কীর্তন থেকে সিনেমার গান কেমন ছিল পঙ্কজ নট্টের জার্নি?

ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে কীর্তনের আসরে, সেখানেই কীর্তনে হাতে খড়ি। একসময় সংসার চালানোর জন্য গানের পাশাপাশি অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর সুযোগ এল সারেগামাপার মঞ্চে নিজের প্রতিভা তুলে ধরার। সেখান থেকে বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাকের সুযোগ মিলল। স্বপ্ন দেখেন গানের অ্যাকাডেমির মাধ্যমে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিল্পীদের সঠিক পথ দেখাতে। জীবনের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের সবার প্রিয় শিল্পী পঙ্কজ নট্ট? তাঁর সঙ্গে কথা বললেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

Must read

ও তোর দিন ফুরাবে, সন্ধ্যা হবে/ দেখবি চোখে অন্ধকার এই হরিনাম বলবি কবে আর/ ঝাপসা হবে চোখের পাতা পড়বে চোখের জল/ ও তোর থাকতে সময় এই অসময়/ কৃষ্ণ কথা বল ও তুই হরি কথা বল… পঙ্কজ নট্টের কণ্ঠে এই সুরের জাদুতে মেতে আছেন সংগীতপ্রেমীরা।
কীর্তন তাঁর রক্তে, তিনি কীর্তন শিল্পী পঙ্কজ নট্ট। পুরো পরিবার যেখানে কীর্তন চর্চা করেন সেখানে জন্মের পর জ্ঞান হওয়া থেকে কীর্তনকে নিয়েই বড় হয়েছেন পঙ্কজ। তাই তাঁর প্রথম গুরু তাঁর মা।

আরও পড়ুন-রূপকথার ভুবনজয়ী লক্ষ্যভেদী নারীরা

বলতে পারেন ২০১৭ সালে সারেগামাপার কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যেও শেষ দশে ছিলেন পঙ্কজ। কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন যে একজন কীর্তন শিল্প একটি নামজাদা রিয়েলিটি শো-এর শেষ দশে পৌঁছবেন? না, ভাবেননি। কিন্তু সেটাই ছিল বাস্তব। আসলে প্রতিভা-চর্চা-লক্ষ্য ঠিক থাকলে যে সাফল্যের মুখ দেখা যায় তা করে দেখাতে পেরেছেন এই শিল্পী। সারেগামাপা এই তরুণ শিল্পীকে দিয়েছে পরিচিতি, নিয়ে এসেছে পাদপ্রদীপের আলোয়। এই সাফল্যের পর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কীর্তন থেকে সিনেমার গান, সবেতেই সাবলীল পঙ্কজ এখন অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি মুখ।

আরও পড়ুন-‍‘শহিদ মিনারের মাথা লাল রং করা ঠিক হয়নি’

উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর নাটাগড়ের বাসিন্দা পঙ্কজের এই সাফল্য কিন্তু সহজে আসেনি। এর নেপথ্যে আছে অনেক লড়াই, অনেক চর্চা, সংগীতের প্রতি ভালবাসা এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সদিচ্ছা। শিল্পী নিজেই জানালেন, তাঁর বাড়ির পুরো পরিবেশ সংগীতময়। কারণ হিসেবে তিনি একটি ছোট্ট উদাহরণ দেন। যেহেতু তাঁদের পদবি নট্ট তাই তাঁদের রক্তে সংগীত। এমনকী ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখছেন যে তাঁর মা কীর্তন গান। তাই সহজেই তিনি বড় হয়েছেন কীর্তন শিল্পের পরিবেশের মধ্যে। আর এখন তো বিভিন্ন চ্যানেলে তিনি নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করেন।
শিল্পী কিন্তু অকপটে স্বীকার করেন, সারেগামাপা-য় তাঁর অভিজ্ঞতা অসাধারণ । কী বলছেন তিনি, আসুন জেনে নিই তাঁর নিজের মুখ থেকে। বলেন, ‘‘এই রিয়েলিটি শোতে সুযোগ পাওয়ার পর আমি এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

আরও পড়ুন-লালুকে হেনস্তা

এই শোতে অংশ নেওয়ার আগে প্রায় মাস ছয়েক আমাকে থাকতে হয়েছিল চ্যানেলের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের গান শিখেছি, তার গায়কী কীভাবে সুন্দর করা যায়, কীভাবে সেগুলো আরও ভাল করে উপস্থাপন করা যায়, কীভাবে মাইক্রোফোন ধরতে হয়, বলতে পারেন সমস্ত কিছু খুঁটিনাটি একজন শিল্পীকে গ্রুমিং করা হয় এই মাস ছয়েক ধরে। যা একজন শিল্পীকে পেশাদার হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এরই পাশাপাশি একই সঙ্গে থাকার ফলে যেমন অনেক শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়, তেমনই প্রচুর গুণী মানুষ আমাদের শেখানোর জন্য আসেন। তাঁদের সান্নিধ্য পাওয়াটাও বড় ব্যাপার। তাঁদের মূল্যবান টিপস আমাদের ভবিষ্যতে নিজেকে তৈরি করতে সাহায্য করেছে।”
বেশ কয়েকটি সিনেমাতেও কিন্তু প্লেব্যাক করে ফেলেছেন পঙ্কজ নট্ট। সেখানেও তাঁর গান সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, শুধুমাত্র সিনেমায় প্লেব্যাক নয়, বিভিন্ন সিরিয়ালে পঙ্কজ কিন্তু নিয়মিত গান করেন। যেমন রীতিমতো জনপ্রিয় সিরিয়াল দেবী চৌধুরানী, রানি রাসমণি সিরিয়ালে তাঁর গান শুনেছেন দর্শক শ্রোতারা। তাই গানই তাঁর পেশা, গান নিয়েই তিনি থাকতে চান ভবিষ্যতেও এবং এটা তাঁর অত্যন্ত পছন্দের একটি মাধ্যম বলে তিনি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন-সেনার সাফল্য, এই প্রথম দেশে তৈরি জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র

জিতের ‘বাচ্চা শ্বশুর’ সিনেমায় গান করেছেন। সিরিয়ালে গান গাওয়া শুরু উপালি চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। বর্তমানে লীলা কীর্তনের পাশাপাশি লোকসংগীত গাওয়াতে জোর দিয়েছেন। এমনকী, রামায়ণ গান গাইতে সিদ্ধহস্ত পঙ্কজ নির্দ্বিধায় যে কোনও মঞ্চে এই ধরনের গান পরিবেশন করেন।
কলকাতার পাশাপাশি দিল্লি, হায়দরাবাদ, অসম, ঝাড়খণ্ড থেকেও গানের জন্য তিনি ডাক পান। শিল্পী স্পষ্ট জানিয়েছেন, সারেগামাপার এই প্ল্যাটফর্ম না পেলে তিনি এত জনপ্রিয়তা পেতেন না আর এত সহজে এত মানুষের কাছে পৌঁছতে পারতেন না। এই যে দূর-দূরান্তে তিনি গান করতে যাচ্ছেন এটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে এই রিয়েলিটি শো-এর জন্যই। তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন এই রিয়েলিটি শোগুলো উঠতি গায়ক-গায়িকাদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ সারেগামাপার রথীদা, সৌমেনদা, কল্যাণদা, মিউজিশিয়ান বাবুয়া কাকু, গৌতমদা সর্বোপরি ডিরেক্টর অভিজিৎ সেনের কাছে।

আরও পড়ুন-কোনও অন্যায় কাজে থাকবেন না: অনুব্রত

ভবিষ্যতে গানের অ্যাকাডেমি করার স্বপ্ন দেখেন পঙ্কজ। তাঁর লক্ষ্য, যারা টাকাপয়সার অভাবে সঠিক জায়গায় গান শিখতে পারে না তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। যারা অর্থের জন্য পিছিয়ে পড়ে তারা কম পয়সা দিয়ে যেন গানটা শিখতে পারে। শিল্পীর কীর্তন জগতের গুরুদেব ছায়া দাস এবং লোকসংগীত জগতের গুরুদেব অমল বাওয়ালির প্রতি তিনি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানান । কারণ, তাঁর জীবনে এঁদের কৃতিত্ব তিনি কোনওদিন ভুলতে পারবেন না। এমনকী পঙ্কজ তবলার তালিম নিয়েছেন কাজল গুহর কাছে। এহেন পঙ্কজ নট্ট কীর্তন এবং লোকসংগীতের মাধ্যমে বাংলার সংগীতজগৎকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।

Latest article