চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: নীরবতা ঝড়ের পূর্বাভাস। শনিবার বিকেলে এএফসি কাপে মোহনবাগান (Mohun Bagan) ও বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচের আগে যুবভারতীর পরিবেশ এমনই শান্ত ছিল। গোকুলামের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের মতো এদিন দর্শক উপস্থিতিও বেশ কম ছিল। কেই বা জানত, মিনি আমফান গোছের কালবৈশাখী ধেয়ে আসছে। সঙ্গে প্রবল বর্ষণ আর বজ্রপাত। কিছুক্ষণের জন্য লন্ডভন্ড যুবভারতী। স্টেডিয়ামের একটা অংশের চাল উড়ে পড়ল বসুন্ধরার ডাগ আউটের পিছনে। মাঠের ধারের স্পনসরদের বিলবোর্ড ঝড়ে উড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে মাঠের মধ্যেই। ১১ মিনিট খেলা হওয়ার পর বন্ধ করে দিলেন চিনা তাইপের রেফারি। ফুটবলাররা ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। ফ্লাড লাইটের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। ঝড়-বৃষ্টির দাপটে প্রেস বক্সের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়তে থাকে। প্রেস বক্সের একটা অংশের চাঙড় ভেঙে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাংবাদিকরা। অতীতে ঝড়-বৃষ্টির দাপটে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ৫১ মিনিট পর যখন খেলা শুরু হল, তখন ঝড়-বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। কিন্তু শান্ত যুবভারতীর গ্যালারি উদ্বেলিত। তখন মাঠে ঝড় তুলেছেন লিস্টন কোলাসো।
আরও পড়ুন: গাভাসকর বললেন, ধোনির সিদ্ধান্ত দারুণ
গোকুলাম ম্যাচে চার গোল হজম যেন আত্মমর্যাদায় আঘাত দিয়েছিল সবুজ-মেরুন শিবিরকে। শুরুর চাপ সামলে বাংলাদেশের দলটিকে দুমড়ে মুচড়ে দিলেন জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। এদিন অধিনায়ক বদলেছিলেন জুয়ান। প্রীতম কোটালের পরিবর্তে রয় কৃষ্ণের হাতে ছিল নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড। কৃষ্ণের নেতৃত্বে ভাল ফুটবল উপহার দিল মোহনবাগান। তবে দিনটা ছিল লিস্টনের। হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতালেন। ৫৩ মিনিটের মধ্যে তিন গোল করলেন। ২১ মিনিটে প্রথম গোলটি কার্ল ম্যাকহিউয়ের পাস থেকে। ২৫ মিনিটে জনি কাউকোর থ্রু ধরে। ৫৩ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মানবীরের পাস থেকে। অপর গোলটি পরিবর্ত হিসেবে নেমে করলেন ডেভিড উইলিয়ামস। বসুন্ধরার বিরুদ্ধে ঝাড়া ৪-০ গোলে জয়। চার গোল খাওয়ার বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা চার গোলে জিতে মূল্যবান তিন পয়েন্ট অর্জন করে এএফসি কাপের গ্রুপ ‘ডি’ থেকে আন্তঃ আঞ্চলিক সেমিফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখল মোহনবাগান। ম্যাচের পর গ্যালারির সামনে গিয়ে সমর্থকদের পাশে থাকার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ভাইকিং ক্ল্যাপ দিলেন কৃষ্ণ, প্রীতম, উইলিয়ামসরা। তিরিহীন সবুজ-মেরুন রক্ষণ এদিন ফুল মার্কস পেল। অনেকদিন পর মাঠে নেমে সন্দেশ ঝিঙ্গান ভাল খেললেন। ম্যাকহিউ, প্রীতম, শুভাশিসরা রক্ষণে ভরসা দিলেন। ম্যাচের পর মাঠে ঢুকে পড়া এক সমর্থককে নিজের জার্সি উপহার দিয়ে মন কাড়লেন।
বড় ব্যবধানে জিতে মোহনবাগান (Mohun Bagan) কোচ জুয়ান ফেরান্দো বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচ হারের পর তাচ্ছিল্য, সমালোচনার জবাব দিয়েছে ছেলেরা। আমরা যে খারাপ দল নই, সেটা প্রমাণ করে দিলাম।” জয়ের নায়ক লিস্টন জীবনের প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন। ম্যাচ শেষে গোয়ানিজ ফুটবলারের গলায় তৃপ্তির হাসি। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন, ‘‘আমার প্রথম হ্যাটট্রিক সতীর্থ ও পরিবারকে উৎসর্গ করছি। তবে এক গোল বা তিন গোল হোক, আমার কাছে দলের জয়টাই আসল।”