দীর্ঘ ৩৪ বছরে বাম শাসনের অবসানের অন্যতম কারণ ছিল “জমি নীতি”। কৃষকদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবও যদিও কারণ ছিল। ২০০৬ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর জমানায় সিপিএম তথা বামেদের স্লোগান ছিল “কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ”। কিন্তু ১৫ বছর পরে ২০২১ নির্বাচনেও বামেদের জন্য এই স্লোগান বুমেরাং হয়ে গিয়েছে। এই স্লোগান তাদের ভরাডুবির মূল কারণ হয়ে উঠেছে , এবার সেটা বুঝতে পেরেছেন অবশেষে আলিমুদ্দিনের কমরেডরা। বিলম্বিত বোধোদয় তকমা দেওয়াই যায়।
আরও পড়ুন- বুধবার নবান্নে ইস্টবেঙ্গল-শ্রী সিমেন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী
জমি ও শিল্প নিয়ে বামেদের নীতি বা স্লোগান বাংলার মানুষ যে খুব ভাল মনে গ্রহণ করেনি, নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়েই সেটা প্রমাণিত। এবার সেই কথা স্বীকার করলো সিপিআইএম। নির্বাচনী ভরাডুবি এবং রাজনীতিক ভাবে এবং নির্বাচনী ফলাফলে “শূন্য” পেয়ে ইতিহাস গড়েছে তারা। তাই নির্বাচনী বিশ্লেষণ নিয়ে পার্টির চিঠিতে বলা হয়েছে, জমি ও শিল্প নিয়ে স্লোগান প্রয়োগ সেই সময়ের নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলন মানুষকে স্মরণ করে দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যে দল মনে করেছিল বামফ্রন্ট সরকারের ভূমি সংস্কার নীতি ও জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের কারণে আমরা আদিবাসী, তপশিলি জাতি, উপজাতি-সহ সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগণের সমর্থন পাব। কিন্তু বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ সেই স্লোগানকে এবারও মান্যতা দেননি। তাই তারা সিপিআইএম-সহ বামফ্রন্টের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কেন ভুল বুঝেছেন বাংলার মানুষ তার পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে পার্টি বিশ্লেষণ করেছে যে একদিকে রাজ্য শিল্পের কথা বলা অন্যদিকে দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনের বিষয়টা মানুষ ঠিকভাবে গ্রহণ করেনি। শেষমেশ পার্টি চিঠি তে বলা হয়েছে যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর কৃষি সংকট এবং কৃষি আইন বাতিল, কৃষকদের চাহিদা মত সহায়ক মূল্য, অধিকার, জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভাবে লড়াই করা।
আরও পড়ুন- করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে মেডিকেল কলেজগুলিতে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ
অন্যদিকে, ভোটের আগে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার নামে তথাকথিত “মহাজোট”-করে সংযুক্ত মোর্চার গঠন আরেকটি মোক্ষম ভুল ছিল বলেই সিপিএম অবশেষে মেনে নিয়েছে। পর্যালোচনায় স্পষ্ট করেই লেখা হয়েছে, কংগ্রেস এবং আইএসএফ-র সঙ্গে জোট করা উচিত হয়নি। আইএসএফ নিজের ধর্মীয় পরিচয় ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েই যে এই জোট করা হয়েছিল, সেটাও মেনে নিয়েছে সিপিএম। শুধু তাই নয়, মোর্চায় কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট হলেও, কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফ-র যে আদৌ জোট হয়নি, সেটাও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ফলে এ রাজ্যে সংযুক্ত মোর্চার ভবিষ্যৎ যে ঘোর অন্ধকারে সেটা সিপিএমের স্বীকারোক্তির মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে গেল।