কণাদ দাশগুপ্ত : পর পর বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারনে একুশের বঙ্গ-ভোটে সর্বাঙ্গে যথেষ্টই কালি মেখেছে নির্বাচন কমিশন৷ বিধানসভা নির্বাচনে কমিশন এমন অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ধ্বংস করার পক্ষে যথেষ্ট৷
তবুও হয়তো মুখে কিছুটা অংশ ফাঁকা ছিলো৷ কিন্তু যেদিন ভোটপ্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেদিন নিজের মুখটা আরও কালিমালিপ্ত করেছে দেশের নির্বাচন কমিশন৷ এ কথা বলা অন্যায় হবে না যে, কমিশন ওই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের পবিত্র কাঠামোর উপরই কার্যত আঘাত হেনেছে৷
আরও পড়ুন-“দিদি ও দিদি”-র জবাবে এবার সংসদে “মোদি ও মোদি”, প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল
আসলে আম্পায়ারকে শুধু পক্ষপাতহীন থাকলেই হয়না, নিজের দায়িত্ব পালনের পদ্ধতির মাধ্যমে স্পষ্ট করতে হয়, বোঝাতে হয় যে তিনি প্রকৃতপক্ষেই নিরপেক্ষ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষায় ডাহা ফেল করেছে কমিশন, লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশনের এমন পথ বেছে নেওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত হয়েছে, তা নিয়ে দেশজুড়েই প্রশ্ন উঠেছে৷
আরও প্রশ্ন উঠেছে৷ এই ধরনের কাজ করার অধিকার ঠিক কোথা থেকে অর্জন করলো কমিশন ? সংবিধান থেকে তো নয়, সংবিধান কমিশনকে গনতন্ত্র হত্যা করার অধিকার দেয়নি৷ আসলে এই ক্ষমতা কমিশনের স্বোপার্জিত৷ নিজের সাংবিধানিক অধিকার বা এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এবং ধারাবাহিকভাবে অতি-সক্রিয়তা প্রদর্শন করেই কমিশন তথাকথিত ‘ক্ষমতাধর’ হয়েছে৷
দেশের সংবিধানকে শাসন করার এক্তিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই৷
ভারতবর্ষের সংবিধানের কোথাও এ কথা বলা হয়নি যে কোনও রাজ্যের নির্বাচিত সরকার অথবা রাষ্ট্রপতিশাসিত রাজ্যের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করায়ত্ত করতে পারে নির্বাচন কমিশন৷ আদর্শ আচরণবিধি বা ‘মডেল কোড অফ কণ্ডাক্ট’ চালু হওয়ার পরেও নির্দিষ্টভাবে সেখানে উল্লেখ রয়েছে, কমিশনের এক্তিয়ার শুধুমাত্র জেলার নির্বাচন আধিকারিক, যিনি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ৷ অথচ, কমিশন বারংবার প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজ্যের সম্পূর্ণ প্রশাসন কার্যত দখল করছে সংবিধান-প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করেই৷
আরও পড়ুন-অভিষেকের নেতৃত্বেই জাতীয়স্তরে বৃদ্ধি পাবে তৃণমূলের প্রাসঙ্গিকতা
এই অপব্যবহার রুখতে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে৷ নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে এবং সংসদকে নতুন করে ভাবতে হবে, আলোচনা করতে হবে এবং মতপ্রকাশও করতে হবে৷ এখনই এই ভাবনা শুরু করা না গেলে সংবিধান এবং সংসদীয় কাঠামোর পবিত্রতা বজায় রাখা আর সম্ভব নাও হতে পারে ৷