নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে ভারতের স্থান যে ক্রমশই নিম্নগামী সে তথ্য আগেই সামনে এসেছে। এবার কোপ পড়তে চলছে ইন্টারনেট ব্যবহারের (Internet User) স্বাধীনতাতেও। কারণ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবার ইন্টারনেটের উপরেও নজরদারি শুরু করতে চলছে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন সার্ভিস সংস্থাকে মোদি সরকার (Modi Government) এক নির্দেশে জানিয়েছে, ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। উল্লেখ্য, ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার (Internet User) করে কোনও ব্যবহারকারী তাঁর অবস্থান, ইন্টারনেটের ব্রাউজিং সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য লুকিয়ে রাখতে পারেন। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তদন্তমূলক সাংবাদিকতা বা হ্যাকিংয়ের কাজেও এই ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেখানেও নজরদারি চালাতে ভিপিএন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে ২৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা সিইআরটি এই নির্দেশ দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, এবার থেকে ভারতে ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার করতে হলে গ্রাহককে তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, সাবস্ক্রিপশনের সময়সীমা, ইমেল আইডি, আইপি অ্যাড্রেস এবং কেন তিনি এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন তা জানাতে হবে। মোদি সরকারের এই নির্দেশ সামনে আসতেই কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, এই নির্দেশের মাধ্যমে দেশবাসীর উপর মোদি সরকার নজরদারি চালাতে চাইছে। ঠিক যে কায়দায় পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বেআইনি নজরদারি চালিয়েছিল প্রতিবাদী স্বর দমন করতে। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ এবং রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন ট্যুইট করেছেন, মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় ভিপিএন-এর অর্থ ভার্চুয়াল পুলিশিং নেটওয়ার্ক। মোদি সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছে।
আরও পড়ুন: ভারতে ভোজ্যতেলের সঙ্কট বাড়ছে, দর্শক মোদি সরকার
কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীন সিইআরটি তার নির্দেশিকায় আরও জানিয়েছে, জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে। ক্লাউড সার্ভিস ও ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার উভয় প্রোভাইডারদের ক্ষেত্রেই এই নীতি কার্যকর হবে। ওই নির্দেশিকায় সিইআরটি বলেছে, ভার্চুয়াল অ্যাসেট সার্ভিস প্রোভাইডার, ভার্চুয়াল অ্যাসেট এক্সচেঞ্জ প্রোভাইডার এবং কাস্টোডিয়ান ওয়ালেট প্রোভাইডারদের বাধ্যতামূলকভাবে কেওয়াইসির অংশ হিসেবে গ্রাহকদের অন্তত ৫ বছরের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও সংগ্রহ করতে হবে। কেন্দ্রের ব্যাখ্যা, নাগরিকদের আর্থিক লেনদেন আরও সুরক্ষিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত নির্দেশিকা মানা না হলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭০বি ধারার ৭ উপধারা অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ করা হবে। শর্ত লঙ্ঘন করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা অথবা দুই শাস্তিই দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।