হাঁপানি কেন হয়?
হাঁপানি বা অ্যাজমা হল মূলত শ্বাসনালির অসুখ। ফুসফুসের শ্বাসনালি দু’দিকে থাকে। বিভিন্ন কারণে শ্বাসনালি সরু হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। হাঁপানি একটি ক্রনিক রোগ। প্রায় ৮০ শতাংশ বংশগত। পাশাপাশি আছে অন্যান্য কারণ। পরিবেশগত কারণেও হাঁপানি হতে পারে। পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে আছে ধুলো, ভাইরাস, বায়ুদূষণ, ফুলের রেণু এবং বাতাসে অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদানের উপস্থিতি।
আরও পড়ুন-পরোয়ানা জারি
কী কী উপসর্গ দেখা যায়?
প্রচণ্ড হাঁচিকাশি, শ্বাসকষ্ট, কফ জমা, বুকের মধ্যে সোঁ-সোঁ আওয়াজ, বুকে চাপ এবং ভারী-ভারী ভাব হল হাঁপানির উপসর্গ। এগুলো হয় মূলত শ্বাসনালির সঙ্কোচনের কারণে।
চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব?
অবশ্যই চিকিৎসায় হাঁপানির নিরাময় সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে তবেই সারতে পারে। চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক বদল ঘটেছে। এখন অনেক উন্নত। আগের মতো নেই। আগে হাঁপানি হলে ওষুধ খাওয়ানো হত। এখন ব্যবহার করা হয় ইনহেলার। ইনহেলারের মধ্যে দিয়ে ওষুধগুলোকে শরীরের ভিতর প্রবেশ করানো হয়। দেওয়া হয় মূলত সফিস্টিকেটেড স্টেরয়েড। এইভাবে চিকিৎসা চলতে থাকলে একটা সময় হাঁপানি সেরে যাওয়া সম্ভব। অন্তত ৮০-৯০ শতাংশ। রোগী ১০০ শতাংশ উপশম পায়, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে হাঁপানি ধরা পড়ে।
সারাজীবন চিকিৎসাধীন থাকতে হয়?
দু’রকম চিকিৎসায় রোগীকে সুস্থ রাখা যায়। একটা হল দ্রুত বা স্বপ্পমেয়াদি চিকিৎসা। অন্যটা আজীবন বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। দ্রুত চিকিৎসায় সাময়িক আরাম দেওয়া বা সুস্থ করে তোলা যায়। কিন্তু এই ধরনের রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার মধ্যে রাখতে পারলে সবথেকে ভাল। তাতে বড় রকমের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
আরও পড়ুন-দুই দলিতকে পিটিয়ে খুন বিজেপির রাজ্যে
কোন বয়স থেকে হাঁপানি হতে পারে?
শিশু বয়স থেকেই হতে পারে। পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকাল এবং আর একটু বেশি বয়সেও হাঁপানি দেখা দিতে পারে।
ঠান্ডা লাগাও কি হাঁপানির একটা কারণ?
ঠান্ডা লাগা অবশ্যই হাঁপানির একটা কারণ। ঠান্ডা লেগে বুকে তাড়াতাড়ি সর্দি বসে গেলে বুঝতে হবে ব্যক্তির হাঁপানির সমস্যা আছে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ঠান্ডা জল, বরফ, আইসক্রিম। বর্ষা, ঠান্ডা আবহাওয়ায় খুব সাবধানে থাকতে হবে। হাঁপানি যেহেতু মূলত জিনগত রোগ, চিকিৎসা বিজ্ঞান ভাবনাচিন্তা করছে যদি জিনটাকে পাল্টে দিয়ে নিরাময় করা যায়।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে হাঁপানি রোগীদের রাখা যায়?
রাখা যায়। যদি তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে, তবেই। তাপমাত্রা এর থেকে কম রাখা হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, গলা বসে যাওয়া ইত্যাদি। বাইরের গরম থেকে ঘুরে এসে আরামের আশায় সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা ঘরে ঢুকে পড়লেও সমস্যা। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে তারপর ঠান্ডা ঘরে পা রাখা যাবে। বছরে অন্তত একবার এসি সার্ভিস করাতে হবে। পরিষ্কার করতে হবে এসির বাইরের কভারে জমা ধুলো। নাহলে সেই ধুলো শ্বাসনালির সমস্যার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন-দুই দলিতকে পিটিয়ে খুন বিজেপির রাজ্যে
আর কীভাবে রোগীকে সুস্থ রাখা যায়?
অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার খাওয়া যাবে না। খারাপ আবহাওয়ায় বাইরে না বেরোনোই ভাল। মোট কথা, কোনভাবেই ঠান্ডা লাগানো চলবে না। এইগুলো মেনটেন করলে রোগী ভাল থাকবে।
গৃহপালিত পশুদের থেকে কোনও সমস্যা হতে পারে?
অবশ্যই হতে পারে। গৃহপালিত কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির থেকে হাঁপানির রোগীদের দূরে রাখা উচিত। পশুদের লোম এইসব রোগের ক্ষেত্রে খুব ক্ষতিকর। আর একটা কথা। অনেক সময় এইধরনের রোগীর মনে হতাশা দেখা দেয়। হতাশা দূর করতে রোগীর মনে আনন্দের সঞ্চার করতে হবে।
হাঁপানির কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা কতটা?
আগে মৃত্যুর সম্ভাবনা যথেষ্টই ছিল। এর ফলে অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত। তবে এখন চিকিৎসার উন্নতির ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকটাই কমেছে। সঠিক সময় ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা করলে অতটা ভয়ের কিছু নেই।
ইনহেলার ছাড়া ছোটদের সুস্থ করা যায়?
ছোটদের ইনহেলার দেওয়া নিয়ে অনেকেই নানারকম প্রশ্ন তোলেন, এই বয়স থেকে ইনহেলার! অন্য কোনও উপায়ে সুস্থ করে তোলা যায় না! এই প্রসঙ্গে বলি, ইনহেলার ব্যবহার ছাড়া ছোটদের অন্যভাবে সারিয়ে তোলা প্রায় অসম্ভব। একমাত্র ইনহেলার ব্যবহার করলেই ছোটরা একটা সময়ের পর সুস্থ হতে পারে, পৌঁছে যেতে পারে স্বাভাবিক জীবনে।
গর্ভবতী মা ইনহেলার ব্যবহার করতে পারে?
আরও পড়ুন-করোনা থাকবে, এখনই সতর্ক হন: রাষ্ট্রপতি
অবশ্যই পারে। এতে বেবির কোনও ক্ষতি হয় না। বরং হাঁপানি-আক্রান্ত মা ইনহেলার ব্যবহার না করলেই বেবির ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেবি প্রিম্যাচিওর হতে পারে। ডেভলপমেন্টেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতি বছর সারা বিশ্বে কত মানুষ আক্রান্ত হন?
সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ প্রতি বছর হাঁপানিতে আক্রান্ত হন। প্রতি দশ বছর অন্তর ভারতবর্ষে প্রায় ১২-১৫ শতাংশ হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৫-৭ শতাংশ। দূষণ এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি দায়ী হাঁপানি নিয়ে সচেতনতার অভাব।
জনসাধারণকে সচেতন করতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার বিশ্ব হাঁপানি দিবস পালন করা হচ্ছে। সূচনা হয়েছে ১৯৯৮ সালে। এইবছর পালিত হয়েছে ৩ মে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম আমরাও। চেক-আপ, মেডিক্যাল ক্যাম্প, আলোচনাসভার মধ্যে দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। সবাইকে একটা কথা বলছি, ফুসফুসটা ভাল রাখতে হবে। ৬০ বছরের কোনও মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত হলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হয়ে যাচ্ছে ৯০ বছর বয়সির মতো। তাই হাঁপানির হাত থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পরীক্ষার মাধ্যমে এখন হাঁপানি নির্ধারণ করা যায়। বহু ডায়াগনোস্টিক সেন্টারেই হচ্ছে এই পরীক্ষা। প্রচণ্ড হাঁচিকাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, বুকে কফ, সোঁ-সোঁ আওয়াজ, বুকে চাপ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলেই সতর্ক হন। আবার বলছি, চিকিৎসায় হাঁপানি সম্পূর্ণ নিরাময় অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।