বন্দিজীবনে ইদ আনল একতার আনন্দ

উঁচু পাঁচিল ঘেরা নিরাপত্তায় মোড়া নির্জন জায়গাটা পরিণত হয়েছিল আনন্দের আঙিনায়। খুশির ইদে ওঁরা ভুলে গিয়েছিলেন অতীতের কথা। ভুলেছিলেন বর্তমানের ঠিকানা।

Must read

অনুরাধা রায়: সব ধর্ম মিলে গেল মিলনের উৎসবে। পবিত্র ইদের সকালে এ যেন নতুন সূর্যোদয়। রাম, রহিম, দীনেশ, অখিলদের(পরিবর্তিত নাম) উৎসবের তৎপরতা। সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা, মাথায় টুপি পরে ইদের নামাজ। এরপর একে একে শুভেচ্ছা বিনিময়। উঁচু পাঁচিল ঘেরা নিরাপত্তায় মোড়া নির্জন জায়গাটা পরিণত হয়েছিল আনন্দের আঙিনায়। খুশির ইদে ওঁরা ভুলে গিয়েছিলেন অতীতের কথা। ভুলেছিলেন বর্তমানের ঠিকানা।

আরও পড়ুন-চিকিৎসায় হাঁপানির নিরাময় সম্ভব

এঁরা হলেন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের আবাসিক। ইদে নিজেদের মতো করে আনন্দে কাটালেন তাঁরা। ২২০৭ জন আবাসিক একসঙ্গে পালন করলেন ইদ। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯১৮ জন মুসলিম। ৮০০ জন পড়লেন নমাজ। সংশোধনাগারের তরফে জেল চত্বরেই নমাজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একদিকে ইদের নমাজ অন্যদিকে সংশোধনাগারের রান্নাঘরে বিরাট দাওয়াতের আয়োজন। সংশোধনাগার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ইদের সকাল থেকেই ছিল খাওয়া-দাওয়ার অন্যরকম আয়োজন। সকালের জলখাবারে ছিল পাউরুটি, ঘুগনি, ডিমসিদ্ধ এবং অবশ্যই লাচ্চা। দুপুরে ভাত, আলু-পটল কষা, কাতলা মাছের কালিয়া, চাটনি।

আরও পড়ুন-পরোয়ানা জারি

ইদের দিন বিরিয়ানি হবে না তা তো হয় না, তাই রাতে মটন বিরিয়ানি, মটন কিমা কারি এবং রাজভোগ। সংশোধনাগারের আবাসিকরাই সমস্ত রান্নাবান্না করেন। ইদের আগের দিন রাত থেকেই আবাসিকরা একসঙ্গে রঙিন কাগজ, রাংতা দিয়ে সাজিয়েছিলেন গোটা জেল চত্বর। রমজান মাসে তাঁরা ২৩০০ জন একসঙ্গে ইফতারও করেন। দুর্গাপুজোয় রহিম দেন আলপনা, রামের তুলির ছোঁয়ায় আঁকা হয় প্রতিমার চোখ। জীবনের ঘূর্ণিপাকে তাঁরা কেউ সাজাপ্রাপ্ত, কেউ বিচারাধীন বন্দি। ঠিকানা তাই সংশোধনাগার। কিন্তু উৎসবে তাঁরা ভুলে যেতে চান সমস্ত অন্ধকার। বারবার ফিরতে চান স্বাভাবিক ছন্দে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁরা এত সুষ্ঠুভাবে একসঙ্গে ইদ উদযাপন করেছেন যা সত্যিই সম্প্রীতির নজির।’’

Latest article