নাকি? আবার নতুনরা মানুন পুরনোরা ভিত গড়ে না দিলে আজকের মঞ্চটাই থাকত না। এখন সময়োপযোগী কর্মসূচিতে দলকে আরও এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের। যারা দলবদল এবং রিভার্স স্যুইংয়ের প্লেয়ার, তাঁরাও সবিনয়ে দলত্যাগের দিনটা মনে রেখে আজকের আচরণবিধিতে থাকুন। তৃণমূল দলে এই সমন্বয় আছে এবং থাকবে। মমতাদি অন্তত পাঁচটা প্রজন্ম তৈরি করেছেন, রাজ্য রাজনীতিতে আর কোনও দল বা কোনও নেতা যে কাজটা করেননি। আর এই কারণেই দল থাকবে আরও বহুদিন।
২০২১-এর লড়াই তৃণমূলকে অনেক পরিণত করেছে। উচ্চতা দিয়েছে। মানুষ চিনিয়েছে। বিপদ বুঝিয়েছে। আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এক সৈনিক হিসেবে বলতে পারি, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন মমতাদি। আর সেই ২০৩৬ সালে তিনি অভিভাবকের মতো উপস্থিত থাকবেন এমন অনুষ্ঠানে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন অভিষেক। মুখ্যমন্ত্রিত্বে জ্যোতি বসুর রেকর্ড ভেঙে ভারতে নজির গড়বেন মমতাদি।
আরও পড়ুন-আসানসোলে শত্রুঘ্ন যোগ দিলেন ইফতারে
তবে তার মধ্যে যদি দিল্লির এবং দেশের দায়িত্ব নিতে হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরেকরকম তো হবেই।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের জনমুখী এবং দায়িত্বশীল আচরণ এই হিসেবকে বাস্তবে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে।
মমতাদির লড়াইকে কুর্নিশ।
অভিষেককে অনেক শুভেচ্ছা।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের আসল সম্পদ, বুথের কর্মীরা, মিছিলের কর্মীরা, দেওয়াল লেখার কর্মীরা, যাঁরা কোনও প্রার্থী না হয়েও, পদ না পেয়েও দলের সব কাজ করেন, তাঁদের শতসহস্র প্রণাম ও শুভেচ্ছা।
(ফেসবুক থেকে হুবহু প্রকাশিত)